ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে সর্বত্র চাপা উৎকণ্ঠা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮
৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে সর্বত্র চাপা উৎকণ্ঠা! ফাইল ছবি

ঢাকা: কী হবে ৮ ফেব্রুয়ারিতে? রাজনৈতিক অঙ্গনের এ প্রশ্ন গণপরিবহন, চায়ের আড্ডা, অফিস-আদালতে আপামর জনসাধারণের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। জেলে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া! তার কারাগারে যাওয়াকে কেন্দ্র করে আবার কি ফিরে আসবে নাশকতা-নৈরাজ্যের ভয়াল রাজনীতি! এমন উৎকণ্ঠায় ছেয়ে গেছে গোটা দেশ।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান দুটি দলের নেতাদের পাল্টা-পাল্টি উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা ও আশঙ্কা বিরাজ করছে।

সর্বত্র চলছে ৮ ফেব্রুয়ারির গুঞ্জন!

৮ ফেব্রুয়ারিতে অঘোষিত হরতাল পালিত হবে বলে মনে করছেন গণপরিবহনের শ্রমিকরা। দেশে কোনো ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলে পরিবহন সেক্টরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য সরকারের কাছে পরিবহন সেক্টরের নিরাপত্তা দাবি করেন তারা।

ল্যামস পরিবহনের চালক নেয়ামুর বলেন, কোনো কোনো মালিক বলছে ওই দিন বেশি গাড়ি বের করা যাবে না। আবার কেউ কেউ গাড়ি বের করারও তাড়া দিচ্ছে। ওই দিন যদি গণ্ডগোল হয়, বাসের উপরই বেশি ঝামেলা হবে। গাড়ি বের করতে তাই ভয় পাচ্ছি। তবে সরকার ও মালিকরা নিরাপত্তা দিলে গাড়ি বের করব।

খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাদের হুমকির জবাবে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক সভায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে পরিবহন সেক্টরের ওপর নাশকতামূলক ঘটনা ঘটে। ৮ তারিখ কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে আমরাও এবার ছেড়ে দেব না। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা নাশকতা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে।

সেদিন যদি হরতালও হয় তবুও গণপরিবহন চলাচল করবে বলে জানান মালিক সমিতির মহাসচিব। নিরাপত্তার জন্য শ্রমিকদের গণপরিবহনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও দুই বালতি বালু রাখার নির্দেশও দেন তিনি।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিত অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা বেশ পুরনো রীতি। এবং সেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ জনতা। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতির আগাম উত্তেজনায় তাদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিরপুরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির আভাস পাচ্ছি। আমরা চাই, দেশ শান্তিপূর্ণ থাকুক। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে যে নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি ছিলো, এমন পরিবেশ আবার হোক চাই না।

প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধামকি দেওয়া বক্তব্যে সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষক মোকসেদুর রহমান।

তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে টিভিতে রায় নিয়ে রাজনীতিকবিদদের নানা কথা শুনছি। দুই দলের নেতারাই ৮ ফেব্রুয়ারি কী হবে- তা নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। অতীত অভিজ্ঞতার কারণে আমরা কিছুটা শঙ্কিত। এরপরও চাই সবকিছু যেন শান্তিপূর্ণ থাকে।

খালেদা জিয়ার মামলার চূড়ান্ত রায়কে কেন্দ্র করে একদিকে পুলিশের গ্রেফতার তৎপরতা অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের আন্দোলনের হুমকি-ধামকি দেশে গুমোট পরিবেশের সৃষ্টি করেছে বলে জানান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, পুরো দেশবাসীর মাঝে ৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। সেদিন কী হবে জানি না, তবে নির্ব‍াচনকে ঘিরে যেকোনো দিন দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে যাচ্ছে। যেখানে ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার লড়াই, সেখানে আজ হোক কাল হোক অস্থিরতা আসবেই।

সুজন সম্পাদক আরও বলেন, আমার মতে, ওই দিন অঘোষিত হরতাল চলবে। কারণ, ৮ ফেব্রুয়ারি দুই দলের ক্ষমতায় টিকে থাকা ও যাওয়ার লড়াই। মামলার রায় বিএনপির বিপক্ষে গেলে সংকট সৃষ্টি হবেই। আর মাঝখানে সাধারণ মানুষ উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাবে।

খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে ৮ ফেব্রুয়ারি নাশকতার আশঙ্কা করছে পুলিশও। ওই দিন যেন কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটতে না পারে, সে জন্য পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৮
এমসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।