ঢাকা: কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তুলেছে দলটির উপজেলা শাখা। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে তারা বলেছে, এনসিপিতে ভিড়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের লোকেরা আগের মতো বিএনপির নেতা-কর্মীদের জুলুম-নির্যাতন করছে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা মুজিবুল হক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের নির্দেশে মুরাদনগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এখন এনসিপিরূপে আমাদের নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও বিএনপির বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা মুজিবুল হক। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটি করা হয়। মূলত সেই কমিটিতে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে আসিফ মাহমুদের আপন চাচাতো ভাইকে আহ্বায়ক করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুমিল্লার এসপি পরিবর্তন করে তার মদদপুষ্ট এসপি নিয়োগ দেন। নতুন এসপি এসেই মুরাদনগর ও বাঙ্গরা খানার ওসি পরিবর্তন করেন। মুরাদনগরের বর্তমান ওসি ঢাকায় ডিবিতে কর্মরত ছিলেন এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের ঘনিষ্ঠ সহচর গোলাম কিবরিয়াকে দলে ভিড়িয়ে এবং গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে মুরাদনগরের আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছেন। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান মেম্বার ও জুলুম নির্যাতনকারী পালিয়ে যাওয়া নেতাদের বাড়িতে ফিরিয়ে এনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছেন। আওয়ামী লীগের ন্যায় পুলিশের সহযোগিতায় মুরাদনগরে জুলুম নির্যাতন শুরু করেছেন। উপদেষ্টার লোকজন সংখ্যায় খুবই নগণ্য হলেও এখন পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাদের প্রধান ভরসা। তারা মুরাদনগরে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘুমাতে দেবে না।
বিএনপির ওই লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পুলিশ মুরাদনগরের ছয় লক্ষ মানুষকে উপেক্ষা করে গুটি কয়েক ছাত্রলীগ থেকে আসা এনসিপি কর্মীদের ঢাল হয়ে ঘুষ-চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। তাদের কথামতো পুলিশ বিএনপি ও আপামর জনতাকে নানাভাবে নির্যাতন করছে। মুরাদনগর যেন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তারা যেন শপথই করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ পুলিশ ভাই ভাই ভিন্নমতের ঠাঁই নাই।
এতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগের নেতারা এনসিপিতে যোগ দিচ্ছে এবং উপদেষ্টা আসিফের সঙ্গে মিশে পুলিশের সহযোগিতায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর পূর্বের ন্যায় জুলুম নির্যাতন শুরু করেছে।
লিখিত বক্তব্যে মুজিবুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের মতো নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি এবং চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় হয়রানি করছেন আওয়ামী লীগের গোলাম কিবরিয়া ও উপদেষ্টার চাচাতো ভাই ওবায়েদ উল্লাহ। প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে মুরাদনগরের সাধারণ জনগণ ও বিএনপির পক্ষ থেকে আবেদন, আমাদের পুলিশের ফ্যাসিবাদী আচরণ থেকে রক্ষা করুন। আমরা আমাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।
সংবা সম্মেলনে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ এবং বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৫
আরকেআর/এইচএ/