ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সংসদে ওবায়দুল কাদের

ভারতের নির্বাচনেও মোদি-মমতা ‘খেলা হবে’ শ্লোগান দিয়েছেন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
ভারতের নির্বাচনেও মোদি-মমতা ‘খেলা হবে’ শ্লোগান দিয়েছেন সংসদে ওবায়দুল কাদের -ফাইল ছবি

ঢাকা: ‘খেলা হবে’ শ্লোগান জনগণ পছন্দ করছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি-মমতা ব্যানার্জি এই শ্লোগান দিয়েছিলেন।

তাতে কী গণতন্ত্র হালকা হয়ে গেছে?

রোববার (৬ নভেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ওবায়দুল কাদের একথা বলেন।

এর আগে জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও বিএনপির হারুনুর রশিদ ওবায়দুল কাদেরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ‘খেলা হবে’ বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, লাফালাফি, বাড়াবাড়ি যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর নামটা পর্যন্ত, শেখ হাসিনার নামটা পর্যন্ত শালিনতার সঙ্গে উচ্চারণ করেন না। বলেন হাসিনা, হাসিনা। অশালিন ভাষা প্রয়োগ করছেন। শেখ হাসিনাকে হাসিনা, হাসিনা সরদারও বলে, ছ্যাংগাতরাও বলে, ছাগলের তৃতীয় বাচ্চাও বলে লন্ডন থেকে। আজকে মুচলেকা দিয়ে আর রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছে, দেশ ছেড়েছে ২০০৮ সালে। নেতা আন্দোলনে, নির্বাচনে খেলা হবে এমনি বলিনি। সংসদ সদস্য ফিরোজ রশিদ সাহেবকে আমি বলতে চাই তাকে জানাতে চাই ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে যে নির্বাচন হলো, যে নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতেছে। সেখানে মুল শ্লোগান ছিল খেলা হবে। কি আমি ভুল বলেছি। সেখানে শুধু মমতা ব্যানার্জি না, নরেন্দ্র মোদিও খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এগুলো বলে বক্তৃতা করেছেন। এটা কোনো হালকা বিষয় না, রাজনীতিতে এই পলিটিক্যাল হিউমার, পশ্চিমবঙ্গে তো কেউ বলেনি এ কথা। আর আমি কালকে (৫ নভেম্বর) বাড্ডায় দেড় দুই লাখ লোকের মধ্যে বক্তৃতা করেছি। সারা মাঠ খেলা হবে বলেছে। তাহলে জনগণও এগুলো অপছন্দ করছে না। আপনি কেন করছেন? আপনার ভালো লাগে না আপনি বলবেন না। আমি বলব এটা একটা পলিটিক্যাল শ্লোগান। পশ্চিমবঙ্গে, ভারতে গণতান্ত্রিক দেশ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী তারা এক্সচেঞ্জ করেছেন এই শব্দটাই বেছে নিয়েছেন, এই শ্লোগানটাই দিয়েছেন। তাতে কি গণতন্ত্র হালকা হয়ে গেছে। জনগণ কী সেটা মনে করে জিজ্ঞেস করুন। জনগণ তো সমস্বরে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা শ্লোগান দিচ্ছে। আমি তো যেহেতু জনগণ পছন্দ করছে। সেই জন্য বলছিলাম, আমি তো মারামারি করতে বলিনি। বলছি যে দুর্নীতিটা করেছেন, ৫ বার চ্যাম্পিয়ন, ভোট চুরির জন্য এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার! ওয়ান ইলেভেন কি এমনি এসেছিল?

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে মাস্টার মাইন্ড তারেক জিয়া। আজকে বলতে চাই এই সংসদে যখন এ ঘটনা নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলেন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা, তখন বেগম জিয়া বলেছিল ওনাকে কে মারতে যাবে? ভ্যানেটি ব্যাগে করে শেখ হাসিনা নাকি গ্রেনেড এনেছে। এসব কথা বললে আপনাদের গায় লাগে কেন? জ্বালা করে কেন? বুকে বড় জ্বালা, অন্তরে জ্বালা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার উচ্চ আদালত মিউজিয়ামে পাঠিয়েছে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রাস্তায় বাড়াবাড়ি, লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা, এ বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধেও খেলা হবে। আর প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা বাড়াবাড়ির জন্য বলেছেন। আমরা ছাড় দিচ্ছি, কিন্তু মনে রাখবেন বাড়াবাড়ি করলে ছেড়ে দেব না, পরিষ্কার কথা। আমরা কি আওয়ামী লীগ কোথাও আপনাদের সঙ্গে মারামারি করতে গেছি। আমরা তো বিএনপির সমাবেশে কোথাও তাদের সঙ্গে মারামারি করতে যাইনি। কেন এসব কথা বলছেন?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পদক বলেন, আপনাদের শাসনামলে আমরা একটা লোকও ঘরে থাকতে পারিনি। ৫ বছরে ৫ সপ্তাহও আমি নিজের ঘরে থাকতে পারিনি। নেতাদের রাস্তায় বেধড়ক পিটুনি দেওয়া হয়েছে। আপনি হারুনুর রশিদ সাহেব, আপনাদের ফখরুল থেকে শুরু করে সব নেতাই ঘরে থাকে। আমাদের নেতারা ঘরে থাকতে পারেনি। রাস্তায় বেধড়ক পিটুনি খেয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। বড় বড় কথা বলবেন না, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন বাড়াবাড়ি করলে, লাফালাফি করলে, তিনি যে কথা বলেছেন আপনাদের আচার আচরণের প্রেক্ষিতে বলেছেন। আপনারা উদ্ধার তো করতে পারেননি। বেগম জিয়া আজ কীভাবে বাসায়? ১৩ বছরে ১৩ মিনিট রাস্তায় দেখিনি। বেগম জিয়াকে শেখ হাসিনা উদারতা দেখিয়েছে, নির্বাহী আদেশে তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছেন মুক্ত করে। তার বয়সের কারণে, স্বাস্থ্যের কারণে মানবিকতা চিন্তা করে শেখ হাসিনাই উদারতা দেখিয়েছেন।

