ঢাকা: ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে বিএনপি একই ব্যক্তির দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হওয়ায় কোনো সমস্যা দেখছে না বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
রোববার (২০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৫তম দিনের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, একই ব্যক্তির দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হওয়ার বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ না করে, বিষয়টিকে উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, আমরা মনে করি, এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। এটি একটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। দলীয় প্রধান যে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী হবেন, এমন কোনো নিয়ম নেই। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা নির্ধারিত হবে সংসদীয় দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনার মাধ্যমে।
কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল- একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান, এই তিনটি পদে একযোগে থাকতে পারবেন না, যেকোনো একটিতে থাকতে হবে। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিত মতামত দেওয়া হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করা নিয়ে খুব একটা মতভেদ নেই। তবে, একই সঙ্গে দলের প্রধান থাকা যাবে কি না, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। যুক্তরাজ্যের মতো দেশেও দলের প্রধানই প্রধানমন্ত্রী হন, তবে তা নির্বাচনের মাধ্যমে নয়, বরং সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। কোনো ব্যক্তি যদি কোনো দলের প্রধান হন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হতে বাধা দেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি দলীয় প্রধানের জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। এটি তার গণতান্ত্রিক অধিকার। সংসদীয় দল চাইলে তাকে প্রধানমন্ত্রী করতে পারে, আবার চাইলে অন্য কাউকেও মনোনয়ন দিতে পারে। তবে সেই সুযোগটা রাখা জরুরি।
শুধু দলীয় প্রধান হওয়ার কারণে কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না- এমন কোনো বিধান থাকলে তা গণতন্ত্রবিরোধী হবে এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চার পরিপন্থি হবে বলেও জানান বিএনপির এই নেতা। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো আপিল বিভাগের রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে। আমরা আশা করি, আদালতের রায়ের মাধ্যমেই এই ব্যবস্থা পুনর্বহাল হবে। তবে যদি তা না-ও হয়, জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই পদ্ধতি আবার চালু করতে পারে।
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা রয়েছে এবং সেই ভিত্তিতেই কমিশন একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে, যার ওপর দলগুলো মতামত দেবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রণালি প্রসঙ্গে বিএনপির প্রস্তাব তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, বিএনপি ও অন্যান্য দল বিকল্প কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। কমিশন সেগুলো পর্যালোচনা করে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। কেউ চাইলে তাতে সংশোধনী বা মতামত দিতে পারবে।
তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় হুইপ এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। এই কমিটি বিভিন্ন দল বা জনগণের কাছ থেকে নাম আহ্বান করবে। পরে সেগুলোর মধ্যে শর্টলিস্ট তৈরি হবে এবং প্রয়োজনে র্যাংকড চয়েস ভোটিংয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাকে বাছাই করা যেতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, এই ব্যবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ৯০ দিনের জন্য নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। জরুরি প্রয়োজন হলে আরও ৩০ দিন সময় বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। তবে তাঁর ক্ষমতা সীমিত হবে এবং রুটিন দায়িত্বেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
বাংলাদেশের বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক চর্চা বিবেচনায় নিয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে পারার আশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
এসবিডব্লিউ/এমএম