ঢাকা, রবিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জুন ২০২৪, ২২ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

প্রেসক্লাব-ডিআরইউ কাদের জন্য?

আদিত্য আরাফাত, সাংবাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১২
প্রেসক্লাব-ডিআরইউ কাদের জন্য?

অনলাইন মিডিয়া তাই অফিসে গিয়ে সংবাদ দেওয়া সম্ভব হয় না। যখনকার সংবাদ তখনই অফিসে পাঠাতে হয়।

দ্রুত সংবাদ আপলোড করতে হয় তাই সংবাদ সম্মেলন বা যে কোনো অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ দ্রুত নিউজ ডেস্কে দিতে তৎপর থাকি।

আমি প্রেসক্লাব বা সাংবাদিকদের কোনো সংগঠনের সদস্য নই। সাংবাদিকদের এসব সংগঠনের প্রতি আমার ব্যক্তিগত আপত্তি থাকায় আমি এখনও কোনো সংগঠনের সদস্য ফরমও পূরণ করিনি। অনেক সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে ইতোপূর্বে একাধিক সংগঠনের সদস্য ফরম পূরণ করতে বলেছেন।

৫ মার্চ। বেলা সাড়ে ৫টা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) একটি অনুষ্ঠান কাভার করে নিউজ পাঠাতে ডিআরইউর নিচে বসেই অফিসের ল্যাপটপ অন করেই দেখি চার্জ প্রায় শেষ পর্যায়। চার্জ না দিয়ে নিউজ পাঠালে ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যাবে তাই ডিআরইউর এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটি ল্যাপটপের চার্জ দেয়ার জন্য।

না! আমি ডিআরইউ’র কম্পিউটার ব্যবহার করতে চাইনি; শুধু ল্যাপটপের চার্জ দিতে চেয়েছি। ডিআরইউ অফিস রুমে (দ্বিতীয় তলা) গেলে স্টাফরা বলেন-সাংবাদিকদের জন্য যেখানে কম্পিউটার আছে সেখানে চার্জ দিয়ে কাজ করুন। সেখানে প্রবেশ করতেই একজন বলে-‘ডিআরইউর স্টাফ না হলে প্রবেশ করা যাবে না। ’ আমি বলি- ‘আমি ল্যাপটপ চার্জ দেবো, কম্পিউটার ব্যবহার করবো না। ’

ভেতরে থাকা এক সাংবাদিক নেতা আমাকে দেখে বলে- ‘আরে আসো আসো...আমার রেফারেন্সে তুমি এখানে কম্পিউটারে কাজ করবে। ’ আমি তাকে বলি- ‘আমি আপনার রেফারেন্স দিয়ে কাজ করবো কেন? আমি সাংবাদিকতা করি এ পরিচয় কি যথেষ্ট নয়?’ হাসেন তিনি। আমাকে বলেন- ‘রাগ কইরো না। যতক্ষণ ইচ্ছে কম্পিউটার ইউজ করো। বললাম তো আমার কথা বলে করবে...কেউ নিষেধ করবে না। ’

আমিও হাসতে হাসতে বলি- ‌‘ডিআরইউর কম্পিউটার যেদিন সদস্যের বাইরে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজ করার সুযোগ থাকবে সেদিন করবো। ’

নিউজ তখনো পাঠাইনি। দ্রুত যাই প্রেসক্লাবে। না! প্রেসক্লাবের কম্পিউটার ব্যবহার করতে নয়। শুধুই চার্জ দিয়ে অফিসের ল্যাপটপে নিউজটি পাঠাতে। অভ্যর্থনা বিভাগে বলি আমি নিউজ পাঠাবো ল্যাপটপের চার্জ দেবো। এখানেও সেই ডিআরইউ ঘটনার পুনরাবৃত্তি। অভ্যর্থনা বিভাগে কর্মরত স্টাফ বলেন- ‘‌সদস্য ছাড়া কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে না। ’
আমি তাকে বলি- ‘আমিতো আপনাকে কম্পিউটার ব্যবহারের কথা বলছি না। ল্যাপটপ আমার সাথেই আছে। কয়েকমিনিট ল্যাপটপে চার্জ দেবো। ’

প্রেসক্লাবের স্টাফ একটি আঞ্চলিক ভাষায় জানান, সদস্য ছাড়া ল্যাপটপে চার্জ দেওয়াও সম্ভব নয়।

অভ্যর্থনা বিভাগে প্রেসক্লাবের স্টাফের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আসেন প্রেসক্লাবের আরেক সদস্য। ল্যাপটপে চার্জ দেবো বলতেই উনি হাসতে হাসতে হয়রান। বলেন-‘এইটা কোনো বিষয় হইলো। প্রেসক্লাবের সভাপতি তোমার এলাকার। তোমার পরিচিত। তোমাদের বড় ভাই। সবুজ ভাইরে (কামাল উদ্দিন সবুজ) ফোন দাও। এইটাতো মিয়া বিষয় না। ’
আমি ফোন দিই না। কথা না বাড়িয়ে ফিরে আসি প্রেসক্লাব থেকে। বাইরে তখন বাংলানিউজের ফটো সাংবাদিক নাজমুল হাসানের সঙ্গে দেখা। নাজমুল আমাকে প্রেসক্লাবের বাইরে এক জায়গায় চার্জ দেওয়ার সুযোগ করে দেন। নাজমুল জানান- ফটো সাংবাদিকদের অনেকেই প্রেসক্লাবের বাইরে থেকে ছবি পাঠান। অন্য একটি সংবাদ সংস্থার সাংবাদিকও তখন বলেন-‘প্রেসক্লাবের সামনে এক স্টেশনারি দোকানে ল্যাপটপ চার্জ দিয়ে একটু আগে সংবাদ পাঠিয়েছি। ’

কেন আমাকে প্রেসক্লাবের বাইরে গিয়ে সংবাদ পাঠাতে হয়? প্রেসক্লাবের সামনে স্টেশনারির দোকানের মালিক সাংবাদিকদের কম্পিউটারে চার্জ দেওয়ার সুযোগ দেন অথচ প্রেসক্লাব কিংবা ডিআরইউর ভেতর কেন দেওয়া হয় না?

একজন সাংবাদিক হয়ে কেন আমি পেশাগত কাজ প্রেসক্লাব কিংবা ডিআরইউর ভেতর করতে পারি না? আমি সাংবাদিক; আমার প্রেসকার্ড কি প্রেসক্লাব-ডিআরইউতে পেশাগত কাজ করার জন্য যথেষ্ট নয়? কেন আমাকে অন্যের পরিচয় দিয়ে ডিআরইউতে কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ নিতে হবে? কেন আমাকে প্রেসক্লাবের সভাপতি এলাকার বড় ভাই কিংবা নিজ জেলার পরিচয় দিয়ে সুযোগের কথা আসবে?

প্রেসক্লাব কিংবা ডিআরইউর বর্তমান কমিটির কাছে এক তরুণ সাংবাদিকের প্রশ্ন- সদস্যের বাইরে আমরা যারা সাংবাদিকতা করছি আমরা কেন আপনাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে পেশাগত কাজ করতে পারবো না?  সাংবাদিক সংগঠনগুলো কবে পেশাগত সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে আসবে...।

লেখক-বাংলানিউজের সাংবাদিক
[email protected]

বাংলাদেশ সময় ১০১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।