ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মহাসমাবেশ : জয়-পরাজয়ের খেলা

ইকবাল হাসান, এডিটর অ্যাট লার্জ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১২
মহাসমাবেশ : জয়-পরাজয়ের খেলা

এক কথায় এটা এক ধরনের রাজনৈতিক পরাজয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেই যেন নিজের জন্যে এই পরাজয় ডেকে এনেছে।

একটি মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে, মানুষের জীবনে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বয়ে এনে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকার মূলত নিজের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা আর অসহায়ত্ব প্রমাণ করলো। একটি দেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো একনায়কসুলভ যে ফ্যাসিবাদী আচরণ করলো, তা এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মহাসমাবেশের দিন হাজার হাজার র‌্যাব, পুলিশ, বর্ডার গার্ড, চার/পাঁচ ধরনের গোয়েন্দা, ছাত্রলীগ আর যুবলীগের সন্ত্রাসী-পাণ্ডাদের নামিয়ে, লঞ্চ-বাস-ট্রাক-টেম্পু, ট্রেন-স্টিমার, হোটেল-রেস্তোরাঁ সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে, সারা ঢাকায় ক্যান্টনমেন্ট টাইপ চেক-পোস্ট বসিয়েও জনস্রোত বন্ধ করা যায়নি। তারপরও বিএনপির মহাসমাবেশ সফল হয়েছে। যার পিছনে আওয়ামী লীগেরই কৃতিত্ব; আমি বলি, ৬০%। অবশ্য মহাসমাবেশ আটকাতে আওয়ামী লীগ এই অপ্রয়োজনীয় নোংরা খেলা না খেললে ঢাকা শহরে হয়তো পা রাখার জায়গা থাকতো না।
 
বলা নিষ্প্রয়োজন যে, বিরোধী দলের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণ, সরকার পরিচালনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সীমাহীন ব্যর্থতা। পদে পদে আটকে যাচ্ছে অযোগ্য মন্ত্রীদের দ্বারা চালিত সরকার। মন্ত্রীদের অযোগ্যতা ও অন্যান্য কারণে নির্বাচনকালীন অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি বাস্তবের মুখ দেখেনি আজতক। জ্বালানিসহ প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্যে মানুষের জীবন বিপন্ন প্রায়। দেশে আইনের শাসন নেই বললেই চলে। খুন-খারাবিগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। উপরন্তু আমাদের মহামান্য ‘বিগহার্ট’ রাষ্ট্রপতি খুনি-ফাঁসির আসামিদের গণহারে কৃপা দেখিয়ে চলেছেন।

দুর্নীতি এখন তুঙ্গে। সরকারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আওয়ামী লীগের মুখে কালিমা লেপন করেছে। দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চাটুকার মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর অতিকথনে। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে থাকা চাটুকার, খয়ের খাঁ, আর ‘জ্বি আপা’ টাইপ তলপিবাহকেরা তাঁর চারপাশে এখনো বুনে চলেছেন স্বপ্নের মায়াজাল।
 
মনে হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে জনগণ এর প্রতিশোধ নেবে। এ সুইট রিভেঞ্জ। অতএব আওয়ামী নেতৃত্বের উচিত, এখনো যেটুকু সময় আছে তার সদ্ব্যবহার করা, কিছু কিছু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করা। মন্ত্রিসভা থেকে অযোগ্যদের বের করে দেয়া।

মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া এবার আর ‘সরকারকে ল্যাংড়া-লুলা’ করে দেবার মতো রুচিহীন কোনো বাক্য উচ্চারণ করেননি। যে-ই লিখে দিয়ে থাকুক না কেন, খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশের বক্তব্য রুচিপূর্ণ, পুরোমাত্রায় রাজনৈতিক এবং যথার্থ যুক্তিযুক্ত। যদিও এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্যে এবং বিশেষ করে গ্রেনেড হত্যা মামালায় তারেক জিয়ার সম্পৃক্ততার  গুরুতর অভিযোগের কারণেই পার্লামেন্টের বাইরে রাজপথে সহসা এতোটা অস্থির হয়ে উঠেছেন তিনি! কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার যে, মুক্তি দাবি করা তো দূরের কথা, মহাসমাবেশের বক্তৃতায় তিনি একবারও একাত্তরের নরঘাতক, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতিদের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। জামায়াতিরা এতে মনক্ষুণ্ন হলেও হতে পারে।

একথা অনস্বীকার্য, ইদানীং রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেলেও, বিরোধী দলীয় নেত্রী জানেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে সারাদেশ আজ একতাবদ্ধ। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার প্রতি দেশবাসীর সাপোর্ট ১০০%। যে কারণেই মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া একটিবারও জোটভুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কথা বলেননি।

বাংলাদেশ সময় : ১৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।