ঢাকা: নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার দেওয়া ১৩ দফার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করবে বিএনপি। রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যাবেন বঙ্গভবনে।
জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া ১৩ দফার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো। যে বিষয়গুলো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে, সে বিষয়গুলো নিয়েই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলবেন খালেদা জিয়া। ’
দলীয় সূত্রমতে, বিএনপির হাইকমান্ড মনে করেন নতুন ইসি গঠনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করে না। তারপরও রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে ইসি গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব নিবন্ধিত দলগুলোকে ডেকে কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। আদতে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের লোক দিয়েই গঠন করা হয় সার্চ কমিটি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।
এ বিষয়টি মাথায় রেখেই গতানুগতিক আলোচনায় না গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরই প্রেক্ষিতে দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব তৈরি করেন তিনি।
দফাগুলোর মধ্যে ছিল- ১) ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন, ২) প্রধান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনারদের খুঁজে বের করতে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন, ৩) বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর সময়ে সরকারের কোনো লাভজনক পদে আসীন হননি, ৪) বাছাই কমিটির অন্য সদস্যরা হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, ৫) বাছাই কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য দুই জন ও চারজন নির্বাচন কমিশনারের জন্য ৮ জনের নামের তালিকা দেবেন। এই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশন ও চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন, ৬) নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের ভিত্তিতে ইসি গঠন, ৭) কমিশনে অন্তত একজন প্রবীণ মহিলা কমিশনার রাখা, ৮) নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা প্রদানের বিধান কমিশনের আরপিওতে সংযোজন, ৯) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো ২ জন করে ব্যক্তির নাম বাছাই কমিটির কাছে প্রস্তাব করবে, ১০) বাছাই কমিটিই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, ১১) কেউ যদি দায়িত্ব পালনে অসম্মতি প্রকাশ করে তাহলে একই প্রক্রিয়ায় পুনরায় কমিশনার নিয়োগ, ১২) প্রধান কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের হতে হবে দলনিরপেক্ষ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৎ ব্যক্তি এবং ১৩) নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গঠন।
প্রস্তাব তৈরি হওয়ার পর ১৮ নভেম্বর রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জানাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এই ১৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
দলটির নেতারা মনে করছেন, ইসি গঠন নিয়ে বিগত দিনের অভিজ্ঞতা ভালো না হলেও এবার ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এবার যে কমিশন গঠন হবে তার অধীনেই হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে সরকারের উপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ থাকবে। আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্ব শর্ত নিরপেক্ষ ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন-যে কথাটি খালেদা জিয়ার দেওয়া ১৩ দফা প্রস্তাবে বার বার বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার সময় ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য কয়েকটি নাম প্রস্তাব করতে পারেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে বিষয়টি এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছে না বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, সার্চ কমিটি ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে নামের তালিকা দেবে বিএনপি তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শনিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে নাম চূড়ান্ত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এজেড/আরআই