এর আগে জাপার কাজী ফিরোজ রশিদ ‘খেলা হবে’ বক্তব্যের সমালেচনা করে বলেন, খেলা বন্ধ করতে হবে। খেলা হবে, এটা কোনো রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু তো এ ধরনের শব্দ উচ্চারণ করেননি। এই খেলা বন্ধ করতে হবে।

আর জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আপনারা যে খেলা আরম্ভ করেছেন, আমার মনে হয় আমরা রেফারি না হলে এই খেলা বোধহয় আর বন্ধ হবে না। আমি বলতে চাই আপনারা বড় দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি গত ৩২ বছরে অনেক খেলেছেন। ৩২টি বছর ক্ষমতায় থেকে আপনারা অনেক খেলছেন। এবার খেলা বাদ দিয়ে জনগণকে বাঁচাতে আগামী এক বছর যাতে ফেস করতে পারি, ক্রাইসিস না হয়, যাতে খাদ্যের মূল্য না বৃদ্ধি হয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয় না আসে, মানুষ যাতে কর্ম পায় সে বিষয়ে কাজ করি। এই খেলা বাদ দেন। আসুন রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি করি। বিএনপি খেলা শব্দটা যদিও উচ্চারণ করে না, কিন্তু খেলতে চায়। তারা চায় যে কোনো মূল্যে সংবিধানে কী আছে, নির্বাচন কার অধীনে হবে লেখা আছে, ওসব বাদ। কেন না খেলতে হবে, ক্ষমতায় যেতে হবে। আবার সরকারি দল বলে সংবিধানে যা আছে তাই হবে, ক্ষমতায় থাকতে হবে। তাই আমরা খেলা বন্ধ করতে চাই ,জনগণের পক্ষে আগামী দিনে কাজ করতে চাই।

বিএনপির সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, এখানে অনেকেই বলেছেন খেলার কথা। সত্যিকার অর্থেই সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা দায়িত্বশীল বক্তব্য পেতে চাই। বিএনপি গত কয়েক মাস যাবৎ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং উদ্ভূত যেসব বিষয় নিয়ে যে সভা-সমাবেশগুলো করছে এতে প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে সরকারের জায়গা থেকে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন কৌশলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও প্রতিনিয়ত যে জনগণের উপচে পড়া অংশগ্রহণ এতে আমার মনে হয় সরকারের মধ্যে আমরা চরম উদ্বেগ লক্ষ্য করছি। যে কারণে একেক সময় একেকজন মন্ত্রী একেক ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে যেসব বক্তব্য দিচ্ছে তা খুবই অনাকাঙ্খিত। প্রধানমন্ত্রী এখানে আছেন, উনি গত পরশুদিন (৪ নভেম্বর) একটি আলোচনা সভায় বললেন বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে জেল খানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম তারেক রহমান এবং জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশে যে সত্যিকার অর্থে আইনের শাসন অনুপস্থিত, আইনের শাসন যদি থাকতো, আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হলে প্রধানমন্ত্রীর জায়গা থেকে এটা বলা অপেক্ষা ছিল না।  

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এখানে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছে। স্পিকার আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বিরোধী দলের নেতা কে হবে, বিরোধী দলের হুইপ কে হবে এটা আমার জিজ্ঞাসার বিষয় না। তারা কাকে কী নিয়োগ দেবে জিজ্ঞাসার বিষয় না। কিন্তু অবশ্যই সংবিধান এবং কার্যপ্রণালী বিধি দ্বারা সংসদ পরিচালিত হবে। পত্র-পত্রিকায় যেটা দেখলাম গত বেশ কিছুদিন আগে ওনারা সংসদ নেতা নির্বাচন করে আপনার কাছে চিঠি দিয়েছে। এখানে বিরোধী দলের সংগা দেওয়া দরকার। এ সময় স্পিকার বলেন, এটা আপনার বিষয় না।
 
বাংলাদেশ সময়:  ০১৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
এসকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।