ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

এইট পিএমকে কি লেখা উচিত (ভিডিওসহ)

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৬
এইট পিএমকে কি লেখা উচিত (ভিডিওসহ) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মস্কো (রাশিয়া) থেকে: এইট পিএমকে (8 PM) কি লেখা উচিত। বিকেল নাকি রাত লিখব তাই নিয়ে ধাঁধার মধ্যে কেটে গেলো  কিছুক্ষণ।

কিন্তু সিদ্ধান্তে আসতে ব্যর্থ হলাম।

সূর্য তখনও ঐতিহাসিক মস্কোর ঘণ্টা ও ক্রেমলিনের উপর পশ্চিম দিক থেকে তীর্যকভাবে আলো ছড়াচ্ছিল। অস্ত যাওয়ার প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বাকি। মস্কো শহরে এখন (জুনে) রাত পৌনে ১০টায় সূর্য অস্ত যায়।

অন্ধকার ছড়াতে সময় নেয় আরও ঘণ্টা খানেক। আবার রাত সাড়ে তিনটায় অন্ধকার মিলিয়ে যায় শহরটিতে। এইটা জুন মাসের চিত্র। শীতকালে নাকি অনেকটাই বিপরীত, সূর্যের দেখা মেলে সকাল ১১টায় আর অস্ত যায় বিকেল ৪টার মধ্যেই।
  
কৃষ্ণসাগরের পূর্বের দেশ রাশিয়ার রাজধানীর সঙ্গে ঢাকার সময়ের ব্যবধান রয়েছে ৩ ঘণ্টা। অর্থাৎ এখন ঢাকায় রাত ১১টা। বাংলাদেশে হয়ত কারো কারো এক চমক ঘুম শেষ হয়ে গেছে। ঠিক তখন রেড স্কয়ারের হাজার হাজার দর্শণার্থীর পদচারণায় সরগরম।
 
কয়েকদিন ধরেই নাকি বছরের শ্রেষ্ঠ আবহাওয়া উপভোগ করছে মস্কোবাসী। তাপমাত্র ২০ থেকে ২৪ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। বৃষ্টি হলেই যেখানে তাপমাত্রা প্রায় দশ ডিগ্রির নীচে নেমে আসে। আর শীত মৌসুমে আইস জমে যায় রাস্তাঘাটে। ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।  

সেই শহরের অধিবাসীদের কাছে সন্ধ্যা বেলা ২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের মতো উপভোগ্য হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই ছেলে মেয়ে, যুবক-যুবতী এমনকি প্রবীণরাও আর ঘরে বসে নেই। স্বল্প পোশাকে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছেন।

আবার কোথাও কোথাও একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ‘কানা-কানি’ করছেন। পাশ দিয়ে কে যাচ্ছেন সেদিকে কারই ভ্রুক্ষেপ নেই। আবার যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যেও কোনো আগ্রহ নেই কানা-কানি করা জুটিদের বিষয়ে।

সিটির অন্যান্য জায়গায় লোকজনের সমাগম থাকলেও রেড স্কয়ারে খানিকটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এখানে লোক বেশি হওয়ার অনেক কারণ বিদ্যমান। অপূর্ব সুন্দর জায়গাটিকে ঘিরে অনেকগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা, প্রশাসনিক ভবন, পার্ক, অভিজাত শপিং মল রয়েছে। রুশভাষা লাল শব্দের অর্থ হচ্ছে সুন্দর। অর্থাৎ শহরের সুন্দর চত্বর এটি। সেখানে মানুষ আসবে না, তাহলে কোথায় যাবে? পর্যটকরা সামান্য সময়ের জন্য এলেও এখানে একবার ঢু মারবেনই।

কয়েকটি ফুটবল মাঠে যোগ করলে যতবড় বড় হবে ঠিক তেমনটাই রেড স্কয়ার। এর পূর্ব দিকে মস্কভা নদী বহমান। যেখানে ট্যুরিস্ট বোঝাই প্রমোদতরীরা এমাথা-ওমাথায় চক্কর দিচ্ছে সবসময়।  

পূর্ব-দক্ষিণ কোণে সেন্ট বাসিলস ক্যাথেড্রাল মিউজিয়াম। দক্ষিণ-পশ্চিমে পরাশক্তিধর দেশটির মহাপরাক্রমশালী প্রেসিডেন্ট’র অফিস (ক্রেমলিন)। চারদিকে আড়াইতলা উচু লাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ক্রেমলিনকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে গলা জড়িয়ে রয়েছে আলেকসান্ডরভস্কি গার্ডেন।  

১০ হেক্টর এলাকা জুড়ে স্থাপিত বাগানটিতে বাহারী ফুলের সমাহার। ঠিক যেন নরসুন্দর দিয়ে ছেটে দেওয়া হয়েছে মাঠের ঘাসের আস্তরণ। দেখতে অনেকটা কৃত্রিম সবুজ কাপের্টের মতো লাগছে। ছড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো চেয়ার। যাতে বসে দর্শনার্থীদের আয়েশ করছেন। কেউ কেউ হালকা রোমান্সও।

