ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

স্বতন্ত্ররা জোট করলে বিরোধী দল হতে পারবে না জাপা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৪
স্বতন্ত্ররা জোট করলে বিরোধী দল হতে পারবে না জাপা

ঢাকা: নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের আবেদন করলে তারাই হবেন সরকারের প্রধান বিরোধী দল। এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

ফলে মাত্র ১১ আসনে জয়ী জাতীয় পার্টির বিরোধী দল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

তবে বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং একাদশ জাতীয় সংসদের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নানা মোড় ছিল। কোথাও হেভিওয়েট প্রার্থীরা হেরেছেন। কোথাও নৌকার প্রার্থীরা। সার্বিক পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, দলছুট ও নির্দিষ্ট একটি দল থেকে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে জয়ের হার তুলনামূলক বেশি। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় কারা থাকবে তা নিয়ে নির্বাচনের আগে পরে বেশ আলোচনা হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি মাত্র ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। নগণ্য আসন নিয়ে দলটি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান বিরোধী দল হতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বহু নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এবার জাপার কপালে সেই সুযোগটুকুও নেই।

সরকার বা জয়ী দল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় হয়েছে। এখন তারা যদি জোট করে ও জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালনের আবেদন করে এবং তিনি যদি সেটি গ্রহণ করেন- কপাল পুড়বে জাপার।

এখন অপেক্ষা নির্বাচিত স্বতন্ত্ররা জোট করবেন কিনা। যেহেতু সংসদের বিরোধী দল হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে সংবিধানে কিছু বলা নেই- সেহেতু তাদের কাছে সর্বোচ্চ সুযোগ আছে সরকারের প্রধান বিরোধী হওয়ার।

সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বতন্ত্র সদস্যরা সংসদের বিরোধী দলের দায়িত্বে যেতে চাইলে প্রথমে তাদেরকে আনুষ্ঠানিক সভা করে জোট গঠন ও রেজুলেশন নিতে হবে। সেখানে জোটের যে সদস্যরা থাকবেন তাদের প্রত্যেকে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করতে হবে। এর পর জোটের পক্ষ থেকে সংসদের স্পিকারের কাছে আবেদন জানাতে হবে। ওই জোটে সংসদ সদস্য বেশি হলে স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন। সব স্বতন্ত্র সদস্য ওই জোটে না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সদস্যদের চেয়ে জোটের সদস্য বেশি হলে তারাই হবে বিরোধী দল। যে কারণেই জাপার কোনো সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন না সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ সংসদ সদস্য, অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান, সাবেক চিফ হুইপ ও আওয়ামী লীগ নেতা উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বাংলানিউজকে বলেন, সংবিধানে বিরোধী গঠনের বিষয়ে কিছু বলা নেই। এবার স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন। তারা যদি গ্রুপ বা জোট করে আসে, স্পিকারের কাছে যদি আবেদন করে তবে ওই জোট বা গ্রুপই হবে বিরোধী দল, এতে কোনো বাধা নেই। যেহেতু বিরোধী দলের নেতা, বিরোধী দলের উপনেতা নির্বাচনের বিষয় আছে তাই আনুষ্ঠানিকভাবেই জোট হয়ে আসতে হবে।  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৬২ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা বিরোধী দলের ভূমিকায় যেতে চাইবেন কিনা, সেটিও বড় প্রশ্ন। আওয়ামী লীগও তাদের এ ভূমিকায় নেবে কিনা, সেটিও বড় বিষয়।

আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র সদস্যদের একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ বিরোধী দল নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে কিনা সেটি বড় বিষয়। এটি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্ররা অনেকেই বিরোধী দলে যেতে চান না। তারা সংসদে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকতে চান। পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তিনি চাইলে স্বতন্ত্র সদস্যদের জোটই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দল।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৪
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।