দীর্ঘ দেড় দশকেরও পরে গত ১৩ মার্চ সুইডেন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল। স্বভাবতই সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা আগ্রহ-উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের ইতিহাসের অন্যতম সফল কমিটি ছিল ১৯৮৯ সালের ফরহাদ-মিল্টন কমিটি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি খুব কাছ থেকে ফরহাদ আলী খানের নেতৃত্বের যোগ্যতা দেখেছি। ঈর্ষণীয় যোগ্যতার অধিকারী ফরহাদ আলী খান ১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, আমি ছিলাম সেই সংসদের সমাজকল্যান সম্পাদক। পরবর্তীতে ফরহাদ ভাই সুইডেন চলে গেলে কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত ভিপি হিসেবে আমাকেই দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল এবং পরবর্তী ছাত্র সংসদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হয়েছিল। ফরহাদ ভাইয়ের আকস্মিক প্রস্থানের সেই দিনগুলি ছিল আমার জন্য খুব কষ্টের!
ভাগ্যক্রমে আমরা দুজনে দুটি ভিন্নদেশে বসত গাড়লেও আমাদের যোগাযোগ কখনো বন্ধ হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে এবছর জুনেও আবার সুইডেন যাবার কথা।
ফরহাদ আলী খান সুইডেনে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে পিএইচডি করে এখন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক। পাশাপাশি সুইডেনে আওয়ামী লীগ এর রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। সুইডেনেও ব্যাপক জনপ্রিয় ড: ফরহাদ আলী খান এবারের সম্মেলনে সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন, এটাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা-কর্মীর প্রত্যাশা। কিন্তু সভাপতি নয়, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফরহাদ আলী খানের নাম ঘোষিত হতেই সম্মেলন কক্ষ জুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। উপস্থিত নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদ আর হৈচৈয়ের মুখে পুলিশী প্রহরায় সর্বইউরোপীয় নেতৃত্বের সম্মেলনস্থল ত্যাগ, সম্মেলন পণ্ড হয়ে গেছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে, অনীল দাশ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ডা: ফরহাদ আলী খানের নাম ঘোষণার সাথে সাথেই সম্মেলনে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে অনীল দাশ কমিটির আর কারো নামই ঘোষণা করতে পারেননি।
গত এক যুগ ধরে নিয়মিত ইউরোপ যাওয়া আসার কারণে এই অদ্ভুত ব্যাপারটা বারবার চোখে পড়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কেন জানি যোগ্য, সৎ, পরিচ্ছন্ন ইমেজের অধিকারী নেতারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেন না। আমি প্রায়ই ভিয়েনা যাই, সেখানে অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর সমর্থনপুষ্ট অংশটি সর্বইউরোপীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের আশীর্বাদ বঞ্চিত। গুটি কয়েক লোক নিয়ে সেখানকার অনুমোদিত আওয়ামী লীগ, বাকী সবাই আহমেদ ফিরোজের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের সাথে। সুইডেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়েও শুরু হয়েছে টালবাহানা!
এসব অভিযোগের আঙ্গুল সর্বইউরোপীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি অনীল দাশ গুপ্তের দিকেই উত্তোলিত। কী এক অদ্ভুত কারণে অনীল দাশ ইউরোপের গণতন্ত্রের পথে না হেঁটে অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতার অনুশীলন করেন। আমরা জানি, প্রবীন নেতা হিসেবে ইউরোপের আওয়ামী রাজনীতিতে অনীল দাশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে তার ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। তিনি আমাদের সবার শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত। এমন কী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও তিনি ভীষণ আস্থাভাজন। অথচ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে তার ভূমিকা মাঝেমধ্যেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।
তবে কি অনীল দাশ গুপ্ত তার প্রতি অর্পিত শেখ হাসিনার আস্থার অপব্যবহার করছেন? দলের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন? ইউরোপে আওয়ামী রাজনীতির বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে।
অবিলম্বে ড: ফরহাদ আলী খানকে সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করা হোক। প্রয়োজনে ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হোক।
ড: আবুল হাসনাৎ মিল্টন: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কবি ও চিকিৎসক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫
জেডএম/