ঢাকা: দীর্ঘ এক দশক পর রাজধানীতে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশে হুঙ্কার দিয়েছে দলটি।
শনিবার (১০ জুন) দুপুর ২টায় এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। সঞ্চালনায় ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করে জনগণের দাবি মেনে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান নির্বাচন। সেটা হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। সেটা করতে হলে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করতে হবে। কিন্তু এরা (আওয়ামী লীগ) দিনের ভোট রাতে করে। লজ্জা তো ঈমানের অঙ্গ। কিছুটা তো লজ্জা থাকা উচিত নেতাদের। সুতরাং বলবো, ২০১৪ ও ২০১৮ গেছে যাক। এবার ২০২৪ আর সেভাবে যাবে না। যদি আওয়ামী লীগ বোঝে তাহলে আসুন, আলোচনা করুন। এবারের নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে দাবি আদায়ে যা করা দরকার আমরা সেই আন্দোলন করবো।
তিনি আরও বলেন, আজকে দেশের শাসক ও মানুষ সৎ হলে ডোনার দেশ হতাম। কিন্তু সেটা করতে পারিনি। আপনারা না পারলে আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। তাহলেই দেশের পরিবর্তন হবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সমাবেশের অনুমতি দেওয়া ও শেষ পর্যন্ত সহায়তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, জামায়াত কখনো বিশৃঙ্খলা করেনি, করে না এবং করবে না। যদি হয় সেটা কেউ বাইরে থেকে করতে পারে, সাবোট্যাজ। জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এবং হামলায় বিশ্বাস করে না। জামায়াত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সুশৃঙ্খল আদর্শিক দল। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা থাকেন তাদেরকে জামায়াত সম্পর্কে জানতে হবে। আজকে যারা সোনার বাংলা গড়তে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা ব্যর্থ। সেখানে সোনার বাংলাদেশ ও সোনার নাগরিক তৈরির কাজ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। যে কারণে কোনো চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ইভটিজিং, মাদক, বা নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় ছাত্রশিবিরের কোনো নেতাকর্মীর নাম আসে না। কারণ, জামায়াত ও শিবির মডেল সোনার মানুষ তৈরি করে।
ডা. তাহের দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন। সেইসঙ্গে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তা না হলে জামায়াত মুক্ত করবে এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে। একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি এবং একটি নৈতিকতাসম্পন্ন ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ তৈরির জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। এ ছাড়া বক্তব্য দেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মুসা, সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
নিজ বক্তব্যে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, যারা আমাদের সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করছে তারা জমায়াতের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। বরং তাদেরই ক্ষতি হয়েছে। নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে আমরা মুক্তি দিতে বাধ্য করব। আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েমের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। তাদের কাছে গণতন্ত্র কখনোই নিরাপদ ছিল না। কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায় না। তেমনি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ সাধু হয় না।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, যারা আমাদের নিষিদ্ধ ও অবৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত করেছেন, তারাই আজকে আমাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। কই আমাদের সমাবেশ থেকে তো একটি ঢিল ছুড়তে দেখা যায় নি। তাহলে জামায়াতের বিরুদ্ধে সংঘাতের অভিযোগ কেন? সংঘাত বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রয়েছে।
জামায়াত একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের নাম। দেশের ১১টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে আমরা চারটিতে অংশগ্রহণ করিনি। বাকি সব সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেই দলকে আপনারা বলেন অবৈধ? আমি বলবো আসুন সবাই। আমাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাধা দেবেন না। বাধা দিলে জাতির চির দুশমন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রথমে অনুমতি দেয়নি। পরে তারা নিবন্ধন না থাকার অজুহাত দিতে শুরু করে। জামায়াত তো ২০০৮ সালে নিবন্ধন পেয়েছে। পরে নিবন্ধন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এর আগে কারও বলার নেই জামায়াত অ-নিবন্ধিত দল। নির্বাচন কমিশনকে জবাব দিতে হবে তারা কোন আইনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে? অবিলম্বে তাদেরকে ওয়েবসাইট সংশোধন করতে হবে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আমাদের ৯৬ হাজার নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নির্যাতন চালিয়েছে। পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে নির্যাতনে পঙ্গু করা হয়েছে। দেশে আদালত আছে আইনের শাসন নেই। আমরা গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী। কিন্তু আমাদেরকে নিয়ে নাটক করবেন না। আমরা কোনো ভিসা নীতি নিয়ে মাঠে নামি নাই। কারণ, জামায়াতে ইসলামী চলে কোরআনের নীতিতে। ভিসা নীতি তো শেখ হাসিনার জন্য। আমরা জোর করে কিছু করতে চাইলে কারও শক্তি নেই যে সেটা বন্ধ করতে পারে।
সমাবেশে শিবিরের সেক্রেটারি বলেন, ক্যাম্পাসগুলোয় শিবিরের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি ও ছাত্রশিবিরের গুম হওয়া নেতা ওয়ালিউল্লাহ ও মুকাদ্দাসকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আগামীতে জাতীয় সংকটে ও ইস্যুতে ছাত্রশিবির রাজপথে থাকবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
টিএ/এমজে