ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

শেষ পর্ব

অর্থনীতিতেও নীরবে অবদান রাখছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৪
অর্থনীতিতেও নীরবে অবদান রাখছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ছবি: বাংলানিউজ

রামপাল (বাগেরহাট) থেকে ফিরে: পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রেখে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে প্রায় চার বিলিয়নের বেশি ইউনিট বিদ্যুৎ যুক্ত করেছে বাগেরহাটের মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট (রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র)। শুধু তাই নয়, এটি দেশের অর্থনীতিতে নীরবে রাখছে উল্লেখযোগ্য অবদান।

ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এনটিপিসির সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছেন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় চলতি বছরের মার্চে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে গড়ে প্রায় ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, স্থানীয় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে কেন্দ্রটি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি ‘গেইম চেঞ্জার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থনৈতিক অবদানের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, জাতীয় গ্রিডে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে শিল্পায়নে অবদান রাখছে রামপালের মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট। আমাদের জাতীয় গ্রিডে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুৎ যোগ করছে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে। স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের সুবিধা এবং এসএমইকে সাহায্য করা, নারী ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রমও বেশ ভালো হয়েছে।

বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সঙ্গীতা কৌশিক বলেন, বাংলাদেশের প্রসারমান অর্থনীতিতে শিল্পায়ন এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হয়। সেখানে কাজ করাটা আমার জন্য গর্বের। উৎপাদনের শুরু থেকে থেকে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ৪ বিলিয়ন ইউনিট যোগ করেছে।

এনটিপিসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সঙ্গীতা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরযোগ্য করে তোলা। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের দিক দিয়ে কেন্দ্রটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন শুল্কে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটই এখন সক্রিয়।

প্রকৌশলী সঙ্গীতা আরও বলেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই পথেই কেন্দ্রটি কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখানে আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে।

পরিবেশ রক্ষায় যে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বা প্লান্টের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা হয়, তাকে সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি বলা হয়। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কয়লার অতি ক্ষুদ্র কণা বাতাসের সঙ্গে মেশার কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে পরিবেশ দূষণ অনেক কমে যায়।

গত বছর দেশে বিদ্যুতের বার্ষিক চাহিদা ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীষ্মের মৌসুমে এই চাহিদা সর্বোচ্চ ১৭ হাজার মেগাওয়াট। ক্রমবর্ধমান চাহিদা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখায়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি অন্যতম অংশীদার মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শান্তনু কুমার মিশ্র বলেন, রামপাল এই প্রকল্পে স্থানীয় প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের নিয়োগ দিয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশি জনবল ও বিদ্যুৎ প্রকৌশল খাতে মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি পাক। এর ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থানীয় জনবল দিয়ে সাশ্রয়ে চালানো সম্ভব হবে। তাতে বিদেশমুখী নির্ভরতা কমবে। আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬০ জন প্রকৌশলীকে নিয়োগ দিয়েছি। এই প্রকৌশলীরা ভারতেও প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং এখন খুব ভালো কাজ করছেন। দেড় হাজার থেকে দুই হাজার শ্রমিক আমাদের এই কেন্দ্রে কাজ করছেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতে গিয়ে এই শ্রমিকদের দক্ষতাও বেড়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, এই প্রকল্পটি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখন পর্যন্ত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র মোট ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে ২০১২ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় এ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। ২০১৩ সালে শুরু হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য জমি অধিগ্রহণ, জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৪
আরকেআর/এইচএ/

আরও পড়ুন
দ্বিতীয় পর্বরামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র: ‘গ্রিন বেল্ট’-এ পাখির কলরব, খালে দাপাচ্ছে ডলফিন
প্রথম পর্ব: আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।