হাতে গোনা কয়েকটি দেশই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পেরেছে এবং কিছুটা সফল হয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম।
পৃথিবীর অন্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতেও করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। এখন পর্যন্ত এই সংখ্যাটা সাত হাজারের কাছাকাছি। ১শ জনের মতো মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সরকারের সময়োপোযোগী পরিকল্পনার কারণে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এক্ষেত্রে তারা কিছু কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
প্রথমেই অস্ট্রেলিয়া ভূখণ্ডের সব আন্তর্জাতিক সীমানা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, এরপর প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের সীমানা দুয়ারও বন্ধ করা হয় যাতে সাধারণ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করে ভাইরাস না ছড়াতে পারে। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে দেওয়া হয়েছে সর্ব্বোচ গুরুত্ব।
এসব নিয়ম মানতে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত সব মানুষকে বাধ্য করা হয়। এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে অনেক সময় কঠোর হতে হয়েছে এবং অনেককে গুনতে হয়েছে জরিমানা। আর স্বাস্থ্যকর্মীদের নিবেদন প্রশংসনীয়। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বৌদলতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ করোনা টেস্ট করতে পেরেছে এবং যথাসাধ্য চিকিৎসা পেয়েছে। সর্বোপরি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত সব স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দা সরকারকে সহযোগিতা করে সব নির্দেশনা মান্য করেছে।
করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া সরকারের বিশেষত্ব ছিল দল-মত-নির্বিশেষে সবাই একযোগে কাজ করেছে। যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই সব বিশেষজ্ঞ, রাজ্য প্রধানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন কেবিনেট মিটিং করে নির্দেশনা জারি করেছেন। যার ফলাফল হয়েছে সূদুরপ্রসারী; করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
অস্ট্রেলিয়ার করোনা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে আশাব্যঞ্জক হওয়ায় মানুষের জীবনকে স্বাভাবিক করতে হাতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ কর্মপন্থা।
ফলে বিধিনিষেধ শিথিল করতে এবং অস্ট্রেলিয়াকে কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ করার জন্য তিন পর্যায়ের একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, সরকার মনে করছে আগামী মাসগুলোতে মানুষ কাজে পুনরায় যোগ দিতে পারবেন।
যদিও প্রধানমন্ত্রী জুলাইয়ের মধ্যে এই পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছার প্রত্যাশা করছেন, তারপরেও নিজেদের রাজ্যের গণ-ৎস্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং স্থানীয় অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্টেট ও টেরিটোরিগুলো তাদের সুবিধামতো সময়ে এ পর্যায়গুলোর পর্যালোচনা এবং বাস্তবায়ন করবে।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে অস্ট্রেলিয়া সরকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় নির্ধারণ করেছে। এই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে মনোযোগ দেওয়া হবে অর্থনীতি পুনরায় চালু করার প্রতি। অস্ট্রেলিয়ানদের কাজ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
এসবের মধ্যে রয়েছে ১০ জন পর্যন্ত জমায়েত করা, পারিবারিকভাবে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে বাড়িতে ৫ জন দর্শনার্থীর অনুমতি ও কতিপয় স্থানীয় এবং আঞ্চলিক ভ্রমণের অনুমতি।
দ্বিতীয় পর্যায়ে জমায়েতে লোকসংখ্যা ২০ জন পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া আরও বেশিসংখ্যক কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে। যেমন জিম, বিউটি সার্ভিস এবং বিভিন্ন এন্টারটেইনমেন্ট ভেন্যু- যেমন, গ্যালারি এবং সিনেমা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইন্টারস্টেট ট্রাভেলের অনুমোদন দেওয়া হবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে আমরা দেখবো কোভিড থেকে নিরাপদ জীবনযাপন ও কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে উত্তরণের বিষয়টি।
এই পর্যায়ে জমায়েতে লোক সংখ্যা ১০০ পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হবে। তৃতীয় পর্যায়ের অধীনে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো হবে ‘নিউ নরমাল’ বা আগের অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের শুরু। ভাইরাসটি তখনও একটি হুমকি হিসেবে গণ্য হবে। ১০০-এর বেশি লোকের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং গণজমায়েত তখনও নিষিদ্ধ থাকবে।
এসময় ফুডকোর্ট, সউনা এবং ইন্টারস্টেট ট্রাভেলের অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে নিউজিল্যান্ড ছাড়া আন্তর্জাতিক সীমানাগুলো বন্ধ থাকবে এবং যারাই দেশে প্রবেশ করবে তাদের কঠোর কোয়ান্টিন প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২০
এএ