সিলেট: ‘কমিশনার থেকে পৌর চেয়ারম্যান, সিলেট সিটি করপোরেশনে (সিসিক) উন্নীত হওয়ার পর প্রথম মেয়র ছিলেন প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এরপর দুই মেয়াদে নির্বাচিত মেয়র ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাপিয়ে হয়ে ওঠেন ‘জনতার কামরান’। জাতীয় থেকে স্থানীয় নির্বাচন, তার পদচারণা মানেই প্রার্থীর পক্ষে সৃষ্টি হতো গণজোয়ার।
গত দুই মেয়াদে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান। তারপরও মানুষের ভরসাস্থল ছিলেন কামরান। অতিমারিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে জীবন প্রদীপ নিভে যায় সাবেক এই মেয়রের। নগরবাসী হারায় একজন অভিভাবক। সেই সঙ্গে সিলেটে মেয়র পদে শূন্যতার সৃষ্টি হয় আওয়ামী লীগে।
কামরান বিহীন নগরে নৌকার কান্ডারি কে হবেন? কামরানের উত্তরসূরী হওয়া চাই, এমন প্রার্থী সংকটে ভুগছিল ক্ষমতাসীন দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত ঘটেছে আচানক ঘটনা। অবসান ঘটতে চলেছে সব জল্পনা কল্পনার।
আলোচনায় না থাকা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই হচ্ছেন সিসিকে নৌকার কান্ডারি। যদিও দুই কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের অন্তত হাফ ডজন প্রার্থী এ পদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে নিজেদের জানান দিচ্ছিলেন। তবে কেন্দ্রের সবুজ সিগন্যাল এখন ক্লিন ইমেজধারী আনোয়ারুজ্জামানেরই পক্ষে। মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির এক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা তার।
যদিও এনিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি আনোয়াররুজ্জামান চৌধুরী। শুধু বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। রধানমন্ত্রী যেখানে কাজ করতে বলবেন, সেখানেই কাজ কাজ করব।
এদিকে সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী হচ্ছেন আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী- গত কয়েক দিন ধরে এমন আলোচনায় সরব সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গণ। এমন অবস্থায় ২২ জানুয়ারি দেশে আসেন আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী। ওই দিন সকালে তাকে বরণে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবও। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে বরণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
ওসমানী বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রা করে তাকে নিয়ে আসা হয় নগরীতে। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত করেন আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী। এতেই তার মনোনয়নপ্রাপ্তির বিষয়টি অনেকটাই খোলাসা হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, কথা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক সাংসদ সৈয়দা জেবুন্নেছা হক সম্প্রতি স্থানীয় নেতাদের জানিয়েছেন, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন, সিলেটে মেয়র পদে নগরীর বাইরে থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে কাকে প্রার্থী করা হবে- তা খোলাসা করেননি প্রধানমন্ত্রী। এতে ধরে নেওয়া যায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী।
দলীয় সূত্র জানায়, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিগত দিনে দলের জন্য নিবেদিত হয়ে প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। যেমনটি করতেন সাবেক মেয়র প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন কর্মী হয়ে তিলে তিলে গড়ে ওঠা এক মানবিক কর্মী, ক্লিন ইমেজের রাজনীবিদ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কলেজ জীবনে তিনি বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন।
এরপর তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়েও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী থেমে থাকেননি। প্রথমে তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট-২ আসনে প্রার্থী হতে তৎপর থাকলেও দলীয় মনোনয়ন জোটেনি। তারপরও বসে থাকেননি তিনি। জাতীয় সংসদ থেকে স্থানীয় সরকার সব নির্বাচনকালে ছুটে এসেছেন দেশে। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সরব থাকতে দেখা গেছে তাকে। বিশেষ করে সিলেট-১ ও সিলেট-৩ আসন, সিলেট জেলা পরিষদ ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। নৌকার বিজয় নিশ্চিতে দিনরাত খেটেছেন। এ কারণে শুধু বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরেই নয়, সিলেট সদর ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন এবং ফেঞ্চুগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে তার। নেতাকর্মীরাও যেন তার মাঝে প্রয়াত মেয়র কামরানের স্বভাবসূলভ দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পান।
নেতাকর্মীদের অনেকে জানান, সারাবিশ্ব যখন করোনা মহামারিতে টালমাটাল। মানুষের যাপিত নিয়মগুলো থমকে ছিল, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধীরে ধীরে হাঁটছে; তখন সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের সেবায় নিভৃতে কাজ করে গেছেন আনোয়ারুজ্জামান। সিলেটের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। আড়ালে থেকে অগণিত নেতা গড়ার কারিগরও তিনি। দেশ ও দেশের বাইরে আওয়ামী লীগকেও চাঙা রাখতে কাজ করেছেন। বিনিময় হিসেবে কখনো বাগিয়ে নেননি পদ-পদবি।
সূত্র জানায়, দলের জন্য তার এই নিঃস্বার্থ ত্যাগ কেন্দ্রের নজর কেড়েছে। যে কারণে ‘ডার্ক সাইডে’ থাকা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ডাক পড়েছে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে। কেন্দ্রের শীর্ষ সারির এক নেতাও এরইমধ্যে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
এনইউ/এমএমজেড