ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

আরেকটি X ফাইল?

মাহবুব মিঠু, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১২
আরেকটি X ফাইল?

সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে ছবিটা দেখেননি এমন লোক কমই আছে। দেশের বর্তমান হালচাল দেখে মনে হচ্ছে, সিনেমাটা বুঝি সত্যজিৎ রায় আজকের বাংলাদেশকে কেন্দ্র করেই বানিয়েছিলেন।

 থিমের দিক থেকে সত্যিই কি অদ্ভুত মিল! এর চেয়ে বেশি কিছু বলব না। কারণ কোন ফাঁকে সেটা আদালত অবমাননা হয়ে গেলে আবার একটা বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হবে। তাই আমার অনিচ্ছাকৃত না বলা কথা বুঝতে হলে পাঠককে হীরক রাজার দেশে সিনেমাটা একটু কষ্ট করে হলেও দেখতে হবে। যারা ইতিমধ্যে দেখে ফেলেছেন, তারা তো ইশারায় কাফি।  

রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক ন্যায় এবং সমতাভিত্তিক আচরণ নিশ্চিত না করে আদালত যেভাবে একের পর এক আইন করে সমালোচনার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও এমন কিছু লেখা সমীচীন হবে না যে, সেটা আদালত অবমাননার শামিল হয়। কিন্তু নাগরিক হিসেবে একটা প্রশ্ন করার অধিকার তো সবার আছে। আদালত হচ্ছে মানবতাকে সুরক্ষা দেবার একটা প্রধান আশ্রয়স্থল। সেই মানবতা যখন ভুলুণ্ঠিত, একের পর এক মানুষ খুন হতে থাকে। কিন্তু খুনীর থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যাদের দায়িত্ব খুনের রহস্য ভেদ করে আনা, তাদের ব্যর্থতার সুযোগে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপরে যদি নাগরিকের অনাস্থা তৈরি হয় এবং সেই অনাস্থার ফলে সৃষ্ট কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুজব তার ডালপালা মেলতে থাকে, তবে তার দায় দায়িত্ব কার? বছরের পর বছর মানুষ অপহরণ হয়ে গুম হচ্ছে, তার কয়টার হদিস আমরা জানতে পেরেছি? ধনবান, বলবান, ক্ষমতাবান কোন অপরাধ করলে তার কয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে? আজকের যে পরিস্থিতি, তার সৃষ্টিতো এখানেই। সাগর রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে শুরু থেকেই যে যে কাণ্ডগুলো ঘটে চলেছে, পুলিশের একেক সময়ের একের ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়াটা কি অমূলক?

সেই সন্দেহের ফাঁক গলে ফেইসবুকে সাগর-রুনীর হত্যাকারীর নাম এবং সহযোগীদের নাম উল্লেখ করে একটা শেয়ার দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্নজনের মন্তব্য পড়ে মনে হোল, অনেকেই বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচালে দুলে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসের পালেই হাওয়া দিয়েছে। এ ধরনের তৎপরতাকে অনেকেই সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু অজস্র মানুষের ফেইসবুকে শেয়ার করাকে কেউ উড়িয়ে দিতেও পারবেন না। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রতি মানুষের অনাস্থা যেটা তিলে তিলে মানুষ তার ভোগান্তির মাধ্যমে শিখেছে। পোস্টটা দেখে ফেইসবুকের স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম, “রাষ্ট্র যখন কোন অপরাধের সত্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় এবং যখন সবাই বুঝে যায় সত্যটা জেনেও কোন স্বার্থের কারণে রাষ্ট্রের প্রভাবশালী কোন গোষ্ঠী সেটাকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টায় আছে; তখন অনেক সত্য মিথ্যা কিংবা গুজব ডালপালা ছড়ায়। নিচের পোস্টটার সত্যতা সম্পর্কে আমার জানা নেই। কিন্তু প্রথম দিকে গোয়োন্দাদের ভাষ্যমতে হত্যাকারী হাতের মুঠোয় এবং শেষমেষ প্রধানমন্ত্রীর বেডরুম পাহারা দেবার অপরাগতা বলেই দিচ্ছে হত্যাকারী অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং এমনকি আরো হয়তো বড় কিছু। নিচের ঘটনা হয়তো সত্য কিংবা মিথ্যা। কিন্তু ওখানে যেটা উল্লেখ করা হয়েছে, অনেকটা সে রকম ভাবাতেও মন বাধ সাধছে না। হতেও পারে সত্য। সরকার না হয় চেপে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা কেন তাদের নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করে সত্যটাকে টেনে জনসম্মুখে আনছে না কেন?”

