ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

শাহজালালের সঙ্গে ভ্‌নুকভো, মিল-অমিল

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৬
শাহজালালের সঙ্গে ভ্‌নুকভো, মিল-অমিল

ভ্‌নুকভো এয়ারপোর্ট (মস্কো) থেকে ফিরে: মস্কো সিটি থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ডিম আকৃতির এয়ারপোর্টটি রাশিয়ার চতুর্থ ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে এই বিমানবন্দরের অনেক ঐতিহাসিক মিল রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার বাহিনীকে ঠেকানোর জন্য নির্মাণ করা হয় ভ্‌নুকভো বিমানবন্দর। আর যুদ্ধবিমান পরিচালনা ও সম্ভাব্য বিমান হামলা প্রতিরোধের জন্য রাশিয়ার মিত্র ব্রিটেন ১৯৪১ সালে স্থাপন করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা)। পরে উত্তর দিকে সম্প্রসারণ করে বেসামরিক বিমান চলাচল শুরু হয়।

অন্যদিকে ১৯৩৭ সালে রুশ বাহিনী ভ্‌নুকভো স্থাপন করে যুদ্ধবিমান পরিচালনার জন্য। প্রথম বিমান পরিচালনা করা হয় ১৯৪১ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দু’টা এয়ারপোর্টই বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
ভ্‌নুকভো এয়ারপোর্ট থেকে প্রথম বেসমারিক বিমান উড়াল দেয় ১৯৫৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। আর শাহজালাল থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল শুরু হয় এর ৯ বছর আগে ১৯৪৭ সালে।
নির্মাণ কাল ও উদ্দেশ্য এক হলেও এখন কিন্তু বিশাল ফারাক। শাহজালালকে ছাড়িয়ে যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করছে ভ্‌নুকভো। রুশ ফেডারেশনের ভিভিআইপিরা সাধারণত এই বিমানবন্দরটি দিয়ে যাতায়াত করেন। ঘণ্টায় ৬০টি বিমান ওঠা-নামা করে। আর শাহজালাল থেকে সারাদিনে মাত্র ১৯০টি বিমান ওঠা-নামা করে।

বিশাল আকারের এই এয়ারপোর্টটি পায়ে হেঁটে একমাথা থেকে অন্যমাথাও যাওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যে কারণে বোর্ডিং ব্রিজে যাওয়ার জন্য চলন্ত ওয়ার্কওয়ে রয়েছে। দু’টি টার্মিনাল রয়েছে। একটি ব্যবহৃত হয় আন্তর্জাতিক রুটের বিমানের জন্য। এই টার্মিনালটির আয়তন ৮০ হাজার বর্গমিটার। রানওয়ে দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৬০ মিটার, প্রস্ত ৬০ মিটার এর সঙ্গে উভয় পাশে ১০ মিটার করে  রয়েছে বাড়তি অংশ।
এয়ারপোর্টটিতে ৪ হাজার কর্মী কাজ করেন। তাদের আচরণ মনে রাখার মতো। বেশিরভাগের ঠোঁটেই হাসি লেগেই থাকে। কোনো প্রশ্ন করলে বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন।

তবে অনেকেই ইংরেজি জানেন না। তারা বিনয়ের সঙ্গে জানাবেন আই ডোন্ট নো ইংলিশ। তাদের কিছু জানার থাকলেও বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করবেন। ইমিগ্রেশনের একটি ছবি তুলতে গেলে দৌড়ে আসেন একজন পুলিশ। প্রায় ছয়ফুট লম্বা (বেশিরভাগই ৫ ফুট ৯ ইঞ্চির বেশি লম্বা) স্লিম ফিগারের পুলিশটি মুখে হাসির আভা ছড়িয়ে বলেন, এক্সকিউসমি প্লিজ ডোন্ট টেকিং পিকচার।

