সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমান সময়ে মহামারি আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে ৫০ জনেরও অধিক মানুষ মারা গেছেন।
চট্টগ্রামে সপ্তাহ ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় চকরিয়ায় একসাথে ৫ ভাই, রাউজান নোয়াপাড়ায় একজন প্রকৌশলী স্পষ্টেই মারা গেলেন, আর নগরীতে একজন নারী ডাক্তার আইসিউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে একদিন পর মারা গেলেন।
আর এভাবেই প্রতিনিয়ত অকালে প্রাণ ঝরছে সড়কে।
সড়ক দুর্ঘটনার ফলে নিহতদের পরিবারে নেমে আসে কালো ছায়া। ধূলিসাৎ হয়ে যায় হাজারো স্বপ্ন। পরিবারগুলো হয়ে পড়ে অসহায়।
সন্তান হয় মা-বাবাহারা, মা-বাবা হয় সন্তানহারা। স্ত্রী হন স্বামীহারা।
সড়ক দুর্ঘটনার অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান। তন্মধ্যে ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণ, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং, গাড়ি ওভারলোডিং, অপ্রশস্ত রাস্তা, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা এবং আইন অমান্য করা ইত্যাদি প্রণিধানযোগ্য।
দেশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুটপাত দখল। ফুটপাতে দোকান নির্মাণ, মালামাল রাখবার ফলে পথচারীগণ বাধ্য হয়ে রাস্তায় হাঁটার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
একটি দুর্ঘটনা ঘটলে দুয়েকদিন হাঁকডাক করবার পর আবারো 'যেই লাউ সেই কদু'ই থেকে যায় ফুটপাতের অবস্থা।
ফুটপাত দখলমুক্ত যারা রাখবার কথা, তাদের বিরুদ্ধেই বেশিরভাগ অভিযোগ ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণের। তাই দিন শেষে ফুটপাত আর দখলমুক্ত হয়না,পথচারীরাও হাঁটার জন্য নিরাপদ ফুটপাত পায় না।
গাড়ির অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে রাস্তার প্রশস্থতার নিয়মানুযায়ী গাড়ির গতি থাকবার কথা ঘন্টায় ৩০-৪০ কিমি, সেখানে গাড়ির গতি থাকে ৭০-৯০ কিমি। যার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। তাছাড়া দ্রুত গতিতে ওভারটেকিং করতে গিয়েও সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন।
এসব বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ কঠোর না হলে দুর্ঘটনা রোধ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
ওভারলোডিং বা অতিরিক্ত মালামাল বহন করার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। ব্যবসায়ীরা দুয়েক ট্রিপ কমানোর জন্য অতিরিক্ত মালামাল দিয়ে গাড়ি ওভারলোডিং করার ফলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে অন্য গাড়ির উপর কিংবা পথচারীর উপর ছিটকে পড়ে। যার ফলে স্পটেই মানুষ মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের জরুরি নজর দেওয়া উচিত।
অপ্রশস্ত রাস্তাও সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। রাস্তায় ভাসমান দোকান, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এর ফলে রাস্তা অপ্রশস্ত হয়ে হওয়ায় বড় গাড়ি চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় তা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণগুলোর একটি। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে অনেক বছর ধরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলে আসছে, সেখানে দেশে এখনো হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করা হচ্ছে। যা এই ডিজিটাল বাংলাদেশে হাস্যকরও বটে। তাই সড়ক নিরাপদ করবার তাগিদে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অচিরেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা উচিত। নচেৎ মান্ধাতা আমলের ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় উপরের বিভিন্ন কারণগুলো যেমন বিদ্যমান, তেমনি ট্রাফিক আইন অমান্য করাও বিদ্যমান। ট্রাফিক আইন অমান্য করবার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বহুগুণ।
চালক যাত্রী পথচারী সকলকে ট্রাফিক আইন মানাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাথে চালকদের প্রশিক্ষণ, সড়ক আইন সম্পর্কে বেশি করে প্রচার, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা,ট্রাফিক ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন করা, ট্রাফিকদের ডিউটির ঘন্টা কমিয়ে ট্রাফিকদের সংখ্যা বাড়ানো,রাস্তায় ভাসমান দোকান বন্ধ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংমুক্ত করা,গাড়ির গতিরোধ এবং গাড়ির ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণ করা সর্বোপরি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
নিউজ ডেস্ক