ঢাকা: প্রস্তাব অনুযায়ী সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করার পর তা শক্তিশালী করার জন্যও আলাদা প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব প্রস্তাব দেন।
নির্বাচন কশিনকে অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালীকরণ এবং গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশসহ (আরপিও) অন্যান্য নির্বাচনী বিধি-বিধান সময়োপযোগী ও যৌক্তিকীকরণের জন্য বেশ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া।
এগুলোর মধ্যে আরপিও’র সংজ্ঞায় ‘ল এনফোর্সিং এজেন্সি’ হিসেবে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে ‘ডিফেন্স সার্ভিস অব বাংলাদেশ’ কে পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং আরপিও’র আর্টিকেল ২৮ (৪) (ডি) এর সঙ্গে (ই) যোগ করতে হবে। যেখানে ভোটগ্রহণের আগে বিভিন্ন বুথে খালি বাক্স সরবরাহের পর অবশিষ্ট শূন্য ব্যালট বাক্সসমূহ নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে; যাতে প্রার্থী, এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের কাছে দৃশ্যমান হয়।
আরপিও’র ২৮ (৫) শেষাংশ সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ভোট চলাকালে ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে বাক্সগুলো সংশ্লিষ্ট বুথেই রাখতে হবে যাতে সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের কাছে দৃশ্যমান হয়।
‘আরপিও’র আর্টিকেল ৩৬ (৪ ) (এ) ওপেন শব্দের পর অনলি শব্দ যোগ’ করার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ভোট শেষে ব্যালট গণনার জন্য কেবলমাত্র ভোটগ্রহণে ব্যবহৃত ব্যালট বাক্স সমূহ খুলতে হবে এবং স্বাক্ষরিত ফলাফল শিট পোলিং এজেন্টকে হস্তান্তর না করে প্রিসাইডিং অফিসাররা ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করতে পারবেন না- এই অংশটি ৩৬ (১১) এরপর যোগ করতে হবে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় গঠন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণের উপরও জোর দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
আরও পড়ুন: সবার মতৈক্যের ভিত্তিতে নতুন ইসি চায় বিএনপি
বিএনপি প্রধান বলেন, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপক্ষ, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রিভাইজিং অথরিটিসহ নির্বাচন কাজে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পযর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণ করে তাদের চিহ্নিত করে প্রত্যাহারেরও প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া।
প্রেষণে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকাশ্য রাজনৈতিক মতাবলম্বী নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার প্রস্তাব দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ও পরবর্তী সময় বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা অর্পিত প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেত এসে দলীয় মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন তাদেরও ভবিষ্যত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে হবে।
‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে,’ এমন প্রস্তাবও দেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার প্রাক্কালে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রাশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে।
এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্বিন্যাস, নির্বাচনে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণ, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগেরও প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া।
সাংবাদ সম্মেলনে ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল অলি আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) টিএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গাণি, এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমদু চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ব্যারিস্টার রফিক উল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মুস্তাহিদুর রহমান, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ প্রমুখ।
এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরাও খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এজেড/এমএ/