বলছিলাম বাইরে থেকে দেখতে অনেকটা ডিমের মতো এয়ারপোর্টটির কথা। ভেতরের দিকে অনেকটা ধনুকের মতো। যেখানে অনেকটা গলির মতো করে বোর্ডি ব্রিজ স্থাপন করা হয়েছে। টার্মিনালের স্টিলের ছাউনির বিশাল একটি অংশ জুড়ে ব্যবহার করা হয়েছে স্বচ্ছ কাচ। ফলে দিনের বেলা কোনো বৈদ্যুতিক বাতির প্রয়োজন অনুভব করবেন না আপনি। আবার চারদিকে কাচের দেওয়ালও স্বচ্ছ সাদা। এতে দিনের বেলা অনায়াসে বাইরের আলো দিয়ে কাজ সারিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শাহজালালে কালচে গ্লাস ব্যবহার করার দিনের বেলাও বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়।
পুরো এয়ারপোর্টটি সব সময় ঝকঝকে তকতকে থাকে। দেখতে মনে হবে মাত্র পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বোর্ড ব্রিজের সামনে কয়েক’শ করে চেয়ার পাতা রয়েছে। আপনি আগে ভাগে গেলে বসে জিরিয়ে নিতে পারবেন অনায়াসে। মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো অপেক্ষায় থাকতে হয় না।

এয়ারপোর্টটির রানওয়ের পাশে বাংলাদেশের দুর্বাঘাসের মতো ঘাস ও ছোট ছোট জংলি ফুলে ভরপুর। আরও অনেক ধরনের ঘাস রয়েছে। তবে সেগুলো নিয়মিত ছেটে দেওয়া হয় পার্কের মতো। তাই রানওয়ের উভয় পাশ অনেক পরিপাটি।

ইস্তাম্বুল এয়াপোর্টের টার্মিনাল অনেকটা শপিং মলের মতো ঘিঞ্জি হলেও ভ্‌নুকভো অনেক বেশি পরিপাটি। অল্প সংখ্যক ফাস্টফুড ও বিভিন্ন পণ্যের দোকান দেখতে পাওয়া গেছে এখানে। বাইরে টার্মিনালে প্রি-পেইড কার্ড পাঞ্চ করে পার্কিংয়ে প্রবেশ করছে যানবাহনগুলো।

ঊনত্রিশ মে ভ্‌নুকভো ইমিগ্রেশনের সামনে যেতে এক কর্মকর্তা এসে কোন লাইনে দাঁড়াতে হবে বিনীতভাবে অনুরোধ করলেন। সব অফিসার ইংরেজি জানেন না। নির্দিষ্ট কয়েকটি কাউন্টারে বিদেশিদের জন্য ইংরেজি জানা অফিসার রয়েছেন।

অনেকগুলো কাউন্টার থাকায় মাত্র কয়েক মিনিট লাগলো চেকিং শেষ করতে। চেকিং শেষে কনভেয়ার বেল্টের সামনে যেতেই অবাক হওয়ার পালা। তখন অন্যান্য যাত্রীরা প্রায় সবাই চলেই গেছেন। শুধু আমাদের সহ অল্প কয়েকজনের ব্যাগ তখন চক্কর দিচ্ছিল।

কিন্তু শুক্রবার (৩ জুন) ঢাকায় যা অভিজ্ঞতা তা ভোলার নয়। ইস্তাম্বুল থেকে আসা টার্কিশ এয়ারের ফ্লাইটটিতে নিউইয়র্ক, ইতালি, জার্মানি, প্যারিস ও মস্কো থেকে দীর্ঘ জার্নি করে আসা যাত্রীদের চোখে মুখে তখন ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

৫ টায় বিমান থেকে নেমে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়াতে হলো প্রায় ৪০ মিনিট। আর লাগেজ পেতে সময় লাগল আরও ৪০ মিনিট। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে গেলো এয়ারপোর্ট থেকে নিস্তার পেতে।
আর কনভেয়ার বেল্টের সামনে দাঁড়িয়ে হা-পিত্যেশ করতে দেখা গেল যাত্রীদের। তারা যখন কনভেয়ার বেল্টের ঠিক ‍মুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাগের জন্য অপেক্ষা করছেন। ঠিক তখন এক হাত দূরে প্রাচীরের ওপারে ধপাধপ লাগেজগুলো কনভেয়ার বেল্টে ফেলা হচ্ছে।
লাগেজ ছুড়ে ফেলা দেখে অনেকেই হা পিত্যেশ করলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অনেকের ব্যাগের লক ভাঙা, কারো কারো ব্যাগের ভাঙা চাকা কনভেয়ার বেল্টে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

রহমান নামের একযাত্রী বলেই বসলেন, এদের ব্যবহার দেখলে মনে হয়। ওরা করুণা করছে আমাদের। লাগেজগুলো যেভাবে ছুড়ে ফেলা হয়। তাতে খুব খারাপ লাগে। এই এয়ারপোর্ট দিয়ে দু’বার যাতায়াত করলে, ব্যাগ নষ্ট হয়। বিদেশিরা কেন আসবে এখানে?
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৬
এসআই/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।