ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আইজিপি-পুলিশ কমিশনারের প্রত্যাহার চান রিজভী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
আইজিপি-পুলিশ কমিশনারের প্রত্যাহার চান রিজভী

ঢাকা: দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে নিয়ে পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম যে মন্তব্য করেছেন তার জন্য তাদের প্রত্যাহার দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রিজভী বলেন, জনগণের করের টাকায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তারা এভাবে দলীয় ক্যাডারদের মতো সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন না।

অবশ্যই তাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

সোমবার (২৮ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

রিজভী বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির বহুমাত্রিক কুৎসিত চক্রান্তের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে বছরজুড়ে স্বাধীনতার নামে এক ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করার যেসব অনুষ্ঠান হয়েছে, সেই সকল অনুষ্ঠানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অপাংক্তেয় ও উপেক্ষিত। আদালতের রায় আর র‌্যাব-পুলিশের ভয়ে সন্ত্রস্ত মুক্তিযোদ্ধারা নীরবেই পার করে দিয়েছেন তাদের জীবনবাজি রেখে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী। জাতির জীবনে বড় নির্মম পরিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উপেক্ষা করে আওয়ামী দলদাস প্রজাতন্ত্রের আইন প্রয়োগকারী বাহিনী এখন জাতিকে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ  রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদ এবং তারই অধস্তন ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধান শফিকুল ইসলাম ভব্যতা-সভ্যতার সকল সীমা ছাড়িয়ে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ শিষ্টাচার বর্জিত অশালীন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তাতে গোটা দেশবাসী হতবাক। আমরা আশা করি, পুলিশের অতিদলবাজ এই দুই কর্মকর্তা তাদের গর্হিত অপরাধের জন্য জাতি কোনো দিন ক্ষমা করবে না।  

তিনি বলেন,পুলিশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে এক্সটেনশন সার্ভিসে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা চরম মাত্রাজ্ঞানহীন আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। যে নোংরা ভাষায় পুলিশ কমিশনার কথা বলেছেন তা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তো দূরের কথা কোনো ভদ্র পরিবারের সন্তানের পক্ষে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতার ঘোষক ও বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা এবং সেক্টর কমান্ডারের সহধর্মিণী খালেদা জিয়া সম্পর্কে পুলিশ কমিশনার যে মন্তব্য করেছেন তাতে তার পিতামাতা যদি বেঁচে থাকেন তাহলে তারাও লজ্জিত ও বিব্রত হবেন। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, খালেদা জিয়ার মতো মহিয়সী নারীকে নিয়ে যারা অসম্মানসূচক বক্তব্য রাখেন তারা আত্মা বিক্রি করা মানুষ।

রিজভী বলেন, শফিকুল ইসলামের চাকরি শেষ হয়ে গিয়েছিল গত বছর। ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর নিয়ম অনুযায়ী শফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষে অবসরোত্তর ছুটি প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে গত প্রায় একদশকে হয়তো গুম, খুন অপহরণে পারদর্শী হয়ে ওঠায় বিনাভোটের সরকার তার সার্ভিস আরো প্রয়োজন মনে করে তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। সেই অতিরিক্ত মেয়াদের একবছর মেয়াদকালও শেষ হয়ে আসছে। ফলে আবারো চুক্তি ভিত্তিক পুনঃনিয়োগ লাভের আশায় শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সুরুচি ও ভদ্রতার সকল সীমানা অতিক্রম করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিবেকবর্জিত বক্তব্য দিয়েছেন।

রিজভী বলেন,রাজারবাগের একই অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজি বেনজির আহমেদও বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে তীব্র্র রোষ নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাষায় দেশের আপামর গণতন্ত্রকামী মানুষকে ধমক দিয়েছেন। তাচ্ছিল্যভরে নানা কটু মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তান আমলে কর্মকর্তারাও এভাবে গণতন্ত্রকামী মানুষকে বাংলা-উর্দু মিলিয়ে ধমক দিতেন। শেখ হাসিনার নির্দেশে গত তেরো বছরে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আলেম-উলামা এবং ভিন্নমতের জনগণের ওপর দফায় দফায় যে গণহত্যা এবং খুন, গুম, জুলুম চালানো হয়েছে তাতে বেনজীর আহমেদের ভূমিকা কি ছিল তা জনগণ ভালো করেই জানে। তিনি প্রকাশ্যে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত মানুষকে গুলি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।  

তিনি আরো বলেন,এক্সটেনশন সার্ভিসে থাকা ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে অশ্রাব্য ভাষায় মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের দোষ হলো সত্য কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারে না’। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিদিন ওবায়দুল কাদের-হাছান মাহমুদ সাহেবরা বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার-অপপ্রচার চালানোর পরও হয়তো পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুল সাহেবের মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ পারছে না তাই আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে হলে পিস্তল-বন্দুক সার্ভিসের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে পুলিশের ‘লিপ  সার্ভিস’ও দেওয়া উচিত।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, তবে ইতিহাস সাক্ষী, যারা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য চূড়ান্ত বিপদের কারণে হয়েছিল, তাদের নাকি মরহুম শেখ মুজিবের ড্রইংরুম পর্যন্তও এক্সেস ছিল। সুতরাং এখনো প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তারা বক্তব্য-মন্তব্যে নিজেদেরকে আওয়ামী লীগারদের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার প্রমাণ করতে চান তারাই আওয়ামী লীগের বিপদের কারণ হয়ে উঠবে।  

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কাবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
এমএইচ/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।