ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

নাসিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ইসির

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
নাসিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ইসির ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী।

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী।

বৃহস্পতিবার (০৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান, আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী, ইসলামী আন্দোলনের মুফতি মাসুম বিল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের এজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, এলডিপির কামাল প্রধান ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদাউস।

অনুষ্ঠানে নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলা, প্রার্থীদের অভিযোগ ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন জাবেদ আলী।

রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কেউ ব্যালট নিয়ে যাবে, আর সেখানে তিনি অক্ষত থাকবেন, তা হবেনা। আমি আমার দায়িত্ব সম্পূর্ণ পালন করবো। নির্বাচনে ৫ হাজার পুলিশ ও র‌্যাব থাকবে। কথা দিচ্ছি নির্বাচনে কোনো অঘটন ঘটতে দেবনা।  

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারিফুজ্জামান জানান, আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি যে প্রতীক বরাদ্দের পর এখন পর্যন্ত সব মেয়র প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলছেন। আশা করি সব কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব ও কাজের ব্যাপারে সচেতন থাকবেন এবং প্রার্থীরা সহযোগিতা করবেন।  

নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী জানান, সবার বক্তব্য শুনেছি। সব অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখবো। সবাইকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আর তাছাড়া প্রতি কেন্দ্রে আপনাদের লোক থাকবে, মিডিয়া থাকবে। অনেকে বলেছেন, আমরা আগে বিতর্কিত কাজ করেছি, যেন যাবার সময় সেই বিতর্কের অবসান করি। আমি বলতে চাই প্রথম দিন থেকেই স্বচ্ছ ছিলাম এবং যেমন ছিলাম শেষদিন পর্যন্ত তেমন থাকবো। কেউ বলতে পারবে না আমরা কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করেছি। সংবিধান অনুযায়ী কাজ করবো।

তিনি বলেন, যদি কেউ ভোটকেন্দ্রে আসতে ভয় পান তাহলে আপনারা অবশ্যই প্রশাসনের সহায়তা নিবেন। প্রশাসনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে।

আইভী বলেন, ২০১১ সালে কর্মীদের আরো বেশি নির্যাতন করা হয়েছিল, প্রার্থীদের দায়িত্ব মানুষকে অভয় দিয়ে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। জাতীয় নির্বাচনের মতো একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে ভোটারদের মন জয় করতে কাজ করা উচিত।

তিনি বলেন, আমার কর্মীরা পোস্টার ছেড়ার মতো নয়। নির্বাচন বলেই আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলবো, তা ঠিক নয়। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত, এরপর আমাদের এ শহরেই থাকতে হবে।

আইভী আরও বলেন, লাখ লাখ মানুষই আমার শক্তি, আমি কোনো বিশেষ সুবিধা নেই না, আর নিবও না। আমি অনেক চাপের মুখে থেকে নির্বাচন করছি। জনরায়ে নিশ্চই বিজয়ী হবো।


সাখাওয়াত বলেন, সারাদেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে এই নির্বাচন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেশের মানুষ অংশ নেয়নি, তাই সবার কাছে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হবে। আগের নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। অনেক স্থানে ভোট ছাড়াই অনেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আর তাই আবার মানুষ ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। এই নির্বাচনে সরকারের ক্ষমতার কোনো পরিবর্তন হবেনা, এ সরকারের আগের কোনো নির্বাচন মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। আর তাই নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের মনে জমে থাকা দুর্নাম গুছিয়ে মানুষকে ভোট দিতে যাবার পরিবেশ তৈরি করে দিবেন বলে আমি আশা করি।

তিনি আরও বলেন, এখনো নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েছে বলে মনে করিনা। বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের কারণে নারায়ণগঞ্জ আলোচিত। কিন্তু এখনো এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি, এমনকি অবৈধ অস্ত্র ও উদ্ধার করা হয়নি। নির্বাচনের ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং সেনা মোতায়নের প্রত্যাশা করি। কারণ নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে।

ইসমাইল বলেন, আমরা যেখানেই যাই সেখানেই দেখি ভোটারদের মধ্যে একটা আতংক দেখি। সবাই আমাদের জিজ্ঞাসা করেন ভাই ভোট দিতে পারবো তো, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তো। একজন পুলিশ অফিসার আমি নাম বলবো না, উনি বলেছেন, নৌকার প্রতীক যিনি পেয়েছেন তাকে যেভাবেই হোক জয়ী করা হবে। আমি আশা করবো আগামীতে এমন বক্তব্য আর কেউ দেবেন না।

বহিস্কার হওয়া এলডিপির প্রার্থী কামাল প্রধান বলেন, আমি মনে করিনা এখানে সেনা মোতায়নের প্রয়োজন আছে। প্রতীক পাওয়ার আগে আইভী শহরে ২ ঘণ্টা সড়ক বন্ধ করে মিছিল করেছে, এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনের মতো যেন এখানে প্রভাব বিস্তার না হয়। আমরা অনেক স্থানে দেখেছি ভোটার না থাকলেও ৮০ ভাগ ভোট পড়ে যায়। এখানে যেন তা না হয়। আমি সেনাবাহিনীর জন্য আবেদন জানাচ্ছি কারণ দিন দিন ভোটারদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে, আর মানুষের সেনাবাহিনীর উপর আস্থা আছে।

মুফতি এজহারুল হক বলেন, সবাই যেন ভোট দিতে পারে সে পরিবেশ আমরা চাই। কারণ অনেক সময় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা দেখতে পান তাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। এ অবস্থা যেন না হয় আমি সেদিকে নজর দিতে অনুরোধ করি।

রাশেদ ফেরদৌস বলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তা চাই। বাইরে থেকে জিজ্ঞাসা করলে অনেক সময় শোনা যায় ভিতরে ভালো ভোট হচ্ছে এমন যেন না হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬ 
এসএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।