ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

স্বাধীনতার মাসে উত্তপ্ত রাজধানী

এ কে এম রিপন আনসারী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১২
স্বাধীনতার মাসে উত্তপ্ত রাজধানী

মহান স্বাধীনতার মাসে উত্তপ্ত রাজধানী। অতীতের যেকোনো সময় বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এবারের মহাসমাবেশগুলোর তাৎপর্য ভিন্ন।

বেশির ভাগ সমাবেশের দাবি অধিকার আদায়ের।

সমাবেশগুলোর ভিন্নতা হলো- এই প্রথম সাংবাদিক সমাজ ন্যায় বিচারের দাবি নিয়ে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছেন। সোমবার ফেনীর উদ্দেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে লংমার্চ চলছে।

৭ মার্চ খোদ শাসকদল আওয়ামী লীগের গণমিছিল। গণমিছিলের দাবি হলো- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা।

১২ মার্চ বিরোধীদলের ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি। লক্ষ্য- তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি। ১৪ মার্চ বামদলগুলোর মহাসমাবেশ। দাবি হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ১৮ মার্চ সাংবাদিকদের মহাসমাবেশ। দাবি হলো- সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ন্যায় বিচার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।

১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের। স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের মানুষ দু’বেলা-দু’মুঠো ভাত খেয়ে শান্তিতে নিদ্রা যাবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরপর খুন হন আরেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।  

দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় তারা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের সঙ্গে একমঞ্চে বক্তব্যও দিয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বিএনপি জামায়াত নেতাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উপহার দিয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছেন জিয়া ও এরশাদ। জিয়ার খুনিদের আংশিক বিচার হলেও পরিপূর্ণ বিচার হয়নি। ৯ বছর দেশ শাসন করেছেন সামরিক শাসক এরশাদ। দুই নেত্রী মিলে এরশাদকে জেলে পুরেছেন। আবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এরশাদকে কাছেও টানা হয়েছে।  

দুই নেত্রীকে জেলে দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যারা ছিলেন তাদের মাঝে অনেকে এখনো রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকায় চলছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা ২৯ দিন অসহযোগ আন্দোলন করেছেন তারাই এখন বলছেন তত্ত্বাধায়ক সরকারের প্রয়োজন নেই।

যারা এক সময় বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি- তারাই এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছেন।

তবে দুঃখের বিষয় হলো- ক্ষমতাসীন দল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করছেন রাজপথে। রাষ্ট্রযন্ত্র যাদের হাতে তাদের আন্দোলন কিসের জন্য? কিসের দাবিতে এবং কেন? যুদ্ধাপরাধের বিচরের দাবিতে জাতি ঐক্যবদ্ধ। এই বিচারের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেবেন তাদের জাতি কোন দৃষ্টিতে দেখে তা সবাই জানে।

যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে জনমত চলে যাবে এটি স্পষ্ট। বিরোধীদল যদি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য সরকারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তবে জনগণ সরকারের পক্ষেই নামবে।

কিন্তু বর্তমানে বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জনগণের যেমন সমর্থন রয়েছে তেমনি সমর্থন আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে।

দুই দলই বলছে, জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। সত্যি জনগণ তাদের সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু ভিন্ন ইস্যুতে। দেশের রাজনীতির ঘুটি মূলত: কয়েকজনের হাতে। এদিকে সব ভবনেই জনগণ আছে। একবার এই ভবন আরেকবার ওই ভবন। ভবনভিত্তিক ক্ষমতার জন্য জনগণ এখন জিম্মি। গণতন্ত্র বলতে যা বুঝায় তা যেন দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে।

আন্দোলনের নমুনা দেখে মনে হয়, সরকারি দল, বিরোধীদলসহ সবাই আন্দোলনে। আন্দোলন আর আন্দোলন। চারিদিকে এখন আন্দোলনের ডামাডোল। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র অথচ চলছে চতুর্মুখী আন্দোলন।

সরকারি দল ও বামদলের আন্দোলন বিচারের দাবিতে। বিরোধীদলের আন্দোলন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য। এরশাদের আন্দোলন সার্বভৌমত্ব রক্ষার। জামায়াতের আন্দোলন আত্মরক্ষার।

সরকারের উচিৎ হবে সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে ঠেলে না দেওয়া। অর্থাৎ বিরোধীদলের আন্দোলনের গতিবৃদ্ধি করার সুযোগ সৃষ্টি করতে না দেওয়া। সাংবাদিকরা রাজনীতি করে না। অবশ্য অনেকে পরোক্ষভাবে রাজনীতি করেন।

সাগর-রুনির লাশ বিভক্ত সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হবার পথের সন্ধান দিয়েছে। আশাকরি সাংবাদিক সমাজ এই একটি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হবে। কারণ দেরিতে হলেও সাংবাদিকরা বুঝতে পেরেছে, তাদের রাজনীতিতে যাওয়া ঠিক নয়।

কারণ রাজনীতি করলে দেশ ও জনগণের জন্য কথা বলা কষ্ট হবে এই জন্য যে, রাজনীতিবিদরা এখন জনগণ ও রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি ভালবাসে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে। আমরা জানি, সুনির্দিষ্ট স্বার্থরক্ষার বাধ্যবাধকতা থাকলে সত্য বলা মুশকিল হয়। যতদিন পর্যন্ত মুষ্টিমেয় সাংবাদিক রাজনৈতিক খোলস থেকে বের হতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র ও জনগণ শান্তির আশা করতে পারবে না।

আশা করব- সাংবাদিকদের যাতে মহাসমাবেশ করতে না হয় সেদিকে সরকার দৃষ্টি দেবেন। আমরা চাই একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র যেখানে গণতন্ত্র থাকবে। মানুষের মানবাধিকার, ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকবে।

নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন। তবে আর কাউকে বলতে হবে না- পালাবার পথা খুঁজে পাবেন না।

এ কে এম রিপন আনসারী, সাংবাদিক ও কলাম লেখক

বাংলাদেশ সময় : ১২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।