নীলফামারী: উত্তরের জনপদ নীলফামারী। পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর, রংপুরসহ কয়েকটি জেলার কৃষিশ্রমিকের হাতে বর্তমানে কোনো কাজ নেই।
ট্রেন, বাস, ট্রাকে চেপে ছুটে চলেছেন কাজের সন্ধানে। পেছনে পরিবার ও একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়ে ধানকাটা শ্রমিকদের এই পথচলা।
আগাম জাতের বোরো ধান হয়ে থাকে দক্ষিণের জেলাগুলোতে। প্রতিবছরই এসব জেলায় ধানকাটা শ্রমিকের সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, আক্কেলপুর, সান্তাহার, আদমদীঘি, আত্রাই, নওগাঁ, নাটোর, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এ সংকট। তাই উত্তরের হাজার হাজার কৃষিশ্রমিক কাজের সন্ধানে ট্রেনে, বাসে ও খোলা পিকআপভ্যানে চড়ে ওই সব এলাকায় ছুটছেন।
প্রতিদিন সকালে নীলফামারীসহ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা ও চিরিরবন্দর, রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুরেরা ভিড় করছেন উত্তরের রেলস্টেশনগুলোতে। বিশেষ করে চিলাহাটি, ডোমার, নীলফামারী ও সৈয়দপুরে রেলস্টেশনে কৃষিশ্রমিকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
এসব এলাকায় যে সব কৃষিশ্রমিক প্রতিবছর ধান কাটার জন্য যান। তাদের কাছে মোবাইলে কল এসেছে, দল নিয়ে যেতে হবে।
নীলফামারীর সৈয়দপুরের খাতামধূপুর এলাকার দলনেতা আজগার আলী (৫৩) ও তার ১২ জনের দল সৈয়দপুর স্টেশনে এসেছেন সকালের ট্রেন ধরতে।
আজগার আলী বলেন, আক্কেলপুর এলাকায় আগাম জাতের ধান কাটতে যাচ্ছেন। সেই এলাকার লোকজন আমাদের থাকা-খাওয়া ও ভালো মজুরি দিয়ে থাকেন। ধান কেটে আয় করা সেই টাকা দিয়ে সংসারের খরচ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করি।
কৃষিশ্রমিক দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি এলাকার জামশেদ আলম (৪৫) জানান, পরিবারে সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর দাদন ব্যবসায়ীর টাকা পরিশোধ করার জন্য গ্রামের অন্য কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে তিনি নাটোর জেলায় ধান কাটতে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, গত বছর নওগাঁর আত্রাইয়ে ধান কাটতে গিয়েছিলাম। চুক্তিভিত্তিক ধান কাটতে গিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মজুরি পেয়েছি। রাতে থাকা ও তিনবেলা খাবার গৃহস্থরা বহন করায় ভালো উপার্জন হয়।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ওবাইদুল ইসলাম রতন জানান, কয়েকদিন ধরে খুলনা ও রাজশাহীগামী ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো উত্তরের জেলা থেকে কৃষিশ্রমিকরা ছুটছেন দক্ষিণাঞ্চলে। তিনি বলেন, আসনের কয়েকগুণ বেশি আসন ছাড়া টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, ধানকাটা শ্রমিকের কয়েকটি দলকে অর্ধেক ভাড়ায় বগুড়া, শাহজাদপুর, জয়পুরহাটে পাঠানো হয়েছে। যেসব শ্রমিক সুবিধার জন্য আসছেন। আমরা চেষ্টা করছি কৃষিশ্রমিকদের সেই সুবিধা দিয়ে গন্তব্যে পাঠাতে। কেউ কেউ নিজেরা পিকআপভ্যান ভাড়া করে ও ট্রাকে চেপেও কাজের জন্য ছুটছেন।
আরএ