বার্লিন (জার্মানি) থেকে: ফিলিপাইন থেকে জার্মানি যখন নতুন করে আরো ১০ হাজার নার্স নিচ্ছে, তখন ‘অবৈধ অভিবাসী’- এ দাবি তুলে বাংলাদেশিদের নিজ উদ্যোগে ফিরিয়ে নেওয়ার চাপ প্রয়োগ করছে দেশটি।
জার্মানির পক্ষ থেকে বার বার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কূটনৈতিক ও প্রবাসী সূত্র এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, মাত্র এক হাজারের কাছাকাছি সংখ্যার অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বর্তমানে অবস্থান করছেন দেশটিতে।
জননিরাপত্তা আর সামাজিক শৃঙ্খলার কথা বলে ইউরোপিয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মন্ত্রী পর্যায়ে সাক্ষাত করে দেশগুলোতে থাকা ৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে নেওয়ার দারি জানানো হয়।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে দেশগুলোকে মানবিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বার্লিনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বাংলানিউজকে বলেছে, এ ৮০ হাজারের মধ্যে জার্মানিতে রয়েছেন এক হাজারের মতো অবৈধ অভিবাসী।
অর্থনীতি আর অভিবাসন নীতিতে বিষয়টি চাপ সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে দ্রুত বিষয়টি বিবেচনার কথা বলে আসছে দেশটি।
তবে ঢাকা থেকে তেমন কোন সাড়া না মেলায় দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে আস্থার সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে না বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী সরকার বাংলানিউজকে জানান, আসলে যারাই অবৈধ পথে বা সাগর পাড়ি দিয়ে কিংবা ভুয়া ছাত্র পরিচয়ে দেশটিতে আসেন, তারা পুলিশর হাতে ধরা পড়ার পর রীতিমতো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তবে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার মতো পরিস্থিতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই উল্লেখ করে জার্মানি এসব আবেদন খারিজ করে দিলেও তা মীমাংসার জন্য অভিবাসন আর মানবাধিকার নীতির আলোকে সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, অবৈধভাবে আসা কোনো ভারতীয় ধরা পড়লে ভারত সরকার নিজ উদ্যোগেই সেই অভিবাসীকে প্রত্যাবাসন করে নেয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন। ফিরিয়ে নেওয়া দূরের কথা, জাতীয়তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চলে দীর্ঘসূত্রতা। তার ওপর দূতাবাসের গাফিলতি সেই প্রক্রিয়াকে আরও বিলম্বিত করায় স্বভাবতই এ দেশে আসা বাংলাদেশের প্রবাসীদের সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক অবস্থানে থাকে দেশটি।
যার প্রভাব পড়ে ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে। ভারতীয় আর বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতীয়দের জন্য ভিসা পাওয়া যতোটা সহজ, বাংলাদেশিদের জন্য ঠিক ততোটাই কঠিন।
কারণ, সন্দেহ হওয়ার বহু নজির রয়েছে যে, অনেকে জার্মানিতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।
ইউরোপের মজবুত অর্থনীতির দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক স্বার্থ বিস্তর। দেশটি মোট আমদানির ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাকই নেয় বাংলাদেশ থেকে।
কূটনৈতিক সূত্রমতে, তাই দ্রুত দেশ দু’টির মধ্যে আস্থার সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে দূতাবাসকে সচল করতেও নেওয়া প্রয়োজন যুগোপযোগী পদক্ষেপ।
এসব যতো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে তার ফল ততো তাড়াতাড়িই বাংলাদেশের অনুকূলে আসবে বলে মনে করছেন এখানকার প্রবাসী ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
জেডআর/এএসআর