পোখারা, নেপাল থেকে: সারানকোটেরের তৌরীপানি পাহাড়ের চূড়ায় যেতে হলে জিপ থেকে নেমেও বেশ কিছুটা পাহাড়ি পথ বাইতে হয়। এটা ১৬৫০ ফুট উপড়ে।
তৌরীপানি পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় অর্ধশত গ্লাইডার অপেক্ষা করছেন উড়াল দেওয়ার জন্য। এর অর্ধেকই পাইলট, যারা প্যারাসুটে গ্লাইডারদের নিরাপদে উড়িয়ে নিয়ে যাবেন পোখারা উপত্যকায়।
পোখারার অাবহাওয়া এখন অনিশ্চিত। মেঘের মধ্য দিয়েই হেঁসে ওঠে রোদ। আবার মিনিট না পেরোতেই হয়তো রিমঝিম বৃষ্টি। আর বৃষ্টিতে সম্ভব নয় প্যারাগ্লাইডিং।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) ভোর থেকেই ঝুম বৃষ্টি। বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টি থামতেই বুদ্ধা প্যারাগ্লাইডিং কোম্পানি বুকিং দেওয়া গ্লাইডারদের নিয়ে রওনা করে পাহাড়ের চূড়ায়।
বেলা ১২টাতেও তৌরীপানি পাহাড়কে ঘিরে রেখেছে মেঘ। চূড়ায় ভেজা ঘাসের ওপর পেছনে প্যারাস্যুট বেঁধে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন সবাই। বাতাস অাসলেই সরে যাবে মেঘ। আর তখনই উড়াল দেওয়ার সময়।
এক মিনিটের জন্য সূর্য দেখা গেলেও ওড়ার প্রস্তুতি নিতে নিতেই আবারো মেঘের অাড়ালে হারিয়ে গেলো সব। গ্লাইডাররা অাবারো হতাশ হয়ে বসে পড়লেন। তবে বেশি অপেক্ষা করতো হলো না। দশ মিনিটের মধ্যেই রোদ না উঠলেও বাতাসে মেঘ সরে গেলো।
কোরিয়ান এক গ্লাইডার উড়াল দেওয়ার জন্য শুরুতেই হাঁটা শুরু করলেও পা স্লিপ করে। বসে যান পাইলট। অপেক্ষা করেই চেষ্টা করতে হবে দ্বিতীয়বার। ফলে চলে অাসলো অামার টার্ন। আর অানোয়ার ভাইয়ের টার্ন অামার ৪ জন পড়েই।
পাইলট জিতুর নির্দেশমতে প্রথমে হাঁটতে শুরু করলাম। 'রান' বলতেই দৌড় শুরু করলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পা দুটো শূণ্যে অনুভব করলাম। চূড়া থেকে মেঘের ভেতর হারিয়ে গেলাম।
মিনিট চারেকের মধ্যেই চোখের সামনে থেকে মেঘ কাটতে শুরু করে। হাজার ফুট ওপর থেকে নিচের পাহাড়ি জঙ্গলের ওপর ভেসে বেড়াচ্ছি। নিচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ঈগল পাখি, দেখালো জিতু। আকাশের এই স্তরের বাতাস ঠাণ্ডাই।
তুলার মতো মেঘ অামার হাতকে স্পর্শ করে যায়। গায়ের টি-শার্ট একটু ভেজা ভেজা হয়ে ওঠে। নিজেকে সঁপে দেওয়া যায় এই সৌন্দর্যের কাছে। মাটি থেকে দেখা অাকাশের অারো অনেক পাখিও তখন আমার নিচ দিয়ে উড়ে যায়। দু’টি পাখি পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই যেন উড়ে যাচ্ছে আমার কিছু নিচ দিয়ে।
সামনের অারেকটি পাহাড়ের বাঁক পেরোতেই চোখে পড়লো পাহাড়ের গাঁ বেয়ে নেমে অাসা ফেউ নদীর পাড়ের পোখারা উপত্যকা। সেখানকার বাড়িঘর আর গাড়িগুলোকে তখনো ছোট পোকার মতোই লাগে। উপত্যকায় পাখির মতোই উড়ে বেড়াতে থাকি। পাখির চোখ দিয়েই দেখা যায় পোখারা ভ্যালির রুপ। মনে হয় এই উড়ার যদি শেষ না হতো।
এর মধ্যেই জিতুর সঙ্গে হয়ে যায় অনেক আলাপ। এ পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার বার অাকাশে উড়েছে সে। বলেন, প্যারাগ্লাইডিং শান্তির অনুভূতি দেয়। এটা বিপদজনক নয়। বরং পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকনের সুযোগ দেয়া।
প্রায় অাধঘণ্টা আকাশে থাকার পর আমরা তখন ফেউ নদীর ওপর। সেখানেই জিতু জানতে চাইলো কিছু অ্যাক্রোবেট সুইং চাই কিনা? এরপরই শুরু হলো প্যারাস্যুটের কিছু কৌশলী বাঁক নেওয়া। যেখানে মনে হতে পারে, উল্টে যেতেও পারে প্যারাস্যুট।
ফেউ নদীর পাড়ে ছোট দ্বীপের মতো স্থানে ল্যান্ডিং। পাইলটের নির্দেশমতে পা দু’টো সামনে এগিয়ে রাখলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ল্যান্ড করলাম মাটিতে। সেখানে অামাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মুজিবর ভাই। মিনিট দুয়েকে মধ্যেই ল্যান্ড করলেন আনোয়ার ভাই। এবার সবাই মিলে ছবি তোলা।
**কি চাই লাউয়াছড়ায়: বন নাকি খাসিয়া পান!
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৬
এমএন/জেডএস