ঢাকা: বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তারা এখন হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকি’।
শনিবার ৩ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্মের আয়োজনে ‘জন শুনানি: জাতীয় উন্নয়ন ও স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক বলেন, আমার বাবা জেলে যেতে দেখতাম স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারে সময়। কিন্তু কখনো আমি এই ভয়টা পাইনি যে আমার বাবা আর কখনো ফিরে আসবে না। অথবা আমার বাবা হারিয়ে গেছে এমন ভয়ও ছিল না। ভয় ছিল না আমার মা দরজায় দরজায় ঘুরবেন আমার বাবা কোথায়?
এখন সেই দিন নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন মানুষ হারিয়ে যায়। আমরা যারা বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি আমরা ভয়ে থাকি পুলিশ আমাদের তুলে নিয়ে গিয়ে আদালতে সোপর্দ করবে তো? এখন আদালতে হাজির করলে আল্লাহর কাছে শুকর করি। এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা আজ উন্নয়নের আলোচনায় বসেছি। সময়টি খুব মসৃণ নয়।
বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আজকে উন্নয় নিয়ে অনেক আলাপ হয়। উন্নয়ন নিয়ে অনেক আলাপ শুনেছি। উন্নয়ন মানে কি? ডেভলাপমেন্ট অব ফ্রিডম বইয়ে অমর্ত্য সেন পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, উন্নয়ন হচ্ছে -দারিদ্র, দমনকারী অপশাসন, রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চনা, অর্থনৈতিক অসহিষ্ণুতা, নীপিড়ন থেকে মুক্ত থাকা। এর কোনোটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি? পারি নাই। উন্নয়নকে আমরা দালানকোঠা বা অবকাঠামো নির্মাণের মতো সীমাবদ্ধ জায়গায় নিয়ে গেছি।
ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে আমাদের বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা সেটা দেওয়া হয় না। কারণ এখান থেকে লুটপাট করা যায় না। অবকাঠামোর দিকে আমাদের নজর বেশি। প্রথম কারণ হলো, মানুষকে দৃশ্যমান কিছু দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখা যায়। দ্বিতীয় কারণ এর থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা লুটপাট করা যায়। এই যে লুটের রাজনীতি, সবকিছু খেয়ে ফেলবার রাজনীতি এগুলো থেকে বের হতে না পারলে আমরা আমরা উন্নতি করতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, আমি একজন দ্বিতীয় প্রজেন্মর রাজনীতিবিদ হিসেবে দুই ধরণের রাজনীতিকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। আমি আমার কলিগদের দিকে তাকাই তখন আমি একজন বনখেকো দেখি, আমি পাহাড়খেকো দেখি, আমি ব্যাংকখেকো দেখি, আমি টাকা পাচারকারী দেখি, আমি মাদক ব্যবসায়ী দেখি। এই ধারা যতদিন পরিবর্তন না হবে আমরা যেই প্রান্তিকতা থেকেই আসিনা কেন, সেখান থেকে উত্তরণের কোনো পথ খোলা নাই। রাজনীতিকে আগে সুস্থ ধারায় আনতে হবে।
রাজনীতিবিদদের বেশি কথা বলার সমালোচনা করে রুমিন ফারহান বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি তারা শুনি কম বলি বেশি। আজকে এখানে এসে মনে হলো আমাদের শোনাটা খুব প্রয়োজন ছিল, নিজেকে শুদ্ধ করার জন্য। যাদেরকে নিয়ে কাজ করতে চাই, যাদেরকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই, যাদেরকে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ রচনা করতে চাই - তারা কী ভাবছে, তারা কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে? তাদের দিন কিভাবে কাটছে সেটা জানাটা খুব জরুরি।
আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির এই নেত্রী বলেন, এই ধরনের একটি চমৎকার সভা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ। যেখানে আমরা বলছি কম শুনছি বেশি। আমি মনে করি, রাজনীতি সুস্থ থাকলে সমাজ সুস্থ থাকবে, মানুষ সুস্থ থাকবে। যখন রাজনীতি অসুস্থ হয়ে যায় তখন আর কোনো কিছুই সুস্থ থাকে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২২
এসআর/এসএএইচ