ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘ইসি নিয়োগ আইন নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
‘ইসি নিয়োগ আইন নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস’

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগ আইন ২০২২ নতুন মোড়কে পুরনো জিনিস বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ২০২২-এর ওপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, আমরা ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছি এবং আমাদের বক্তব্যের লিখিত কপি রাষ্ট্রপতি ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দিয়েছি।
 
তিনি বলেন, সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বলা আছে। এখানে অনুচ্ছেদ ১১৮(১)-এ উল্লেখ আছে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন। ’

আমরা প্রস্তাব করেছিলাম আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য উপরোক্ত সংবিধানের বিধান অনুসারে একটি আইন করা দরকার। আইনের উদ্দেশ্য হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন ও সে অনুযায়ী যোগ্য ও মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করার মাপকাঠি ও পন্থা সুনির্দিষ্ট করা। আমরা যোগ্যতার মাপকাঠী বলতে দায়িত্ব পালনের দক্ষতাকে বুঝিয়েছি। মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলতে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে নিরপেক্ষ ব্যক্তি নির্বাচনের কথা বুঝিয়েছিলাম।  

আমরা আরও উল্লেখ করেছিলাম আমাদের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হবে। ’ কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়টি খুব একটা কার্যকর হতে দেখা যায় না। ফলে কীভাবে এটি প্রযোজ্য হবে বা কার্যকর করা যাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকা আবশ্যক।  

আমাদের প্রস্তাব ছিল সে কারণে এ বিষয়েও একটি আইন থাকা প্রয়োজন। যে আইনে নির্বাচনকালীন নির্বাচনী কাজে কোনো কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনাবলী পালন না করলে নির্বাচন কমিশন নিজেই যেন প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে এ রকম একটি আইন করা দরকার।  

আমরা যেটা বলতে চেয়েছিলাম তা হল যথাপযুক্ত নির্বাচন কমিশন গঠন করলেই তা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ/গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নির্বাচন কমিশনকে কর্তব্য সম্পাদনের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও সহযোগিতা দেওয়া হয়।   
বর্তমান যে আইনটি পাস হয়েছে তাতে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন গঠন বিষটি বিবেচনা করা হয়েছে, তাদের যথাযথ ক্ষমতার বিষয়টি বিদ্যমান আইনের আওতায় আনা হয়নি। আমরা মনে করি বিষয়টিও বিদ্যমান আইন বা আলাদা একটি আইন হিসেবে আনা দরকার ছিল।  

সম্প্রতি প্রণীত আইনে একটি সার্চ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সে বিষয়ে সুনিদিষ্ট রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সার্চ কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়নি।  

সার্চ কমিটির মাধ্যমে মনোনীত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয় সম্বলিত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থায় প্রকাশ করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তাছাড়া মাত্র ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে নাম প্রস্তাব করার বিধানটি বেশি তাড়াহুড়ো বলে মনে হয়, যা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। ফলে সার্চ কমিটির কাজের স্বচ্ছতা থাকছে না।

আমরা মনে করি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়ার আগে সার্চ কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত নামসমূহ জনগণের সামনে প্রকাশ করার প্রয়োজন ও জনগণের মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা উচিত। জনগণের মতামত বিবেচনায় এনে তালিকা সংশোধনের সুযোগ রাখার ব্যবস্থা রাখলে বাছাইয়ের সার্বিক বিষয়টি স্বচ্ছতা পেত।  

সার্চ কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তালিকাটি প্রকাশ করার বিধান না থাকার ফলে শেষ পর্যন্ত সেই তালিকার সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে কিনা সেই বিষয়ে সংশয় থাকে। কারণ সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ দফার কারণে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের প্রধান্য দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার দলীয় বিবেচনায় যেকোনো ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গকে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে মনোনীত করার সুযোগ থাকবে।  

বর্তমান আইনটিতে যাতে উপরোক্ত সুযোগ না থাকে সেজন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮-এর ৩ ধারার পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশন নিয়োগদানের বিষয়টিও সরাসরি রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত করা প্রয়োজন ছিল বলে মনে করি।  

এ আইন প্রণয়ন করার ফলে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালনের ক্ষমতায়নে আগের তুলনায় কোনো উন্নতি হবে বলে মনে হয় না। আগের মতোই উপরোক্ত বিষয়সমূহ পরোক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে।  

অর্থাৎ নতুন করা আইনটি পুরাতন পদ্ধতিকে একটি আইনগত কাঠামোতে এনে আইন সম্মত করা হচ্ছে। এক কথায় এ আইনটি করার পরেও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগের মতো সংশয় থেকেই যাচ্ছে।  

জাতীয় পার্টি সব সময় চায় অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। কারণ নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রবেশ দ্বার। নির্বাচন সঠিক হলেই দেশে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হবে। জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা বাড়বে। সুশাসনের পরিবেশের উন্নয়ন হবে। সাধারণ মানুষ তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারলে গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ পাবার পথচলা শুরু হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদের ৩ ধারার কারণে রাষ্ট্রপতি মাত্র দুটি নিয়োগ বাদে সব কাজেই পরামর্শ করতে হয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনে নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।  

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিরোধীদলের কাজ হচ্ছে সরকারের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বিরোধীদলের বাইরে কিছুই করার নেই। বর্তমান সংবিধান এক ব্যক্তিকে ক্ষমতা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তাই হবে, যেটুকু বলবেন তার বাইরে সংসদে কিছুই পাস হবে না। তাই আমরা সরকারের সমালোচনা ও গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে বিরোধীদলের দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া সংবিধানের কিছু ধারা একটির সঙ্গে অন্যটি সাংঘর্ষিক। বিরোধীদল হিসেবে আমরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আমাদের দাবি তুলে ধরছি, মানা না মানা সরকারের ব্যাপার।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এসএম আব্দুল মান্নান, ফখরুল ইমাম এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এটিইউ তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, নাজমা আখতার এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, হেনা খান পন্নি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. আমির হোসেন ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, মো. হুমায়ুন খান, আনোয়ার হোসেন তোতা, মাখন সরকার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, মঞ্জুরুল হক, গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তিতাস মোস্তফা, নুরুল হক নুরু, জাকির হোসেন মৃধা, মাহমুদ আলম, সমরেশ মণ্ডল মানিক, ডা. সেলিমা খান, আক্তার দেওয়ান, এসএম সুবহান, কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান টিটু, জেসমিন নূর প্রিয়াংকা, কাজী মামুন, তাসলিমা আকবর রুনা, মিনি খান, মন্টি চৌধুরী, সোলায়মান সামি, শারমিন, হাসনা হেনা, মেহেদী হাসান শিপন, রেজাউল করিম রেজা, আব্দুস সালাম লিটন, এসএম হাশেম।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এসএমএকে/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।