ঢাকা: নির্বাচনের সময়সীমা বলতে গড়িমসি করছে অন্তর্বর্তী সরকার যা জনগণ সন্দেহের চোখে দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সংস্কার করুন।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকার ডেমরায় শহীদ পরিবারের সাথে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত মানুষ। বাংলাদেশের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্মান নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাকে সর্বাগ্রে দেখতে হবে মানুষ কোনোটাতে বাঁচে মানুষ কোনোটাতে স্বস্তি লাভ করে। নিম্নআয়ের মানুষ যাতে ঠিকমতো খেতে পারে সেটার জন্য সবার আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। অনেক জিনিসের শুল্ক কমিয়েছেন কিন্তু বাজারে তার কোনো ইফেক্ট নেই। চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ এগুলোর কিন্তু দাম কমেনি। এগুলোর জন্য দায়ী সিন্ডিকেট। এই আওয়ামী সিন্ডিকেটবাজদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। তা নাহলে গণতন্ত্রের যে চেতনা, আন্দোলনের যে চেতনা, যারা জীবন দিয়েছে তাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই যে তিনি অবলম্বন করেননি। বাংলাদেশের সন্ত্রাসী চোর বদমাইশ, ডাকাত এদের তিনি বিচারের আওতায় আনেননি। শেখ হাসিনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অনাচারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে তিনি কারাগারে নিয়েছেন। যেসব ছেলেমেয়েরা কোনো রাজনীতিই করেন না কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেছেন ব্লগার বলে তাদেরও ঠিকানা হয়েছে কারাগারে। এভাবে তিনি রাজত্ব করতে চেয়েছেন তার গদিকে রক্ষা করার জন্য। তিনি যখন দেখেছেন এভাবেও তার গদি নিশ্চিত হচ্ছে না তখন তিনি ধরে ধরে হত্যা করেছেন গুম করেছেন, ক্রসফায়ার দিয়েছেন। যার চরম প্রকাশ পেয়েছে গত জুলাই অর্থাৎ জুলাই, আগস্ট মাসেও তিনি গণহত্যা করেছেন।
রিজভী বলেন, আজকে জনগণের মধ্যে মানুষের মধ্যে শুধু শঙ্কা নয় আতঙ্ক এই ধরনের জল্লাদের মনোবৃত্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন শেখ হাসিনা। যে প্রধানমন্ত্রীত্ব করার পেছনে জনগণের কোনো সমর্থন ছিল না। জনগণের সাথে ভোট নিয়ে প্রহসন করেছেন, ভোটারদের তিনি ভোটকেন্দ্রে আসতে দেননি। পুলিশ ছাত্রলীগ, যুবলীগকে দিয়ে গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে তিনি ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছেন। উনি জানতেন একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি ভোট পাবেন না। কিন্তু তিনি ভোট আয়োজন করতেন তার ভোট ছিল এমন ভোটের দিন ভোট হবে আওয়ামী লীগের লোকজন লাইনে দাঁড়াবে সকাল আটটায় যাদের লাইনে দেখা গেছে দুপুরে এবং বিকেলেও তাদের দেখা গিয়েছে। এভাবে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তার বাগানে তৈরি করা নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিত আওয়ামী লীগ এতগুলো সিটে জয়লাভ করেছে এবং তার তল্পিবাহক অপর দলগুলো এতগুলো সিটে জয়লাভ করেছে।
আওয়ামী ফেরাউনদের আর বাংলাদেশে স্থান হবে না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আরও বলেন, তারা যদি মনে করে আবার সেই যুগ আসবে আবার জনগণের টাকা হরি লুট করা হবে, আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে ভর্তুকি দেওয়া হবে আর ওই ভর্তুকির টাকা চলে যাবে শেখ হাসিনা এবং শেখ পরিবারের যারা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছেন তাদের পকেটে। সেই টাকা দিয়ে তারা বিদেশে আরাম আয়েশে বসবাস করবে। এই নমরুদের রাজত্ব আর বাংলাদেশে হবে না। আওয়ামী ফেরাউনদের আর বাংলাদেশে স্থান হবে না। তাদের ওই হরি লুটের রাজত্ব আবার কায়েম করার স্বপ্ন আর কখনো পূরণ হবে না।
তিনি আরও বলেন, এক প্রবল ভূমিকম্পের মতো এক আলোড়ন তৈরি করে ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের সমাপ্তি ঘটেছে। এটা এক অদ্ভুত আন্দোলন। ছাত্ররা প্রতিটি আন্দোলনে ভ্যানগার্ড থাকে আন্দোলনের সামনের ভাগে থাকে। এবারের আন্দোলনে প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র হাইস্কুলের ছাত্র মাদ্রাসার ছাত্র ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা অকাতরে তারা জীবন দিয়েছে। কি অদ্ভুত সাহসের ওপর ভর করে তারা নিজের আত্মদান দিয়েছে এই অনন্য শহীদি আত্মদান পৃথিবীতে খুব বিরল।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মিথুন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম,ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভির আহমেদ রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার, যুবদল নেতা জাকির হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
টিএ/এএটি