ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এসব কী চলছে ডিজিটাল দেশে?

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১২
এসব কী চলছে ডিজিটাল দেশে?

শেখ হাসিনার বক্তৃতাটি শুনে চমকে উঠেছি! এশিয়া কাপের ফাইন্যালের দিন মাঠে যদি না যেতেন খালেদা জিয়া! এর আগে মোহাম্মদ নাসিমও রাবিশ বক্তব্য দিয়েছিলেন। গুরুত্ব পায়নি।

শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর সেটিকে গুরুত্ব দিতে হয়। কারণ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের বিরোধীদলের নেত্রী সম্পর্কে তিনি এমন আপত্তিকর বক্তব্য দিতে পারেন না। কারণ সাবজেক্টটা রাজনীতিও না। ক্রিকেটের। দেশের রাজনীতিকরা যা পারেন না, আজকাল ক্রিকেটাররা প্রায়ই তা করে দেখাচ্ছেন। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করছেন প্রায়। এশিয়া কাপ ক্রিকেটকে কেন্দ্র করেও ব্যক্তিগত ও দলগত পারফরমেন্সে জাতীয় ক্রিকেটদল সেভাবে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। সে ঐক্যের আহবানে সাড়া দিয়ে বিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়াও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন একটি সুযোগ মিস করেছেন। রাষ্ট্রপতির পাশে সেদিন বিরোধীদলীয় নেত্রীকেও খেলা দেখতে তাদের  পাশে ডেকে নিতে পারতেন। এটি করলে তাতে দেশের মানুষের কাছে তার বড় মনের পরিচয় মিলত। কিন্তু তিনি তা করেন নি। উল্টো বিরোধীদলের নেত্রীকে কটাক্ষ করে বলতে চেয়েছেন, তিনি খেলা দেখতে যাওয়াতেই দল হেরেছে! তা-ও এতে আবার এক্ষেত্রে তার গৃহপরিচারিকার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করা হয়েছে! এটি আমাদের জাতীয় ক্রিকেটদলের পারফরমেন্স ও কৃতি্ত্বকে ছোট করা হয়েছে। একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদনেত্রী হিসাবে বিরোধীদলের নেত্রীকে তিনি এভাবে ছোট করতে, কটাক্ষ করতে পারেন না। এর মধ্য দিয়ে দেশের সংসদকেই ছোট ও কটাক্ষ করা হয়েছে, যা রীতিমতো বিপদজ্জনক।

একটা কথা মাঝে মাঝেই লিখি, শেখ হাসিনাকে এবার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার সময় তার কথাবার্তার ফাইল একটু উল্টে দেখতে বলি। মানুষ সেসব বিনীত কথাবার্তা পছন্দ করেছিল। আজকের দুর্বিনীত কথাবার্তাকে অপছন্দ করছে। মনে করা হয়, এসব দুর্বিনীত কথাবার্তার কারণেই ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসতে পারেন নি।
 
চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে খোদ বন ও পরিবেশমন্ত্রীর উদ্যোগে দুটি হাতিকে ব্যবহার করা হয়েছে! বার্তাটি মোটেই ডিজিটাল রুচির পরিচায়ক নয়। যে দেশকে ডিজিটাল হিসাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন স্লোগানে ক্ষমতায় আসা একটি দল যে দেশে দোয়েল ল্যাপটপের প্রোডাকশন্স-মার্কেটিং উদ্বোধন করে, সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেশের একটি অঞ্চলে বনের হাতি দিয়ে বরণ করা হয়! তাও আবার সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর উদ্যোগে? বন্যপ্রাণীর ব্যবহার-অপব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন-কানুনও জানেন না এই মন্ত্রী? পরিবেশ সচেতনতার বৈশ্বিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আলগোরের উদ্যোগে অ্যান্টার্কটিকা ঘুরে এসে এই জ্ঞান-সচেতনতাই কী হলো আমাদের ডিজিটাল সরকারের এই মন্ত্রীর? আমাদের শৈশবে ইবনে মিজান, এফ কবীর চৌধুরী, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুদের কথিত সব ফোক-ফ্যান্টাসির পোশাকি ছবিতে আমরা রাজা-বাদশাদের কাল্পনিক গল্পের ছবিতে এসব হাতি-ঘোড়ার ব্যবহার দেখতাম। দুনিয়ার সঙ্গে দেশের মানুষের রূচি বদলের সঙ্গে সেইসব পোশাকি ছবির ধারাও হারিয়ে গেছে। আর আমাদের চলতি ডিজিটাল সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে অভ্যর্থনা জানাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি বা দলের দীর্ঘদিনের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ক্যারিশমাও আর কাজে লাগছে না? সেখানে দরকার হচ্ছে শান্তি রানী ও শেঠ বাহাদুর নামের সাফারি পার্কের দুটি হাতি’র? বার্তাটি ভালো হলো না প্রধানমন্ত্রী!
 
স্বাধীনতা দিবসে খালেদা জিয়াকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যেতে কেন বাধা হয়েছে? কেন বাধা দেয়া হয়েছে তার হোটেলের প্রোগ্রামে? এর আগে গত বিজয় দিবসেও খালেদা জিয়ার স্মৃতিসৌধে যাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মারপিট হয়েছে। এবার গুলশানের বাড়ি থেকে বেরুবার আগেই তার বহরের সামনে পুলিশ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হলো কেন? এরপর পথে পথে দলীয় গুণ্ডাদের ব্যবহার করা হলো কেন? স্বাধীনতার বিদেশি বন্ধুরা ঢাকা এসে সরেজমিন কী দেখে গেলেন? সচিত্র সন্ধানী আর আশির দশকের যায়যায়দিনের শফিক রেহমান আজ কিসের আশায় কোথায় পোতায়া গেছেন, এটি তার নিজস্ব ব্যাপার। তার মেধা-প্রতিভা তিনি এখন বেগম জিয়ার জীবন গবেষণার নামে টাকা কামাই আর সাংবাদিক ঠকানোয় নিয়োজিত করেছেন, এটি তার ব্যাপার।

আব্দুল গাফফার চৌধুরীর তো একটি মাস্টার পিস ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো’ গান আছে; এটি ছাড়া বাঙ্গালির একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় না। কিন্তু তার (শফিক রেহমানের)সর্বশেষ দেশের শতশত সাংবাদিক ঠকানো ছাড়া কী কীর্তি আছে? দেশের সাংবাদিকরা কী কোনোদিন বিমানবন্দরে শফিক রেহমানের মতো আব্দুল গাফফার চৌধুরীর গতিরোধ করেছেন? সেই শফিক রেহমানের খালেদা জিয়ার জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাধা দিতে গিয়ে তাকে যে আব্দুল গাফফার চৌধুরীদের আক্রমণের সুযোগ করে দেয়া হলো, এর দায়দায়িত্ব কে নেবে? পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হয়। এখন বই প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হবার পর শফিক রেহমান বলেছেন, আরও খারাপ ভাবে খুন হবেন শেখ হাসিনা! আরও খারাপভাবে বিদায় হবে শেখ হাসিনার সরকারের! আমাদের প্রিয় শফিক ভাই কী এসব পরিকল্পনা আপটুডেট ভালো জানেন, নাকি শ্যাম্পেন একটু বেশি পড়েছিল পেটে? এসব ঘটনা কেন ঘটানো হলো এর সাফ জবাব দিতে হবে সরকারকে। এসব এনালগি আচরণ কিন্তু কোনো ডিজিটাল সরকারের নমুনা নয়।

ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।