ঢাকা: নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো দুরভিসন্ধি নেই জানিয়ে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করি না। আমরা নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভোট অনেকে বিতর্কিত করতে চায়। অনেকে অনেক কথা বলে কিন্তু আমরা সেটা করেছি। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করে দিয়েছি। সেই আইন মোতাবেক রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। সেখানে আমরা আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন আমরা পাস করে দিয়েছি। আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকতো তাহলে আমরা সেটা কেন করবো? খালেদা জিয়ার মতো আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতাম, তা তো আমরা করিনি! আমাদের জনগণের ওপর আস্থা-বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি। ’
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি। আগে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক সক্ষমতা নিজস্ব ছিল না, সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে রাখা ছিল। আমরা তাদেরটা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি। বাজেট থেকে সরাসরি তাদের টাকা দেওয়া হয়। যাতে স্বাধীনভাবে তারা কাজ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছি। আমরা ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি। ইভিএম কিছু কিছু চালু হয়েছে। সেখানে কিন্তু কারচুপি করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা জানি না। ’
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন কী ছিল? নির্বাচন মানেই ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। এই নির্বাচনী সংস্কার; আওয়ামী লীগ, ১৪ দল মহাজোট মিলে আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর যে কাজই করুক, আমাদের জেল খাটাক, যা-ই করুক, তারা অন্তত সে প্রস্তাবের কিছু কাজ বাস্তবায়ন করে গেছে। ’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা করেছিল, সেটা বাদ দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে, যাতে কেউ ভুয়া ভোট দিতে না পারে। সিল মেরে আগেই ব্যালট বাক্স ভরবে, সেটা যেন না পারে সে জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করা হয়েছে। আমাদেরই, আওয়ামী লীগের স্লোগান ছিল—আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। ভোট দেওয়ার যে সাংবিধানিক অধিকার, সেই অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। ’
ভোট চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন হয়েছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কারো ভোট চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। এ দেশের মানুষ মেনে নেয়নি। গণঅভ্যুত্থান, আন্দোলন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বাংলার জনগণ তাকে বাধ্য করেছিল। এর পরে ১২ জুন যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি। ’
তিনি বলেন, ‘১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা করে নির্বাচনে কারচুপি করে যে চক্রান্ত করেছিল সেই চক্রান্ত এ দেশের জনগণ সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দিয়ে... তার পরে অবশ্য ইমার্জেন্সি আসে, গ্রেফতার করে। ২০০৮-এ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোট করে আমরা জয় লাভ করি। আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। ‘
দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল। দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর আমি চার-চার বার প্রধানমন্ত্রী। আমাদের পরিবার দুর্নীতিই যদি করতো তাহলে দেশের মানুষকে কিছু আর দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি। মানুষের জন্য করতে এসেছি। এ কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, এটা অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে মেনে নিতে পারি না। ’
আরও পড়ুন: যুদ্ধের উসকানি বন্ধ করুন: শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
এমইউএম /এসকে/এমজেএফ