ঢাকা: আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে নতুন করে নেওয়া ঋণ শোধ করা হবে কীভাবে, সরকারের কাছে এমন প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ঋণ নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, রিজার্ভ তো খালি।
আইএমএফের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ায় জনগণকে আরও নতুন করে ঋণে আবদ্ধ করতে যাচ্ছে বলে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক উন্মুক্ত আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার (৯ নভেম্বর) জানিয়েছেন, ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অনেকের অনুমান ছিল, আমরা আইএমএফের ঋণ পাব না কিংবা তারা কঠিন শর্ত দেবে। তেমন কিছুই হয়নি। তবে তারা শর্ত দিয়েছে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য আইএমএফের কিছু পরামর্শ আছে। আমরাও সেভাবে কাজ করছি। ’
এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। মানুষ কী করে বাঁচবে। এর কারণটা কি? একটা মাত্র কারণ- ক্ষমতায় আসার পরে তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে চুরি করা, দুর্নীতি করা। আইএমএফ-এর ঋণ পেয়ে ডুগডুগি বাজাচ্ছেন। কদিন আগেও অর্থমন্ত্রী বলেছেন- আইএমএফরে ঋণ আমাদের দরকার নাই। তারা এখন তাদের ঋণ নিচ্ছে কেন? কারণ, এর মধ্যে চুরি করে কোষাগার সাফ করে ফেলেছেন। দেউলিয়া করে ফেলেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। বিদ্যুতের নামে এমন পাচার করেছেন যে, এক বিদ্যুৎ ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে অন্যতম বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। দেশে রাখছে না টাকা। বিভিন্ন কায়দাকানুন করে সব বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই- এদেশের মানুষের এখন প্রয়োজন বেঁচে থাকার। আইএমএফের ঋণ নিয়েছেন ভালো কথা। ঋণ শোধ করবেন কীভাবে। ইতোমধ্যে রিজার্ভ খালি হয়েছে। শোধ করা অনেক কঠিন হবে। অন্যদিকে আপনারা সমস্ত টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। আজ আপনারা কী খাতে খরচ করলেন, কেন খরচ করলেন তা জনগণকে জানান না। সুতরাং আইএমএফের ঋণ নিয়ে আপনারা জনগণকে আরও একটা ঋণের মধ্যে ফেলতে যাচ্ছেন- যা ইতোমধ্যে সমস্ত ঋণগুলো আপনারা করেছেন।
তিনি ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, এখন বলছেন আপনারা মেগা প্রজেক্ট বন্ধ করছেন। আমরা বহু আগে বলেছিলাম। যখন করা হয় তখনই আমরা বলেছিলাম- মেগা প্রজেক্টগুলো বন্ধ করে দেন। সেই টাকা জনগণের স্বাস্থের জন্য, তাদের বেঁচে থাকার জন্য খরচ করুন। যখন লকডাউন দিয়েছিলেন জনগণের কী অবস্থা হয়েছিল, যারা হকার ছিল তারা ব্যবসা করতে পারেনি, একমাস-দুমাস তারা কষ্ট করেছে।
বিএনপি মহাসচিব ‘মায়ের কান্না’ নামের নতুন একটি সংগঠনের সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে নেওয়ার দাবিকে নতুন ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, নতুন সব ফন্দিফিকির বের করছেন আন্দোলনকে ডাইভার্ট করার জন্য। আমাদের যে গুম হওয়া পরিবারগুলো, তাদের একটা সংগঠন আছে ‘মায়ের ডাক’। ওটার পাল্টা একটা তৈরি করেছে ‘মায়ের কান্না’। এটা নতুন। পঁচাত্তর সালে সিপাহী জনতার বিপ্লব হয়েছিল ৭ নভেম্বরে, সেই সময়ে কারা কারা নাকি মারা গিয়েছিল, তাদের আত্মীয়স্বজনরা এতদিন পর উদয় হয়েছেন। কী দাবি করছেন। শহীদ জিয়া নাকি মানুষদের হত্যা করেছেন। সেজন্য তার কবর সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চায়।
তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, এটাকে হালকা করে নেবেন না। এটা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু করেছে। এই চক্রান্ত হচ্ছে- আবারও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে, মানুষের আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দেওয়ার। আমরা সেই সুযোগ দেব না। আমাদের লক্ষ্য একটা- বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। এই জনগণকে রক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। ভাতের অধিকার, বস্ত্রের অধিকার, জীবনের অধিকার রক্ষা করতে হলে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
তিনি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে নতুন একটি সংসদ গঠন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা দেশে নতুন স্বপ্ন দেখাবে।
৭ নভেম্বর বিএনপি ঘোষিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, ইশরাক হোসেন, সুলতান সালাউদ্দীন টুকু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২২
এমএইচ/এসএ