সাগর রুনির হত্যাকান্ডের মোটিভ সম্পর্কে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ ডজন তথ্য দেশবাসী জানতে পেরেছে। প্রথমেই পুলিশ জোর দিয়ে বলা শুরু করলো, হত্যাকারী হাতের মুঠোয়। যে কোন সময় ধরা হবে। রান্নাঘরে পড়ে থাকা ডিমের খোসা এবং নুডুলস দেখে ইঙ্গিত দেয়া হলো এটা পরকীয়া ব্যাপার। সাগর কেন ডিউটি ফেলে তাড়াতাড়ি বাড়িমুখো হলো। সাগরকে আগে খুন করা হয়েছে। রুনী ছিল অসহায় বলি। যদিও ময়না তদন্তে জানা যায়, রুনী আগে খুন হয়, সাগর পরে। এর সাথে যোগ করা হলো মেঘের বক্তব্য। আঙ্কেলদের ভিতর একজন তার গলা টিপে ধরে ছিল। সে দু’জন আঙ্কেলকে চিনেছে।

কারা তারা? এখন সেই আঙ্কেলদের ব্যাপার চেপে যাওয়া হচ্ছে কেন কিংবা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না কেন?

এরপরে গ্রিল কাটা চোর থেকে শুরু করে পারিবারিক কলহ, ডাকাতি এবং শেষ পর্যন্ত মৃত রুনীকেই হত্যাকারী বানানোর চেষ্টা কোনটাই বাদ যায়নি। কিন্তু সে কি করে? ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী রুনীকে খুন করা হয় আগে। শুরু থেকেই পুলিশ বলছে হত্যাকারী এবং হত্যার মোটিভ এখন হাতের মুঠোয়। ‍কিন্তু অদ্যবধি সেই হাতের মুঠো তারা খুলছে না। এই সুযোগে গুজব ডালপালা ছড়ালে তার দায়িত্ব কার?

পুলিশ একেক সময় একেক কথা বলছে, সংবাদকর্মীরা সেটা প্রচার করছে। কিন্তু বিচারপতিরা সব দায়ভার চাপিয়ে দিলেন সংবাদ কর্মীদের ওপরে। আমাদের বিচারপতিদের কি ধারনা নেই যে, আমাদের দেশের পুলিশ এর আগেও আলোচিত জজ মিয়া নাটকের অবতারণা করেছিল? টাকার বিনিময়ে মামলার তদন্ত কিভাবে প্রভাবিত হয়, মাননীয় বিচারপতিরা কি সে সম্পর্কে অবহিত নন? একটা হত্যার জন্য দৃঢ়ভাবে যখন এতোগুলি মোটিভ প্রচার করার চেষ্টা করা হয় তখন জনমনে সন্দেহ জাগাটা কি অস্বাভাবিক কিছু?

অসংলগ্নতা এখানেই থেমে নেই। হত্যাকাণ্ডের পরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরা হবে। পরে তিনি বললেন, ওটা ছিল সাংবাদিকদের চাপে বলা। সেই একই ব্যক্তি আবারো বললেন, মামলাটি প্রধানমন্ত্রী নিজে তদারকি করছেন। তার চেয়ে বড় ব্যক্তি কে আছে? সেই বড় ব্যক্তিই অবশেষে সেই অতি আলোচিত বেডরুম তত্ত্বের জন্ম দিলেন। মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলা, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের তামাশাপূর্ণ আচরণ দেখে মনে হতেই পারে যে, ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেবার চেষ্টা হচ্ছে। এই সব চাতুরিপণায় কাজ না হওয়াতে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে আদালত সাংবাদিকদের আন্দোলনকে গুড়িয়ে দিতে এখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভয় দেখাচ্ছে। এই আচরণ কাদের স্বার্থে? খুনীদের রক্ষায় এই হটকারী ভূমিকা কেন?

তারপরেও কি আমরা সেই অসংগতির কথাগুলো বলতে পারব না?

