ঢাকা, শনিবার, ০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

যশোরাঞ্চলের নেতাকর্মীতে মুখরিত খুলনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২২
যশোরাঞ্চলের নেতাকর্মীতে মুখরিত খুলনা

যশোর: খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে প্রথম থেকেই যশোরাঞ্চল থেকে ৫০ হাজার লোকসমাগম ঘটানোর টার্গেট নিয়ে ঘোষণা দিয়েই প্রচার-প্রচরণায় মাঠে নেমেছিল যশোর জেলা বিএনপি।

 

বিএনপির দাবি, সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে গত সপ্তাহব্যাপী পুলিশি তল্লাশি-আটক শুরু করে মনোবল ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু করে। এতে নেতাকর্মীরা আরও বেশি চাঙ্গা হয়। ফলে নতুন ফন্দি হিসেবে সমাবেশের তিনদিন আগে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাস-মিনিবাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আসে। এতে বিএনপির বেগ পেতে হলেও আন্দোলনের স্প্রিড বেড়েছে বলে আরও বেশি সংখ্যক কর্মী খুলনায় পৌঁছেছে বলে দাবি নেতাদের।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র মতে, খুলনায় বিএনপির মহাসমাবেশ উপলক্ষে দুইদিন আগে থেকেই যশোরাঞ্চলের নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে খুলনামুখী হয়েছিলেন। তবে, বেশিরভাগ নেতাকর্মী গত বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দিন ও রাতে ট্রেনযোগে খুলনা পৌঁছে যান। এছাড়াও মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িতে নানান কৌশলে খুলনা গেছেন হাজারো নেতাকর্মী।

যশোর সদর উপজেলার বাসিন্দা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম রাকিব নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাতজন ছাত্রদল নেতা বৃহস্পতিবার রাতে যশোরে পৌঁছে একটি আবাসিক হোটেলে রাত যাপন করি। এরপর শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় রেলস্টেশনে যাওয়ার পথে যশোর টিবি ক্লিনিক মোড়ে পুলিশি জেরার সম্মুখীন হই, তবে সবাই শিক্ষিত হওয়ায় বিভিন্ন মিথ্যা কথা বলেই পার পেয়ে স্টেশনে পৌঁছাই। এরপর সকালের ট্রেনে আমরা খুলনা পৌঁছাই। তবে, আগেভাগেই বুকিং করা আবাসিক হোটেল থেকে শুক্রবার দুপুরে ফোন কল করে জানায় আমাদের বুকিং বাতিল করা হয়েছে। এরপর উপায়ন্ত না পেয়ে, বটিয়াঘাটা এলাকায় আত্মীয় বাড়িতে এসে গোসল ও খাওয়া-দাওয়া সেরে সন্ধ্যায় শহরে ফিরি।  

সমাবেশে আসা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীর ভোগান্তির কথা জানিয়ে জি এম রাকিব বলেন, আমার নিজের এলাকা যশোর সদরের নরেন্দ্রপুর বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত। এসব এলাকার অসংখ্য মানুষ এখন খুলনায় অবস্থান করছেন। তবে, তারা তো অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল না। এজন্য অধিকাংশ লোকজনই এক কাপড়েই বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা, রেলস্টেশন ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে কষ্ট করেই সময় পার করে সমাবেশে যোগ দেন। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী থাকার জায়গা না পেয়ে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন অলিগলিতে ছিলেন। সন্ধ্যা নামতেই সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেন।

ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশের মতোই রাতভর পাটি বিছিয়ে শুয়ে থাকার কৌশলটাও সবার জানা ছিল। এছাড়াও সমাবেশের দিন সকালে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের বাধা উপেক্ষা করে আশপাশের জেলার যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মী মোটরসাইকেল বহরে শোডাউন দিয়েই খুলনা পৌঁছায়।

