বরিশাল: জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদের অপরিহার্যতা নিয়ে বরিশাল বিভাগের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে বিএনপি।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির মিডিয়া সেলের উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির সংসদ সদস্য ও মিডিয়া সেলের সদস্য রুমিন ফারহানা, শাম্মী আক্তার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন।
রুমিন ফারহানা বলেন, বিএনপির যখন দুঃসময় যায় তখন দেশের মানুষের দুঃসময় যায়, বাংলাদেশের দুঃসময় যায়। গত ১৭ বছর ধরে দুঃসময় চলছে। এ ১৭ বছরে মানুষের স্বাধীনতাসহ সব কিছু হরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য যা কিছু ভালো, মানুষের মুক্তির জন্য যা কিছু দরকার সব হয়েছে বিএনপির হাত ধরে।
তিনি বলেন, এ জাতীয় সরকারের কথা অতীতে কোনো সরকার বলেনি। কারণ যারা সরকারে এসেছেন, সরকার গঠন করেছেন তারা মনে করেছেন আমরাই তো সংখ্যাগরিষ্ঠ। সুতরাং রাষ্ট্রের মেরামত দরকার বা রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তনে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা আমরাই করবো। বিএনপি জয়ীর সঙ্গে বিজিতার হাতে হাত মিলিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বাস করে। আর সে কারণেই সুষ্ঠ ভোট হলে আগামী নির্বাচনে ২৯০ আসন বিএনপি একাই পাবে। সেখানে দাঁড়িয়ে বিএনপি চাইলে যেকোন পরিবর্তন একাই করতে পারে। কিন্তু বিএনপি ওয়াদা করছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পায় তবে সবদল মতের মানুষকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। সেখানে ছোট ছোট দলের অভিজ্ঞ দক্ষ নেতাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। তারা নির্বাচনে হারলো না জিতলো সেটা বড় বিষয় নয়।
তিনি আরও বলেন, এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদে যে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সে দলটি স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র ধারণ করে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হলে স্বৈরতান্ত্রিক চরিত্র ধারণ করার সম্ভাবনা থাকে না। দ্বিতীয়ত এককক্ষ বিশিষ্ট সংসদের চেয়ে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে জবাবদিহীতা আরও বেশি শক্তিশালী থাকে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে সদস্যদের অভিজ্ঞতা-দক্ষতা কাজে লাগিয়ে পরিপক্ক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তাই তারেক রহমান বলেছেন ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করবেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, বাংলাদেশের দায়িত্ব একমাত্র বিএনপিই নিতে পারে। সংসদে ভারসাম্যের জন্য দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা দরকার।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শাম্মি আক্তার বলেন, বরিশালের সংগ্রামী মানুষ চোরের দলকে খাদে ফেলে দিয়েছে। তাই নতুন বাংলাদেশকে গড়তে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সরকার দরকার।
বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আলী আহম্মেদ বলেন, আজ গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা ব্যবস্থা অনুপস্থিত। তাই সরকার রাষ্ট্রের টাকা লুট করে বিদেশে পাঠিয়েছে। লুট ঠেকাতে রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি বরিশাল বিভাগের সভপতি অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থা দরকার। তাই জনসাধারণের অধিকার আদায়ে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বরিশাল জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ নিলু বলেন, জনগণের ভোট ও মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে সরকার। তাই রাজপথে লড়াই করে কর্তৃত্ববাদী সরকারকে হঠাতে হবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্টজন অধ্যাপক আলী নেছার, ডা. সিরাজুল আলম, বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম ফরিদ, সাংবাদিক নাসিম উল আলম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান নান্টু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেবুল প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
এসএম/জেডএ