ঢাকা, বুধবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০২ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

শিবচরে বিচরণ বেড়েছে পাঁচডোরা দাগের কাঠবিড়ালির

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:১০, এপ্রিল ২৯, ২০২৫
শিবচরে বিচরণ বেড়েছে পাঁচডোরা দাগের কাঠবিড়ালির

মাদারীপুর জেলার শিবচরে গত কয়েক বছর ধরেই দেখা মিলছে পাঁচডোরা দাগের কাঠবিড়ালির। প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্য মণ্ডিত ছোট্ট এই প্রাণীটির মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত রয়েছে পাঁচটি সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ।

ছোট্ট এই প্রাণীটিকে নানান ধরনের ফলের গাছে বিচরণ করতে দেখা যায়।  

অত্যন্ত চঞ্চল প্রকৃতির কাঠবিড়ালি গাছ-পালা এবং খাদ্যের সন্ধানে মানুষের বসতবাড়িতেও ছুটে আসছে। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেকদিন ধরেই কাঠবিড়ালির বিচরণ মুগ্ধ করছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। বিশেষ করে গাছপালায় ঘেরা এলাকাগুলোতে কাঠবিড়ালির বিচরণ বেশি দেখা যাচ্ছে।  

সরেজমিনে উপজেলার উৎরাইল, খাড়াকান্দি, মগড়াপুকুর পাড়সহ আশপাশে দেখা গেছে, গাছে গাছে কাঠবিড়ালির ছুটাছুটি আর কিচিরমিচির ডাক। কাঠবিড়ালির ডাক অনেকটা ঝিঝিপোকার ডাকের মতো মনে হলেও বেশ জোড়ালো এবং তীক্ষ্ম শব্দ। থেমে থেমে তীক্ষ্ম শব্দে ডাকে তারা।

খেজুর গাছ, আম, জাম, লিচু গাছে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এই এলাকার গাছপালা, মানুষের বাড়ি এবং সড়কেও কাঠবিড়ালির দেখা মিলছে। এছাড়াও নদীর চরাঞ্চলের ঝোপঝাড়, বনজ ও ফলদ বৃক্ষের বাগানে যত্রতত্র দেখা মিলছে কাঠবিড়ালির।  

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিগত ৫/৭ বছর ধরে কাঠবিড়ালির সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। এখানে বংশ বিস্তারের মাধ্যমে দিন দিন বাড়ছে এর সংখ্যা। ছোট-বড় এবং মাঝেমধ্যে বাচ্চা কাঠবিড়ালিরও দেখা মেলে। গায়ের ওপর লম্বালম্বিভাবে কালো-সাদা ডোরা এই কাঠবিড়ালির। খুব সম্ভব পাঁচ ডোরা হবে। এ জন্যই এটিকে পাঁচডোরা কাঠবিড়ালিকে বলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তার পাশের গাছপালা ছাড়াও মানুষের বসতবাড়িতেও ছুটে আসছে ছোট্ট এই প্রাণী। খাদ্যের জন্য গাছের ফল-মূলের সন্ধানের পাশাপাশি মানুষের বাড়িতে হাঁস-মুরগির জন্য রাখা খাবার খেতেও দেখা যায় কাঠবিড়ালিকে। প্রজনন মৌসুমে নারিকেলগাছসহ বিভিন্ন গাছে বাসা তৈরি করে এরা বাচ্চা দেয়।

জানা গেছে, কাঠবিড়ালি রোডেনশিয়া বর্গের স্কিউরিডে গোত্রের অনেকগুলো ছোট ও মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের কিছু কাঠবিড়ালির শরীরে সাদা-কালো ডোরা থাকে। কাঠবিড়ালির সামনের পা দুটো ছোট এবং পেছনের পা দুটো বড় হয়ে থাকে, ফলে এরা খুব সহজেই লাফ দিতে পারে। উড়ুক্কু কাঠবিড়ালির সামনের পা থেকে পেছনের পা পর্যন্ত শরীরের সঙ্গে লোমশ চামড়া সংযুক্ত থাকে।

বাংলাদেশে আট প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এদের মধ্যে পাঁচ ডোরা ও তিন ডোরা কাঠবিড়ালি মানুষের সংস্পর্শে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই কাঠবিড়ালিগুলো বেশ চঞ্চল প্রকৃতির। এরা দ্রুত ছুটতে পারে। এরা একাকী বা জোড়ায় চলে।  

প্রধানত ফল, বীজ, বাদাম, বাকল, পোকামাকড় ও খেজুরের রস খায়। পাঁচ ডোরা এবং তিন ডোরা কাঠবিড়ালি উভয়েরই পিঠে সাদা ডোরা দাগ রয়েছে। এদের দেহের পশম ঘন সন্নিবিষ্ট এবং লেজও ঘন ঝোপযুক্ত। এদের মাথা প্রশস্ত ও গোলাকার, চোখ বড় এবং কান স্পষ্ট ও ত্রিকোণাকার। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের তফসিল ১ অনুযায়ী এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বন বিভাগের মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাদারীপুরের শিবচরে কাঠবিড়ালির বিচরণ বেড়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে জেলার অন্যান্য স্থানে কাঠবিড়ালি খুব একটা দেখা যায় না। এই প্রাণীটির বিচরণ বৃদ্ধি পাওয়া ভালো দিক। বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে জনসাধারণকে আরও সচেতন হবে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।