সংবাদকর্মীরা গিয়েছিলেন আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাবার আশায়। কিন্তু উল্টো পরোক্ষ সেন্সরশিপের খড়গ নিয়ে ফিরতে হলো বাড়িতে। একই সুরে প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমাদের সাংবাদিকরা নাকি বেশি স্বাধীনতা পেয়ে যা ইচ্ছা তাই লিখে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কারো দেয়া ‘উপহার’ নয়, এটা মানবাধিকার। সব বিষয়ে ‌‌‌‌বাহবা’ নেবার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে।

সত্যি সাংবাদিকরা স্বাধীনতা একটু বেশিই পেয়ে যাচ্ছে, যার পুরস্কার একের পর এক সাংবাদিকের অপমৃত্যু। সাংবাদিকদের সাথে সাথে খুনীরাও অতি স্বাধীনতা পেয়ে যাচ্ছে, খুন করে পার পেয়ে যাবার। আমাদের মহামান্য প্রেসিডেন্টও ক্ষমা করে যাচ্ছেন একের পর এক ভয়ংকর খুনীদের।

মাননীয় আদালত বিদেশের উদাহরণ টেনেছেন এক প্রসংগে যেটা ঘটনার এক পিঠ, অর্ধ সত্য। আদালত বলেননি যে,  সভ্য কোন দেশে আমাদের দেশের মতো এতো গুম, রাজনৈতিক বিবেচনায় হত্যাকারী প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সাজামুক্ত হলে সেই সরকার তো পড়ে যেতই, বরং তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হোত।

আদালত বিরোধী দলীয় নেত্রীর একটা বক্তব্যকে সমালোচনা করেছেন যেটা নাগরিক হিসেবে সবারই খুশী হবার কথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও আদালতের এক পেষে সমালোচনার কারণে সেটাও সমালোচিত হয়েছে। একই সময়ে, একই ঘটনার উপরে করা আমাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর করা বক্তব্য “সাগর-রুনির হত্যাকান্ডে জামাত শিবির জড়িত” সেটার জন্য তাকে তিরস্কার করেননি। প্রধানমন্ত্রীর বেডরুম থিউরিতে সারা দেশ যখন ক্ষোভে ফুসছে, সেই কথারও সমালোচনা হয়নি। আদালতের এই পক্ষপাতপূর্ণ তিরস্কারের কারণে বিরোধী নেত্রীর উক্তির জন্য যে পরিমাণ মানুষের ক্ষোভ হবার কথা ছিল সেটা প্রশমিত হয়ে বরং আদালতের ভূমিকাই সমালোচিত হচ্ছে বেশি। অনেকের তাই মন্তব্য, ন্যায় বিচারের জায়গাটিতে যেন কোন রাজনৈতিক বিবেচনা না থাকে।

পুলিশ এখনো সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকারীদের ধরতে না পারলেও সন্দেহজনকভাবে অন্ততঃ ২০ জনকে নির্যাতন করে পুলিশ কি জিনিস বুঝিয়ে দিয়েছে। অপরাধী ধরতে না পারলেও ২০ জনকে নির্যাতন করে নিজেরাই নতুন অপরাধের জন্ম দিয়েছে। এদের বেশীরভাগকেই গ্রেফতার না দেখিয়ে দিনের পর দিন আটক করে নির্যাতন করা হয়েছে যেটা সংবিধান বিরোধী।   স্বামীর মুক্তির জন্য দেন দরবারে কাজ না হওয়াতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার অপরাধে রুমাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এটা কি কোন সভ্য দেশে সম্ভব? মাননীয় আদালত আপনি বিদেশের উদাহরণ যখন টেনেছেন তখন বলুনতো কোন সভ্য দেশে নাগরিকের উপরে এ ধরনের অত্যাচারের নজির আছে? স্বীকারোক্তির নামে রিমান্ডে নিয়ে বা যে কোন প্রকারে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে মানবতার লংঘন কোন আইনে আছে? আদালতের এই ব্যাপারে উদ্যোগ কি? স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একটা ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন কি?

আধুনিক রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছিল, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবতা সর্বোপরি মানুষকে রক্ষার জন্য। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য যে, জন্মের পর থেকেই রাষ্ট্র ব্যবস্থাগুলো জনগণের পাশ থেকে সরে গিয়ে একে অপরকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে, মানুষকে নয়। সাগর রুনির খুনকে কেন্দ্র করে আজকে যে জন বিক্ষুব্ধতা, তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে অভিজ্ঞতা থেকে প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা থেকে মানুষের আস্থা সরে যাবার ফলেই এর সৃষ্টি। কিন্তু আমরা প্রত্যক্ষ করলাম জনগণের ক্ষোভের সৃষ্টির পিছনে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে না গিয়ে আদালত সংবাদপত্রকেই সাবধান করে দিয়েছে।

সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী কিছু ঘটনায় যেমন সাংবাদিকতা এবং এথিকস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তেমনি আরেকটি প্রশ্ন উঠতে পারে বিচারপতিরা কি জবাবদিহিতা কিংবা সমালোচনার উর্ধ্বে? সাগর-রুনির সংবাদ পরিবেশনে কিছু সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে সেটা মানছি। কিন্তু সেই সব সাংবাদিকের সমালোচনা তাদের সহকর্মী সাংবাদিকরাই কিন্তু করেছে। কিছু সাংবাদিকের ভুলের সুযোগে পুরো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে জনগণের মুখোমুখী দাঁড় করিয়েছে। অনুরোধ, মানুষের ন্যায়বিচার পাবার শেষ জায়গা আদালতকে যেন কোনভাবে সেই অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেয়া না হয়।