২০১৩ সালে এই বাগানে নেপোলিয়ান আর্মির সঙ্গে বিজয়ের শতবার্ষিকী উদযাপন স্মৃতিফলক উন্মোচন করেছে রাশিয়া।

পার্ক সংলগ্ন রাস্তা ডিঙ্গিয়ে গেলেই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। যেখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহভাণ্ডার। পশ্চিম-উত্তরকোণে প্রধানসড়ক পেরিয়ে ৫ মিনিট হাটলেই হাতের বামে পড়বে ডুমা (রাশিয়ান পার্লামেন্ট ভবন)।

ডুমার চারদিকে অনেকগুলো বিপণীবিতান থাকলেও ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রেখে চলেছে। কোনো ধরনের পণ্যের প্রচারণামূলক পোস্টার-বিলবোর্ড কিংবা কোনো ব্যানার ফেস্টুন ঝুলানো নাই। নতুন আগন্তুকের পক্ষে বাইরে থেকে অনুমান করা কঠির শপিং মল নাকি অন্যকিছু। সুউচ্চ কোনো ভবন নেই। সবগুলো ৫ থেকে দশতলা পর্যন্ত।

বুক পকেটে নেমপ্লেট লাগানোর মতো মার্কেটগুলোতে একলাইনে শুধু নাম লেখা রয়েছে। ডুমার বিপরীতে দেড় বাই তিনফুট কাচের উপর স্টিলের পাত দিয়ে লেখা ‘লেডি অ্যান্ড জেন্টলম্যান সিটি, পুদিয়ান মার্কেট’। এ ছাড়া আর কোনো পণ্যের প্রচারণা চোখে পড়ল না বাইরে থেকে।

মস্কোর প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রেড স্কয়ার। ঐতিহাসিক অনেক বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এখানে। রুশ সরকারের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এখানে। অনেক সময় বিভিন্ন মেলা এবং উৎসবের আয়োজন করা হয়। তবে তখন সাজানোর জন্য আবার রাশিয়ান স্টাইল রয়েছে।

বিশাল বিশাল গাছ এনে সবুজায়ন করা হয় কংক্রিটের চত্বরটি। মঙ্গলবার (৩১ মে) চলছিল একটি অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। ভাসমান কুড়েঘর স্থাপন করা হয়েছে চত্বরের বাইরে।  

২০ ফুট উচ্চতার ঝাউগাছগুলো মুলসমেত তুলে আনা হয়েছে। মূলের মাটি যাতে পড়ে যেতে না পারে সে জন্য প্রথমে চট আর চটের উপর মোটা তারের নেট নিয়ে পেচিয়ে আনা হয়েছে।
 
বসানোর পর চারদিক দিয়ে কাঠের ফ্রেম দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। রাজমিশ্রী যেভাবে মসলা মেশানোর জন্য ইটদিয়ে চারকোণা ফ্রেম তৈরি করে। এখানেও একইভাবে কাঠের ফ্রেম দিয়ে সাজানো হয়েছে। বড় গাছের চারপাশে ৬ ইঞ্চি মাটির খাঁচা তৈরি করে ছোট ছোট গাছ লাগানো হচ্ছে। যাতে করে বুঝবার কোনো জো নেই সেগুলো আদতে স্থায়ী নয়, কংক্রিটের উপর স্থাপন করা।

পশ্চিম দিকে প্রধান ফটকের সামনে মস্কোর জিরো পয়েন্ট। এখানে জিরো বুঝাতে বৃত্ত একে তার মধ্যে ডট দিয়ে বুঝানো হয়েছে। সবগুলো রাস্তা রেড চত্বরে এসে ঠেকেছে। ঠিক মাকড়সার জালের কেন্দ্রবিন্দুর মতো। চত্বরের দক্ষিণে ক্রেমলিনের দেওয়াল ঘেষে রয়েছে লেনিনের সমাধিসৌধ।  

নানা কারণে রেড স্কয়ার ট্যুরিস্টদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যদিও মস্কো শহরের অজস্র এলাকা রয়েছে যেখানো দু’দণ্ড জিরিয়ে নেওয়া বা মনোরঞ্জন করা যায়। বলতে গেলে ছিমছাম ও ক্লিন পুরো সিটিকেই একটি প্যাকেজ পার্ক বলা চলে।

শুধু ভাষাগত সমস্যা দেখা দিতে পারে ট্যুরিস্টদের ক্ষেত্রে। ইংরেজি জানা লোক পাওয়া দুষ্কর। বড়জোর বলবে আই ডোন্ট নো ইংলিশ। অনেক স্থাপনা রয়েছে যেগুলোতে রুশ ভাষা ছাড়া অন্যকোন ভাষা লেখা নেই। তাই চোখ জুড়ালেও ঠিক কি দেখলেন আর কোন এলাকায় দেখলেন জানা খুবই দুষ্কর। রাত বিরাতেও ঘুরতে কোনো ভয় নেই চুরি ছিনতাইয়ের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৬
এসআই/ওএইচ/এসএইচ

**যারা হাল ধরবেন রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।