ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

বিদেশি প্রতিনিধিদের সফরের পর স্বস্তিতে আওয়ামী লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
বিদেশি প্রতিনিধিদের সফরের পর স্বস্তিতে আওয়ামী লীগ

ঢাকা: আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদেশি প্রতিনিধিদের সফরের পর অনেকটাই স্বস্তিতে সরকার ও আওয়ামী লীগ। বিদেশিদের দিয়ে বিএনপি তাদের দাবির সমর্থনে সরকারের ওপর চাপ তৈরির যে প্রত্যাশা করেছিলো, তা ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া, দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে বাংলাদেশ সফর করে। তাদের সফরের আগে এবং সফরের সময় রাজনীতিতে বিভিন্ন আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংলাপের বিষয়গুলো ঘুরে ফিরে আলোচিত হতে থাকে। সম্প্রতি বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন জোরালো করার চেষ্টা করছে। বিদেশি প্রতিনিধি দলগুলোর সফরের সময়ই বিএনপি সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে।

সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি বিএনপি করছে, সে বিষয়ে বিদেশিদের প্রভাবিত করে এ ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা বেশ কিছু দিন ধরেই চালিয়ে আসছে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ প্রতিনিধি দল দুটির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে বিএনপির বড় ধরনের কিছু প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই প্রত্যাশা সফল হয়নি। আর এ বিষয়টি আওয়ামী লীগকে অবস্থানে দৃঢ় থাকতে সহায়ক হয়েছে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।  

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের অধীনে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, এ অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ সরবে না বলে দলটি ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নির্বাচন, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ- এ বিষয়গুলো বিদেশি প্রতিনিধিদের আলোচনায় আসেনি। এসব বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্যও করেননি। তারা নির্বাচনের পরিবেশ, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থানও এটিই। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ নিশ্চয়তার কথা বারবার জানিয়েছেন।

সরকার ও আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো আরও জানায়, আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় বলা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের কোনো পরামর্শ, চাপ বা হস্তপেক্ষ মেনে নেওয়া হবে না। তারপরও এসব বিষয়ে বিদেশিরা কথা বললে সরকারের জন্য সেটি এক ধরনের অস্বস্তিকর। তবে বিদেশি প্রতিনিধিদের এ সফরে সরকারকে সে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারকে চাপে ফেলতে বিএনপি বিদেশিদের দিয়ে যে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল, সেটা ব্যর্থ হয়েছে, যা সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সব দলের অংশ গ্রহণ চায়। বিএনপিও ওই নির্বাচনে আসবে বলে দলটির নেতারা মনে করছেন। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে সংবিধান নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলে আসছে আওয়ামী লীগ। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো বক্তব্য বিদেশি প্রতিনিধিদের দিক থেকে আসেনি। ফলে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে দেশের বাইরে থেকে প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনাও নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।  

গত ১৪ জুলাই এক সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বিদেশি বন্ধুদের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে যে পক্ষপাতমূলক সমর্থন চেয়েছিল সেটি ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশি বন্ধুরা আসার আগে বিএনপি তাদের অপপ্রচারের মাধ্যমে এমন ধারণার আশঙ্কা তৈরির চেষ্টা করেছিল যে- এবার বুঝি সরকারের রেহাই নেই। সরকারকে হয়তো ফাইনালি বলে দেবে এভাবে ইলেকশন করতে, তত্ত্বাবধায়ক হয়ে যাবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে- এ রকম চেয়েছিল বিএনপি। শেষ পর্যন্ত কি হলো? বিদেশি বন্ধুরা মূলত অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। কাউকে ধমক, নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি প্রয়োগ হবে এমন কোনো উক্তি তারা করেননি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা তারা বলেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির নির্বাচনে না এসে কি করবে, তাদের নির্বাচনে আসতে হবে। আমরা মনে করি বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসবে। সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসব বিষয় নিয়ে তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়েছিল কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। বিদেশি প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে কথা বলেনি। তাদের চেষ্টা সফল হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
এসকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।