ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় লাগে

এ কে এম রিপন আনসারী, সাংবাদিক-মানবাধিকার কর্মী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০১২
চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় লাগে

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। ৩০ মিনিটের ব্যবধানে ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমার বিস্ফোরণ।

ছোট আকারের হতাহত হলেও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের শক্তির ভয়াবহতা প্রদর্শনের ওই ঘটনা ছিল জাতির জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ সংকেত।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার আঁচ করতে পারেনি এ হামলার পূর্ব সংকেত। ওই সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তবে ১৭ আগস্টের সিরিজ বোমা হামলা নিয়েও তৎকালীন সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে চিরায়ত দোষারোপ করতে ভুল করেনি।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশেই মামলা ও গ্রেফতার অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ সকল মামলার মধ্যে অনেক মামলার রায় হয়েছে। রায়ে খালাস পাওয়ার সংখ্যা খুব কম। তবে নিম্ন আদালতে দণ্ডিত আসামি উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন, বলে আমরা জনেছি। ৫ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুর থেকে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত সিরিজ বোমা হামলা মামলার ৭ আসামি উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়ে মুক্তিলাভ করেছেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পড়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সদর থানার মামলা নং ১৭(৮)২০০৫ এ আসামি ছিল ২১ জন। ঝিনাইদহ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক সা ক ম আনিছুর রহমান  মুক্তিপ্রাপ্ত ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। ২০০৬ সালের ২১ এপ্রিল দণ্ডিতদের ঝিনাইদহ কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে আনা হয়।

মহামান্য হাইকোর্ট ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে বেকসুর খালাস দেন। ১ মার্চ আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে খালাসের কাগজপত্র কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছে। কারা কর্র্র্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ৫ মার্চ তাদের মুক্তি দেন।

আমরা অবশ্যই মহামান্য আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আশা করি, আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, মুক্তিপ্রাপ্ত ৭ জন যদি জঙ্গি হয়ে না থাকেন তবে ৬ বছরের অধিক সময় তারা বিনা অপরাধে জেল খেটেছেন। আমি স্বাভাবিক ভাবেই জানি, নিম্ন আদালতের রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হলে উচ্চ আদালতের রায়ে তা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অবস্থায় নিম্ন আদালতের রায় সম্পর্কে মন্তব্য করছি না। তবে জনগণের দাবি ওঠা স্বাভাবিক যে, নিম্ন আদালতের বিচারক এমন বড় ভুলটি করেছিলেন। উচ্চ আদালতের রায়ের পর নিম্ন আদালত সম্পর্কে জনগণের এ ধরনের প্রশ্ন আদালত অবমাননা হলে প্রশ্নটি প্রত্যাহার যোগ্য।

জনগণের মতামত পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বিশেষ করে জঙ্গি মামলার ক্ষেত্রে প্রদত্ত রায় জাতির জন্য বেদনাদায়ক ও ভীতিকর যেন না হয়। কারণ, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ইসলামকে কলঙ্কিত করে। এ ধরনের বিপথগামী মুসলমান অবশ্যই ইসলামের জন্যও ভীতির কারণ। ফলে জঙ্গি মামলায় আসামি গ্রেফতার ও বিচার দুটোই স্পর্শকাতর।

মঙ্গলবার সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ১২ মার্চ ঢাকায় বিরোধী দলের সমাবেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেছেন, তিনি এ ধরনের আশঙ্কার পূর্বাভাস পেয়েছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের আশঙ্কা নিঃসন্দেহে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মামলার ৭ আসামি উচ্চ আদালতের রায়ে খালাস সাপেক্ষে মুক্তিলাভের পরদিন সরকার কর্তৃক সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রকাশ ও ৩ জঙ্গি গ্রেফতার নতুন কোনো ইঙ্গিত দিলো কি না জানি না।

তবে আশা করতে পারি, জঙ্গি দমন ও  মুক্তি যেন আশঙ্কার কারণ না হয়। এখানে একটি কথা না বললে নয়, চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় লাগে।

বাংলাদশে সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।