এদিকে শুক্রবার সড়কপথে খুলনা পৌঁছানো একাধিক ছাত্রদল নেতা বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শুক্রবার সকালে শহর ছাত্রদল কয়েকটা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন রুটে মোটরসাইকেলে করে খুলনা রওয়ানা হই। প্রথমে রওয়ানা হওয়া গ্রুপটি ফোন কল করে জানায় মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশি চেকপোস্ট রয়েছে। এসব চেকপোস্টে মোটরসাইকেলের বৈধ লাইসেন্স-যাত্রীর হেলমেট আছে কিনা পরীক্ষার নামে হয়রানি করছে, এরপর সব ঠিক থাকলেও কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন জানতে চেয়ে হয়রানি করছে। এরপর অসংখ্য মোটরসাইকেল যশোর-খুলনা এবং যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এড়িয়ে গ্রামের সড়ক বেছে নেয় এবং এসব অভ্যন্তরীণ সড়ক দিয়ে খুলনা মহানগর ঘেঁষা বিভিন্ন গ্রামে আত্মীয়-স্বজন ও বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া বাড়িতে অবস্থান করেন।

তবে যশোর, বেনাপোল, ঝিকরগাছা, রূপদিয়া ও নওয়াপাড়া স্টেশন থেকে ট্রেনযোগেও নেতাকর্মীরা যাত্রীবেশে আগেভাগেই খুলনা পৌঁছান। সমাবেশের আগের রাত ও সকালেও একইভাবে নেতাকর্মীরা খুলনামুখী ছিলেন।

অপরদিকে, যশোর ও খুলনার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র-লাঠিসোটা হাতে নিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেছেন বলে অভিযোগ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে, অধিকাংশ এলাকায় এ ধরনের বহিরাগত মাস্তানদের বিএনপি পাত্তা দিচ্ছে না বলেও দাবি তাদের।  

যশোর সদরের নরেন্দ্রপুর এলাকার একাধিক বিএনপি ও যুবদল নেতা বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরে শুনছি এখানে নাকি বাধা দেওয়া হবে, তবে এসব বাধা প্রতিহত করতেও আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত ছিলেন। যদিও আওয়ামী 'সন্ত্রাসীরা' দূর থেকে ভয় দেওয়া ছাড়া এ অঞ্চলে মুখোমুখি হয়নি।  

দলীয় নেতাকর্মীরা বলেন, গোটা বৃহত্তর যশোরের লোকসমাগমে কেন্দ্রীয় নেতারাও অবাক হয়েছেন। বিশেষ করে, খুলনা জেলা সংলগ্ন যশোরের অভয়নগর, কেশবপুর, মণিরামপুর থেকেও বিপুল সংখ্যক মানুষ ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও মোটরসাইকেলে খুলনা গেছেন।

এসব নেতাকর্মীদের হাতে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের পাশাপাশি তরিকুল ইসলাম, অনিদ্য ইসলাম অমিতের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড-ব্যানার দেখা গেছে। খুলনায় পৌঁছানোর পরে যশোরের বিভিন্ন ইউনিট একত্রিত হয়ে দলে দলে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যান।

দলীয় নেতারা জানান, মহাসমাবেশ সফল করতে আগেভাগেই মরহুম তরিকুল ইসলাম পত্নী নার্গিস বেগম নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারে নামেন। এছাড়াও তরিকুল পুত্র খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বিভিন্ন উপজেলায় সভা-সমাবেশ করে সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটাতে নেতাকর্মীদের সাহস জুগিয়ে অনুপ্রেরণা দিয়ে প্রচার চালিয়েছেন।

যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, সরকার কত জনবিছিন্ন! একটা রাজনৈতিক দলের বিভাগীয় সমাবেশ করবে সেটা বানচাল করতে নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে আমরা রণকৌশল পরিবর্তন করেছি। টার্গেট মোতাবেক, খুলনায় সমাবেশে যশোরাঞ্চলের মানুষের জনসমাগমের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২২
ইউজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।