ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

সব শ্রেণিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ে তুলতে হবে: এটিএম মাসুম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২৪
সব শ্রেণিপেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ে তুলতে হবে: এটিএম মাসুম

চাঁদপুর: জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, দেশকে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাখতে চাই এবং আমাদের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। সব শ্রেণিপেশা ও ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দেশ গড়ে তুলতে হবে।

এখানে বিভাজনের রাজনীতি জনগণ ও দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, যারা এর আগে এ দেশ শাসন করেছেন, আজ আমরা ৫৩ বছর পার করছি স্বাধীনতার পরে, কোনো রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের লোকেরা, আমাদের সমাজের যারা বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা রাজনৈতিক নেতা আছেন, কবি ও সাহিত্যিক আছেন, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এ দেশকে মর্যাদার সঙ্গে পরিচালনার জন্য তারা উদ্যোগ নেননি।

বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর শহরের হাজী মহসীন রোডের রসুইঘর কমিউনিটি সেন্টারে জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর জেলা শাখার আয়োজনে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্বজনদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, বিগত শাসনামলে যারা ছিলেন, তারা দেশের লোকদের বিভক্ত করে দেশের শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যে কারণে আমাদের এবং দেশকে গভীর সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। যারা এদেশকে স্বাধীন করেছেন বলে বড় বড় গলায় কথা বলেন, তারাই এদেশকে হুমকির সম্মুখীন করেছেন। দেশের জনগণকে বিভক্ত করে দিয়েছেন। দেশে এমন এক রাজনীতি চালু করেছেন, যে রাজনীতির ফলাফল হচ্ছে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া। তারা সব সময় দেশকে দাঙ্গা হাঙ্গামার মধ্যে রেখেছেন, এর কারণ হচ্ছে এমন পরিস্থিতি থাকলে যারা এদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় এবং দেশ দখল করতে চায়, তাদের লাভ হবে। এসব কারণেই রাজনৈতিক নেতা এবং সুশীল সমাজ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কোনো ভূমিকা রাখেননি।

এ নেতা বলেন, আজ আপনারা দেশের যে কোনো প্রান্তে যাবেন, সেখানেই অগণিত শহীদের কবর দেখতে পাবেন। পুরো বাংলাদেশ মূলত শহীদদের রক্তে রঞ্জিত। ৪৭ সালের আগে ও পরে, ১৯৭১ সালের আগে ও পরে এবং সর্বশেষ ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশ রক্ষার জন্য, দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য, মানুষকে শান্তিতে, শৃঙ্খলায় ও নিরাপদে রাখার জন্য যারা ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের এ অপশক্তি শান্তিতে থাকতে দেয়নি। এ চিত্রই দেখতে পাই আমাদের অতীত ইতিহাস ঘাটলে।

এটিএম মাসুম বলেন, দেশ টিকিয়ে রাখতে হলে দেশের প্রতিরক্ষা ও অধিকাংশ জনগণের আদর্শের লালন পালন শক্তিশালীভাবে করতে হয়। কিন্তু যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা এ দুটোর ওপরই আঘাত হেনেছেন। বার বার আমাদের প্রতিরক্ষা শক্তিকে দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে আমাদের রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো পা দিয়েছে। আর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কম-বেশি সবাই জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে কেউ সরবে এবং কেই নিরবে জড়িত ছিলেন। যার কারণে বাংলাদেশ এখনো একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে তার আপন সত্ত্বা নিয়ে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসন অর্জন করতে পারেনি।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা এটা দাবি করেন, ‘আমরাই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছি এবং স্বাধীনতা এনেছি, আমরাই এদেশের জন্য সবকিছু করেছি। ’ কিন্তু ইতিহাস বলছে, তারা যা বলেছে, তাদের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।

বিগত সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা যদি এখনো ক্ষমতায় থাকতেন, তাহলে দেশের লাখ লাখ মানুষ এখনো খুন হতো। প্রতিটি গ্রামগঞ্জে পাড়া মহল্লায় লাশ আর লাশ আমরা দেখতে পেতাম। আওয়ামী লীগের শাসনামলগুলো দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, তারা দেশকে ধ্বংস করেছেন, দেশের রাজনীতি, বিচার ব্যবস্থা, মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আর চোরদের ডাকাত বানিয়ে ডাকাতের খনি তৈরি করেছেন। বিগত ১৫ বছরে তারা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন।

চাঁদপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুর রহিম পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদুল ইসলাম বুলবুলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক মাওলানা লিয়াকত আলী ভূঁইয়া।

আরও বক্তব্য দেন-জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর জেলার নবনির্বাচিত আমির মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজী, সহ-সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া, অধ্যাপক মো. আবুল হোসাইন, শহর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মো. শাহাজাহন খান, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. নাছির উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি যুবাইর ইসলাম আসিফ, চাঁদপুর শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ফারুক হোসাইন ও জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. মহররম আলী।

শহীদ পরিবারের পক্ষে বক্তব্য দেন শহীদ সামিউ নুরের বাবা আমানুল্লাহ চৌধুরী, শহীদ সিয়াম সরদারের ভাই শরীফ সরদার ও শহীদ আব্দুল্লার বোন আখি আক্তার।

মতবিনিময় শেষে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১১ শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে নগদ দুই লাখ করে মোট ২২ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।