ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সমগ্র নারী সমাজকে কলুষিত করবেন না

আফরিন জাহান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১২
সমগ্র নারী সমাজকে কলুষিত করবেন না

নেপোলিয়ন বলেছিলেন,‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দেবো’

তখন ক্লাস ফোর কিংবা ফাইভে পড়ি। মফস্বলে পড়লে যা হয় আর কী।

ইংরেজির সঙ্গে খুব সখ্যতা হয়নি তবে একটা ট্রান্সলেশন পড়েছিলাম, পরীক্ষায় আসবে বলে।

পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে রচনা কিংবা ভাব সম্প্রসারণ লিখতে গিয়েও এই বাক্যটিকে বহুবার বহুভাবে ব্যবহার করেছি। শুধু ব্যবহারই নয়, মনে মনে ধারণও করেছি।

আমার মা বলতেন, ‘যদি কেউ বাজে কথা বলে, তবে সেটা এসে বলার দরকার নেই। বরং বলবে বাজে কথা বলেছে। সেটা এতোদিন ধরে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। আমার সেই গ্রামের মাকে কত সময়ে যে বকা দিয়েছি, ‘কেন আমাকে এটা শেখাওনি, ওটা শেখাওনি?’। মা চুপ থেকে হাসতেন। বলতাম, ‘আমি শহুরে মায়ের ঘরে জন্মালে ভালো হতো, আরও কত কি!’

মা গত হয়েছেন। বেঁচে থাকলে মাকে বলতাম,‘মা তুমিই মহান। ’ কারণ, ১৮ মার্চ মহান সংসদে শিক্ষিত মায়েদের বাকবিতণ্ডা শুনে তাদের ব্যাপারে যে ধারণা হলো, তা হয়তো মা জীবিত থাকলে বলতে পারতাম না। আমাদের মহিলা এমপিরা মহান সংসদে লোক সমাগমে যেসব শব্দচয়ন করেন, জানি না তারা ঘরে কেমন। সাধারণত আমরা জানি মানুষ ঘরে যেমনই হোক বাইরে অন্তত শালীণ আচরন করেন সেটা যদি ধরে নেই তবে তবে এসব মহিলা এমপিদের ঘরের ভাষা কি তা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই জানেন। নেপোলিয়ন এসব মায়েদের দেখলে কি বলতেন, নাকি এই অভদ্র সমাজ থেকে লজ্জায় মাথা হেট করে বিদায় নিতেন তা ভাবলে নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাই। বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা যেখানে বসে বড় বড় সিদ্ধান্ত নেন, সেখানে কিন্তু আমরা জনসাধারণরাই তাদের পাঠাই। সেখানে কোনো ব্যক্তি আক্রোশ বড় হবার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে!

যারা আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মহান সংসদে গিয়েছেন তারা আমাদের কথা না বলে নিজের নেত্রীকে খুশি করতে তাদের বাবা ও সন্তানদের প্রশংসা করে যাচ্ছেন এবং তা ধারাবাহিকভাবেই। তারা এটা কেন বোঝেন না এই ভালো-মন্দ নির্বাচনের দায়িত্ব জনগণের। কারণ, বাংলাদেশ কোনো সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ নয়। এটা গণতান্ত্রিক দেশ। বরং কেউ দেশকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ক্ষমতায় টিকে থাকাটা তার জন্য অসম্ভব। সেটা আমরা দেখেছি ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে।

তারপরেও আমাদের এই শিক্ষিত এমপিদের কেন বোধোদয় হয় না, জানি না। বরং তারা টেবিল চাপড়ানো সস্তা শব্দকেই বড় মনে করেন। কারণ, সংসদের ঠাণ্ডা হাওয়ায় প্রবেশ করার পরপরই যে তারা ভুলে যান বৃদ্ধ সেই দিনমজুর কিংবা রিকশা চালকদের কথা, যাদের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি বা তারা নির্বাচিত হয়ে মহান সংসদে এসেছেন। এখানে এসেই তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন, নেত্রীদের খুশি করতে। কারণ, ভাবেন নেত্রীকে একবার খুশি করতে পারলেই যে কেল্লাফতে। নিজের প্রজন্ম তো বটেই পরের কয়েক প্রজন্মকে নিয়েও আর তাকে ভাবতে হবে না। টাকার এমন পাহাড় গড়বেন যেন সেই পাহাড়ের পেছনে লুকালে পৃথিবীর কেউ তাকে খুঁজে না পায়।

এটা বলছি এ কারণে যে, ক্ষমতা হারালে তারা বলেন, ‘আমরাও ক্ষমতায় গেলে দেখিয়ে দেবো। ’ বরং এটা বলেন না, ‘আমরা ক্ষমতার অপব্যবহার না করে দেখিয়ে দিয়ে বরং দৃষ্টান্ত স্থাপন করবো। যাতে সাধারণ জনগণের কাছে উদাহরণ হতে পারি। ’

আমাদের মহিলা এমপিরা তাদের সহজাত প্রবৃত্তিগুলো আরো একবার প্রকাশ করলেন। দেখালেন, তাদের চিরচেনা রুপ। কিন্তু এই রুপতো আমাদের দেশের কোমলপ্রাণ বাঙালি নারীর চিরায়ত রুপের সঙ্গে মেলে না। মহিলা এমপিদেরকে তাই বলতে চাই, ‘আপনারা এসব করে সমগ্র নারী সমাজকে কলুষিত করবেন না। সে অধিকার বাংলাদেশের সকল নারী আপনাদের দেননি। যা করছেন, সেটা অধিবেশন শেষ করে বাড়িতে গিয়েই করুন না। আমরা সেটা দেখবো না। আর তা দেখে আমাদের বিদেশি বন্ধুরাও বলবেন না ‘এই হলো তোমাদের মহান সংসদ!’

লেখক: আফরিন জাহান, গণমাধ্যমকর্মী
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।