ঢাকা: নিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) কর্মকর্তারা। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে সরকারি এ টাকা লুটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহী শালবাগান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ট্রান্সফরমার রিপেয়ারিং ওয়ার্কসপ নির্মাণ প্রকল্পে এ অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বনিম্ন দর ৬৫ লাখ টাকা থাকলেও ১ কোটি ১১ লাখ টাকায় শিকদার এন্টারপ্রাইজকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
বিউবো সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী শালবাগান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ট্রান্সফরমার রিপেয়ারিং ওয়ার্কসপ নির্মাণ প্রকল্পে দরপত্র আহ্বান করা হলে আটটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়।
এ দরপত্র খোলা হয় গত বছরের ২৬ আগস্ট। এতে সর্বনিম্ন দর জমা দেয় মেসার্স মুনির এন্টারপ্রাইজ (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ঢাকা) ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৫ টাকা।
দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দর জমা দেয় মেসার্স কবির ট্রেডার্স (বগুড়া) ৬৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৪ টাকা। তৃতীয় সর্বনিম্ন দর জমা দেন মেসার্স এসএস এন্টারপ্রাইজ (রাজশাহী) ৭৮ লাখ ১ হাজার ১৫৯ টাকা।
আর সর্বোচ্চ দর জমা দেন মেসার্স শিকদার এন্টারপ্রাইজ (ঢাকা) ১ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
নিয়মানুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা মুনির এন্টারপ্রাইজের কাজটি পাওয়ার কথা। কিন্তু তাকে না দিয়ে ৪৬ লাখ টাকা বেশিতে সর্বোচ্চ দরদাতা শিকদার এন্টারপ্রাইজকে কাজ দিতে গোপনে সব চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগে প্রকাশ।
বিউবো’র একটি সূত্র জানায়, শিকদার এন্টারপ্রাইজকে কাজটি দেওয়ার জন্য সুপারিশসহ পিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলীর টেবিলে পাঠানো হয়েছে। আজকালের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলেও সূত্রটি দাবি করেছে।
অভিযোগের আঙুল রয়েছে দরপত্র আহ্বানকারী বিউবো’র নকশা-৩ এর পরিচালক নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। সর্বোচ্চ দরদাতা শিকদার এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক অংশিদারিত্ব রয়েছে বলেও দাবি করেছে একটি সূত্র।
আর এ কারণে তার আগ্রহেই কাজটি শিকদার এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হচ্ছে বলে দরপত্রে অংশ নেওয়া একাধিক ঠিকাদার দাবি করেছেন।
তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে অভিযোগ করেন, নকশা-৩ এ চৌধুরী নুরুজ্জামান যোগদানের পর সবচেয়ে বেশি কাজ দেওয়া হয়েছে শিকদার এন্টারপ্রাইজকে। আর প্রায় সবক্ষেত্রেই এভাবে অনিয়ম করে লোকসান করানো হয়েছে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা।
খোঁজ নিতে গিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে নুরুজ্জামান সম্পর্কে। তিনি এ দরপত্র আহ্বান করার এখতিয়ারই রাখেন না। এ দরপত্র আহ্বান করার কথা সিভিল ডিভিশনের। কিন্তু সদ্য অবসরে যাওয়া বিউবো’র চেয়ারম্যান এসএম আলমগীর কবির এক চিঠিতে তাকে এ কাজের দায়িত্ব দেন।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক চেয়ারম্যানের লুটপাটে সহযোগিতা করতে তার আস্থাভাজন হিসেবে এখানে বসানো হয় চৌধুরী নুরুজ্জামানকে। বিউবো’র চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলেও সোনার ডিম দেওয়া এ পরিচালককে দায়িত্ব থেকে সরাতে আগ্রহী নন কেউই। কারণ, তাকে সরালে মাসে মাসে উপঢৌকন পাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কা অনেকের।
এ বিষয়ে নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, দর কম হলেই তিনি কাজ পেতে পারেন না।
উচ্চ দরে দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি একাই কাউকে কাজ দিতে বা বাদ দিতে পারি না। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। ’’
এসময় কোনো অনিয়ম হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
বিউবো’র সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আবদুহু রুহুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বড় বড় কাজ দেখি। কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি লিখিতভাবে জানালে আমি ব্যবস্থা নেব। ’’
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১২
ইএস/ সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর [email protected]