টোকিও (জাপান) থেকে: বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে বিশ্বের উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে জাপান। দেশটির উন্নতির মূলমন্ত্র কিন্তু একটিই, তা হচ্ছে ‘সময় জ্ঞান’।
মঙ্গলবার (১৭ মে) জাপানিদের সময়জ্ঞান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
টোকিও থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে কাসিমা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে আসাহি গ্লাস কোম্পানির (এজিসি) একটি কারখানা পরিদর্শনে যাবো আমরা। ঠিক ১০টায় গাড়ি ছাড়ার কথা।
নির্ধারিত সময়ে গাড়ি হাজির। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। মেঘলা আকাশে সূর্যের দেখা নেই। কিন্তু বাঙালির সময় জ্ঞান যে তলানিতে ঠেকছে তা কিন্তু উপলব্ধি করেছে ওই বাসের জাপানি চালক।
আমাদের হোটেল থেকে বেরোতে কারও চার মিনিট আবার কারও পাঁচ মিনিট দেরি! তা দেখেই অকপটে ওই চালক বলে ফেললেন, ‘এটি রিজার্ভ গাড়ি বলে রক্ষা। নইলে তো আপনারা গাড়ি মিস করতেন। ’
সময়জ্ঞান শুধু গাড়ি ছাড়ার ক্ষেত্রে নয়। বাস, ট্রেন, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল থেকে শুরু করে সবকিছুতেই।
এখানকার অলিগলি থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের মুদি দোকান, ছোট ছোট কুলিং কর্নার, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরও সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্তই খোলা থাকে।
বিকিকিনি এই সময়ের আগেও নয়, পরেও নয়। এতো শৃঙ্খল, কর্তব্যপরায়ণ আমাদের দেশে বিরলই বটে!
অবশ্য ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে জাপানে এমন কিছু দোকানপাট কিংবা রেস্তোরাঁ যে নেই, তা নয়। তবে সেখানেও সবকিছু ঘড়ির কাঁটা মেনেই চলে। নির্দিষ্ট সময় পরপর বিক্রয়কর্মী, কর্মকর্তাদের বদলি অনিবার্য।
এজিসি’র এশিয়া প্যাসিফিক ডিভিশনের ম্যানেজার সান ওহাসি। সদালাপি মানুষটি বাংলানিউজকে বললেন, জাপানের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে রয়েছে একটিই মূলমন্ত্র, সেটি সময়জ্ঞান।
‘এখানকার মানুষ যেমন পরিশ্রমী, উদ্যমী তেমনি শান্তিপ্রিয়। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে সচেষ্ট সবাই। ফলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ সব কিছু সময়মতো চলছে। কোথাও কোনো ব্যতিক্রম নেই। ’
কথা হয় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে টোকিওর ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ‘মহারাজা’র মহাব্যবস্থাপক রমেশ কুমারের সঙ্গে।
বাংলাতেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন তিনি। তবে জাপানি টোনটা এসে যাচ্ছিল তার বাংলায়।
বললেন, জাপানে অভ্যস্ত হতে হলে আপনাকে সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিতেই হবে। এখানে মানুষ সেকেন্ড পর্যন্ত হিসেব করে চলে। যদি সময় মেনে চলতে পারেন তবে জাপানে আপনি সফল হবেনই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
টিসি/