ঢাকা: বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে জিয়াউর রহমানের মার্শাল ডেমোক্রেসি ফিরিয়ে আনতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় ও সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছে এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তারা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছেন। তাহলে তারা কি রাষ্ট্রসংস্কারের নামে জিয়াউর রহমানের মার্শাল ডেমোক্রেসিতে নিয়ে যেতে চায় সেটি হচ্ছে আমার প্রশ্ন। আজকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব, মার্কিন প্রেসিডেন্ট, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব নেতারা বাংলাদেশের প্রসংশা করছেন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়ন অগ্রগতি করেছে সেটা অন্য দেশের জন্য উদাহরণ। যাদের জন্ম আসলে অগণতান্ত্রিকভাবে তারা যখন রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলে তখন মানুষ ভাবে বিএনপি আবার মার্শাল ডেমোক্রেশি ফিরিয়ে আনতে চায়।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশি ফলে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি শুরু থেকে তাদের কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশি নিয়ে অতিরঞ্জিত বক্তব্য রাখছে। পুলিশ তল্লাশি করে সেখানে তাজা বোমা পেয়েছে। যে অফিসে তাজাবোমা পাওয়া যায় সেখানে তন্নতন্ন করে তল্লাশি করা স্বাভাবিক। সেখানে শুধু তাজাবোমা না আরও অনেক কিছু পাওয়া গেছে। সেখানে ক্যাশ টাকা, লাঠিসোটা, ১০৭ বস্তা চাল, আড়াই লাখ পানির বোতল পাওয়া গেছে যেগুলো স্বাভাবিক নয়। আমাদের অফিসে কী চাল, ডাল পাওয়া যাবে? তারা অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করছে। আসলে পুলিশ তল্লাশির স্বার্থে তল্লাশি করছে। তারা যে অভিযোগগুলো করছে সেগুলো সঠিক নয়। বিএনপিকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বহুবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আমাদের অফিস তছনছ করেছে, তল্লাশি করেছে এবং অনেককে গ্রেফতার করেছে।
সম্প্রতি শাহীনবাগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। গত ৫০ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে যে ঘটনা হয়েছে সেটা হতো না, যদি তিনি ১৯৭৭ সালে যারা জিয়ার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তাদের পরিবারের বক্তব্যটি শুনতেন এবং স্মারকলিপিটা নিতেন।
তিনি বলেন, সেখানে যারা তার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তারা তাকে হুটহাট করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেটা না করে তাদের দু’চারটি কথা শুনতে পারতেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সেখানে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। সেখানে কিছু লোক দাঁড়িয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছিল। সেখানে নিরাপত্তাজনিত কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যদি এ সরকার না চান তাহলে নির্বাচনে আসেন। তখন বোঝা যাবে জনগণ এই সরকারকে চায় না, তাদেরকে চায়। তারা তো জনগণের কাছে বহুবার আহ্বান জানিয়েছেন। ১০ ডিসেম্বর সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলেন, সেদিন সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবেন, কিন্তু সেদিন তারা নিজেরা পদত্যাগ করে চলে গেছেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সব মানুষের নিরাপত্তা দিতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। ডিজিটালি মানহানির শিকার হয়ে প্রতিকার পেতে অনেক সাংবাদিকও এই আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। এ আইনের কোনো অপপ্রয়োগ যাতে না হয়, তা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি।
তিনি বলেন, এখন মামলা হলেই সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা যায় না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে এখন জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এটি নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল, তার অনেকগুলোর নিরসন হয়েছে। যখনই কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা আমার কানে আসে, আমার যা যা করা দরকার, তা আমি করি।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিহত্যার ঘটনায় আটকে থাকা তদন্ত নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলাসহ দরকার হলে আইনমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব।
সাগর- রুনি হত্যা মামলা নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তদন্তকারী সংস্থা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। যেহেতু সমস্যা তদন্তকারীদের ক্ষেত্রে, সুতরাং এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলাব যুক্তিযুক্ত। হ্যাঁ আমি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি, তবে প্রাথমিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২২
জিসিজি/এমএমজেড