সর্বশেষ সংবাদ থেকে জানা গেছে, সাংবাদিকরা এখনো অটুট আছে এবং যে কোন পক্ষ থেকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপরে হস্তক্ষেপকে মেনে না নেবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। আমার মনে পড়ছে এক জনের কথা। যিনি একটা সময়ে পুলিশের অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। থানা এবং আদালতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছিল। তাকে বাঁচাতে ভাই বোন যেই টাকা ছাড়া থানায় ছোটাছুটি করেছিল, ৫৪ ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকেও ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছিল। প্রায় একমাস পুরো পরিবার অন্যায় না করেও পালিয়ে ছিল। এখনো তার ভিতরে পুলিশ এবং আদালতের প্রতি  তীব্র ঘৃণা কাজ করে। অতি ক্ষোভে একদিন ইংরেজিতে সে যেটা আমাকে বলেছিল তার বাংলা রূপ করলে দাঁড়ায়, ”আমি কখনো তোমাকে ক্ষমা করব না আমার ওপরে চালিত তোমার অন্যায়ের জন্য, মরণ হলেও নয়। মৃত্যুর আগে আমি আমার গায়ে লিখে যাব, “আমি তোমাকে ঘৃণা করি”, যেন মৃত্যুর পরেও আমার প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। ”

কথাগুলোর প্রতিটা অক্ষরে অক্ষরে মিশে আছে গাঢ় ঘৃণা। আদালত কি এ রকম লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘৃণাগুলোকে উপলব্ধি করতে পারছেন? মহামান্য বিচারপতিরা কি ওই মানুষটাকে তিরস্কার করবেন যার ভিতরে ঘৃণা কাজ করছে? নিজের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদও করার অধিকার নেই একজন নাগরিকের? এই ঘৃণা সৃষ্টির মূলে যারা দায়ী তাদের অপরাধ বারবারই সমালোচনার উর্ধ্বে থেকেছে। ঐ ব্যক্তির মতো সাহসী উচ্চারণে সাংবাদিক ভাইয়েরা কি সহকর্মীদের মৃত্যুর বিচারের জন্য উচ্চকণ্ঠে বলতে পারবে না যে,
”আমি কখনো সত্যের পক্ষে বলা থেকে থেমে যাব না। কেউ আমাকে বাধ্য করলেও নয়। ”

এবার পাঠকের জন্য একটা স্বপ্নের বয়ান। পুণঃপুণঃ শপথ করে বলছি, এটা ওপরের লেখা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা উপস্থাপনা। কাজেই আদালত অবমাননার কোন সুযোগ নেই।

হীরক রাজার দেশের জনগণ রাজার কাজে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে তারা স্বপ্ন দেখছে। ড্রইং রুমে বিশাল টিভির পর্দা। জমজমাট সিনেমা চলছে, ’এক্স ফাইলস’। বিভিন্ন লোমহর্ষক খুনের কারণ সম্পর্কে কূল কিনারা না পাওয়া সব বিখ্যাত ঘটনা। ছবির ফাঁকে বিজ্ঞাপন বিরতি। হীরক রাজার নির্দেশনা সম্বলিত জন অবহিতকরণ বিজ্ঞপ্তি।

‘একজন খুনীর সন্ধানে: ভলান্টিয়ার আবশ্যক। ”
রাজ্যে একজন বিখ্যাত ব্যক্তির খুনীকে ধরতে না পেরে পুলিশ মরিয়া।
সঙ্গে সতর্কীকরণ বক্তব্য: কেউ স্বেচ্ছায় খুনী হতে রাজি না হলে রাজ্যের সবাইকে ধরে এনে সিদ্ধ ডিম তত্ত্ব দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হবে। এ জন্য কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেলে হীরক রাজা দায়ী নয়। ‘

রাজ্যে খুন হওয়া বিখ্যাত ব্যক্তির খুনের কারণ ও খুনীদের খুঁজে না পাবার ব্যর্থতা নিতে হীরক রাজা রাজি নয়। হত্যা রহস্য সমাধানের কি অপূর্ব কৌশল!!!!!!!

জয় হোক হীরক রাজার।

[email protected]

বাংলাদেশ সময় : ০৯১৭ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।