ঢাকা: বিএনপি আওয়ামী লীগকে শত্রু নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে বলে জানিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
তিনি বলেছেন, আমরা আওয়ামী লীগকে শত্রু মনে করি না, আমরা আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম পরিষদ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভয় না পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেনছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। ওবায়দুল কাদের সাহেব এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিএনপি সব সময় গণতন্ত্র, নির্বাচন, আন্দোলনে বিশ্বাসী। আমরা আপনাদের পরাজিত করতে চাচ্ছি, ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন করতে চাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সময় দেশে নিরাপত্তা ছিল। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল, সেজন্য এমন কোনো পদক্ষেপ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নেয়নি, যে তাদের বিচার করে জেলখানায় পাঠিয়েছিল। তখনও গাড়িতে আগুন দেওয়া হতো, মানুষ মারা গেছে, লুটপাট করা হয়েছে, দুর্নীতি করা হয়েছে। এমন ঘটনা সে সময় সংগঠিত হয়েছে, যার প্রতিটির বিচার করলে সে সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করে বিচার করে জেল দেওয়া যেতো। কিন্তু সহনশীল নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এর কিছুই করেননি।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো সরকারের সময় যদি সহনশীল অবস্থা থেকে থাকে, সেটি বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় ছিল। তিনি (খালেদা জিয়া) জীবনে কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। তাকে আজ পাঁচটি বছর জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে তথাকথিত একটি মিথ্যা মামলায় বিচারের নামে দণ্ডিত বলে।
বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলা খুব কঠিন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে সত্য-মিথ্যা বলা যায় না। তারা খুব মাইন্ড করে। কিন্তু গত পরশু দিন একটি রায় দেখলাম, সকালে দণ্ডিত, দুপুরে মামলার জামিন এবং সন্ধ্যা বা বিকেলে সেটি খারিজ। কোনো এক সময় জজ ছিলেন, যিনি এই সুবিধা পেয়েছেন। আরেকটি মামলায় দেখলাম শুধু সমালোচনা করার কারণে একজন মেয়রকে জেল দেওয়া হয়েছে এক মাস, সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কোনটা কি কারণে হচ্ছে সেটি ভেবে নেওয়াই কঠিন। সেজন্য আদালত, বিচার-বিভাগ, বিচারালয়কে আমেরিকা ভিসানীতির আওতায় এনেছে কিনা তা আমি জানি না।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রধান সংবাদ সম্মেলনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও তার পরিবার সম্পর্কে যেভাবে আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন, উপেক্ষা করেছেন, ঘৃণা প্রকাশ করেছেন, তাতে বুঝা যায় তিনি তার প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না। সুতরাং তার ক্ষমতার চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় কোনো নির্বাচন স্থিতিশীল, স্বাভাবিক, গ্রহণযোগ্য হবে এটি বলা যায় না।
শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, যে সংকট বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে, যে সংকটের কারণে পুরো পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের ওপর নাখোশ হয়েছে, সেটি স্বাভাবিক করতে হলে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র-স্বাধীনতা-মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এ কেয়ারটেকার সরকার যত তাড়াতাড়ি বর্তমান সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে, তত তাড়াতাড়ি অনেক কিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে। এটি তারা বিবেচনায় নিতে পারে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি গোলাম সারোয়ারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাহমুদুল আলম মাহমুদের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন ও দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রিপন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
এসসি/জেএইচ