হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে ২০২৩ সালে বিএনপির মানববন্ধনে হামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের আড়াই শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে হবিগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মেরাজ আহমেদ সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
এতে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়রসহ ৭৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২০০ জনকে আসামি করা হয়।
২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দুই হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে হামলা হয়। যেখানে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি মো. আবু জাহির এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল মনসুর চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের সহযোগিতায় হামলা চালানো হয় বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির জানান, থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মফিজুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করবেন।
এতে নাম উল্লেখ করা আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি মো. আবু জাহির, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর চৌধুরী, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়, শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. সালেক মিয়া, পিটিআই রোডের বাসিন্দা জাভেদ আলী, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, সদর উপজেলার রিচি গ্রামের আলোচিত ওয়াসিম উদ্দিন খান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রহমান রবিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার চানপুর গ্রামের নছিব আলীর ছেলে আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা শাহ জয়নাল আবেদীন রাসেল, হবিগঞ্জ শহরে অনন্তপুর এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে তানভীর আহমেদ, নবীগঞ্জ উপজেলার সাতাইহাল গ্রামের আহিদ উল্যার ছেলে তোয়াব উল্লা, হবিগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ শফিক, বানিয়াচং উপজেলার আদর্শবাজার এলাকার আলী হোসেনের তকবির হোসেন, হবিগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক দলিল লিখক তাজুল ইসলাম, ইনাতাবাদ এলাকার মৃত করিম উদ্দিনের ছেলে মো. নূর উদ্দিন, হবিগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মিল্টন মিয়া, হবিগঞ্জ শহরের খাদ্যগুদাম রোড এলাকার মৃত মোস্তফা খানের ছেলে সোহেল খান, পইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শাহেব আলী, বাণিজ্যিক এলাকার মৃত শাহাব উদ্দিন আহমেদের ছেলে জিয়া উদ্দিন আহমেদ, হবিগঞ্জ শহরে চৌধুরীবাজার এলাকার জনি রায় ও চুনারুঘাট উপজেলা যুবলীগ নেতা আমীর আলী।
এছাড়াও আসামি হয়েছেন হবিগঞ্জ শহরে মাছুলিয়া এলাকার মৃত সুরুজ আলীর ছেলে ছন্দু মিয়া, ইনাতাবাদ এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে হাফিজুর রহমান, চুনারুঘাট উপজেলার মানিকভান্ডার গ্রামের মৃত নবজাত উল্লার ছেলে আশ্বব উল্লা, জঙ্গলবহুলা এলাকার মিলু রায়ের ছেলে সুজিত রায়, একই এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে আব্দুল মালেক, চৌধুরীবাজার এলাকার গাড়িচালক লতিফ মিয়ার ছেলে লাভলু মিয়া, হবিগঞ্জ শহরের নাতিরাবাদ এলাকার সফর আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা আলমগীর মিয়া, একই এলাকার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে যুবলীগ নেতা সুজন মিয়া, হবিগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শোভন তালুকদার, চৌধুরীবাজার এলাকার আলী আমজাদ চৌধুরীর ছেলে শুভ চৌধুরী, উমেদনগর এলাকার সঞ্জব আলীর ছেলে কৃষক লীগ নেতা কাশেম মিয়া, হরিপুর এলাকার হাজী ফারুক মিয়ার ছেলে মো. জয়নাল মিয়া, পিটিআই রোড এলাকার আকবর আলীর ছেলে খলিলুর রহমান, মাহমুদাবাদ এলাকার হুমায়ুন কবীর, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর মিয়া, বদিউজ্জামান সড়ক এলাকার যুবলীগ নেতা বিশ্বজিৎ আচার্য্য, নারায়ণপুর এলাকার আইনজীবী জ্যোতিষ গোপ, বড়বহুলা পশ্চিম হাটির নূর আলীর ছেলে শেখ আহাদ, শায়েস্তানগর এলাকার মৃত ইউনুস মিয়ার ছেলে এমজিএম সেলিম, দানিয়ালপুর এলাকার রাজন কুড়ি, বহুলা গ্রামের নিম্বর আলীর ছেলে আহাম্মদ আলী, মোহনপুর এলাকার ফুল মিয়ার ছেলে আলোচিত মাটি ব্যবসায়ী আলমগীর তালুকদার, অনন্তপুর এলাকার মৃত আদম আলীর ছেলে শান্তু মিয়া, আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার নবীনগর এলাকার মৃত আব্দুর রউফের ছেলে মো. সেলিম মিয়া, হবিগঞ্জ শহরে পুরাতন হাসপাতাল সড়কের তাজুল ইসলামের ছেলে ফরহাদ আহমেদ, গোসাইপুর এলাকার শাহ গোলাম আহমেদের ছেলে শাহ গোলাম জিলানী, বানিয়াচং উপজেলার গুণই মদনমুরত গ্রামের অনুজ দাসের ছেলে কল্লোল দাস, একই গ্রামের মৃত মহিব উল্যার ছেলে জমির আলী, হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল মনসুর চৌধুরী, উমেদনগর পূর্ব এলাকার কবির মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়া, পুরান মুন্সেফী এলাকার বাসিন্দা শফিকুল আলম চৌধুরী, কামড়াপুর এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে মো. রাকিব আহমেদ।
আরও আসামি হয়েছেন চুনারুঘাট উপজেলার বাসুল্লা গ্রামের হুমায়ুন রশিদ ওরফে অরুণ মিয়ার ছেলে আবু সাইদ, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান, মোহনপুর এলাকার আব্দুল মতিনের ছেলে জসিম উদ্দিন, বড়বহুলা গ্রামের বাসিন্দা এমদাদুর রহমান সোহেল, কোর্ট স্টেশন এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মস্তোফা কামাল সংগ্রাম, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনজীবী সামছুল ইসলাম, হবিগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি শ্যামল কান্তি রায়, মাছুলিয়া এলাকার আব্দুল হেকিমের ছেলে নুরুজ্জামান, নবীগঞ্জ উপজেলার বাগাউড়া গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে আক্তার হোসেন ছোবা, চুনারুঘাট উপজেলার উড়ালপুর গ্রামের মৃত মজিবুল হকের ছেলে আবুল কালাম, একই গ্রামের আব্দুল মন্নান, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার এড়ালিয়া গ্রামের মৃত মনসব আলীর ছেলে আব্দুল খালেক, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম সোহেল, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মৃত হাজী রইছ উল্যার ছেলে আব্দুল মান্নান, একই উপজেলার দীঘলবাক গ্রামের মধু মিয়ার ছেলে আব্দুল কাদির, শ্যামলী এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে ইদু মিয়া, কামড়াপুর এলাকার মৃত সফর আলীর ছেলে সেলিম মিয়া, রিচি গ্রামের নায়েব আলীর ছেলে কাউছার মিয়া, রাজনগর এলাকার হাজী সিরাজুল ইসলামের ছেলে তৈয়বুর রহমান ও বানিয়াচং উপজেলার হিয়ালা গ্রামের ছুরত আলীর ছেলে ছনু মিয়া।
আসামিদের মধ্যে মো. আবু জাহির, আলমগীর চৌধুরী, মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, নূর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আতাউর রহমান সেলিম ও শঙ্খ শুভ্র রায় কারাগারে এবং বাকি আসামিদের অধিকাংশ হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলায় পলাতক।
ওসি আলমগীর কবীর বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। আর যারা কারাগারে রয়েছেন তাদের নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
এইচএ/