চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের (গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট) উপ-নির্বাচনে এবার শুধু আওয়ামী লীগ থেকেই ডজনখানেক মনোনয়ন প্রত্যাশী। সেই সঙ্গে আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি দাবি করে বসেছে।
বিষয়টি নিয়ে এমনিতেই আওয়ামী লীগে চলছে অস্থিরতা। তার ওপর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র কেনায় আওয়ামী লীগের নেতারাও বিব্রত হয়েছেন।
এর আগে সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নাচোল রেলস্টেশনে এবং মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে গোমস্তাপুরের রহনপুর বাজারে আসন্ন উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে নৌকা প্রতীক চেয়ে গণসংযোগ করেন তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে এক পথসভায় তিনি নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার কথাও জানান।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন তিনি। বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে একটি নির্বাচনী পোস্টার পোস্ট করেন মাহি। যা ভাইরাল হয়ে গেছে। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, মাহি মাত্র তিনদিনের ঝটিকা সফরে এসে সামান্য গণসংযোগ করেই নৌকার জন্য মনোনয়ন চাইছেন। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিরুপ প্রতিক্রীয়া লক্ষ্য করা গেছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে রাজশাহী-১ (তানোর, গোদাগাড়ী) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে সেই এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ ও গণসংযোগ শুরু করেন মাহি সরকার। কিন্তু হঠাৎ করে সোমবার থেকে বিএনপির এমপি আমিনুল ইসলামের পদত্যাগের পর শূন্য হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে গণসংযোগ ও পথসভা শুরু করেন মাহি। এ সময় নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা ও ভোট চেয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি।
এদিকে মাহির তানোর ও নাচোলে এমন কাণ্ডে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট উপজেলায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, রাজনীতি করার একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া রয়েছে। সেটি অনুসরণ করে আওয়ামী লীগে আসার পর এসব কর্মকাণ্ড করলে তাও মানানসই হতো। যেসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় তাদের নৌকার মনোনয়ন দিলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। মাহির এমন কাণ্ডে নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতা কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন রেজা বলেন, মাহিয়া মাহির সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী কোনো সংগঠনের সম্পর্ক নেই। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের কোনো পদেও নেই। এমনকি তার গণসংযোগে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা কর্মীরাও উপস্থিত ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক সদস্য বলেন, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া আওয়ামী লীগের জন্য বিপদ সংকেত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, মনোনয়নপত্র চাওয়া নাগরিকের একটি অধিকার। যারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে তারা, যে কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারে। মাহি সম্ভবত আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক কমিটিতে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে যদি তিনি রাজনীতি করতে পারেন তাহলে তিনি করুক। জয় বাংলা স্লোগান বলে যে কেউ রাস্তায় নামতে পারে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
অপরদিকে এ আসনটিতে জামাত-বিএনপির সমর্থক বেশি হলেও আওয়ামী লীগ সেটি দুই দফায় ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু গত নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিয়াউর রহমান। তবে এবারের উপ-নির্বাচনে জামাত-বিএনপির তোড়জোড় না থাকায় আসনটি আবারও ফিওে পেতে চায়ন আওয়ামী লীগের নেতারা। কিন্তু ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়নপত্র না দিলে এবং অভ্যান্তরীন কোন্দল না মিটালে আবারও জোটের শরীক জাতীয় পার্টির কাছে হাতছাড়া হওয়ার আংশকা করছেন তারা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন প্রায় ডজন খানেক। তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জিয়াউর রহমান, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, নাচোল উপজেলার বাসিন্দা যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক, ঢাকা উত্তর ও উত্তর সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রফিকুল আলম সৈকত জোর্য়াদার, নতুন মুখ ভোলাহাটের বাসিন্দা সেক্টর কমার্ন্ডাস ফোরামের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এবং ভোলাহাট উপজেলার দুইবারের (জাতীয় পার্টি) চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের বাসিন্দা নতুন মুখ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সম্পাদক কামরুল হাসান লিংকন, গোমস্তাপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা বেগম, গোমস্তাপুর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান হুমায়ন রেজা, ভোলাহাট উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শওকত আরা, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এবং সর্বশেষ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
অপরদিকে ভোলাহাট উপজেলার বাসিন্দা হলেও ঢাকায় অবস্থানকারী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের আইনজীবি মো. আব্দুর রশিদ জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির ১ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক।
রশিদ বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদি। তাছাড়া মহাজোট থেকে এবার তারা এ আসনটির জন্য চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে মাহিয়া মাহির দাবি, তিনি নাচোলে জন্মেছেন এবং বড় হয়েছেন। তাই তিনি সেখানে অতিথি নয় বরং নাচোলের মানুষ। আর দলীয় নেতাকর্মীরা স্বর্তফুর্তভাবে তার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। নারী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্নবিশ্বাসী তিনি।
ফোনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুপ মনোভাবের বিষয়ে মাহি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক কমিটিতে আছি। দীর্ঘ দিন মানুষের সেবা করেছি। তাই এটি করো হিংসার বিষয় নয় বরং আমি মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ সদস্য পদটি পেলে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে পারবো।
এ সময় তিনি মনোনয়ন না পেলেও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রাপ্তদের পক্ষে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লঅখ ৭৫ হাজার ৪৬৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জিয়াউর রহমান। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫২টি। এবার আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করায় উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
এফআর