সম্প্রতি ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে রাতে ডাকাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়েই রাজধানী ঢাকায় যাবেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটারের সড়কপথ। মাঝে পদ্মাসেতু। সম্প্রতি এই এক্সপ্রেসওয়ের শ্রীনগর থেকে যাত্রাবাড়ী সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক ডাকাতির ঘটনা এবং শিবচরে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি করতে আসা ডাকাতদলের এক সদস্যকে আটকের পর আতঙ্ক আরও বেড়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু নিয়ে রাজধানী ঢাকায় যাবেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকদিন পরেই জমে উঠবে পশুর হাট। গ্রাম থেকে রাজধানীতে গরু-ছাগল নিতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
সম্প্রতি এক্সপ্রেসওয়েতে একটি ডাকাতির ভিডিও ভাইরাল হওয়া এবং বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে ডাকাতি সংঘটিত হবার খবরে পশু ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে শিবচর হাইওয়ে পুলিশের টহল বাড়ানোসহ বিশেষ তৎপরতা রয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার (২১ মে) সকালে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের জাজিরা টোলপ্লাজা সংলগ্ন মোল্লার বাজার আন্ডারপাস থেকে খেলনা পিস্তল, ওয়াকিটকিসহ আশিকুর রহমান (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তারা একটি মাইক্রোবাসে করে ডাকাতির উদ্দেশ্যে মহাসড়কে ঘুরছিল। পুলিশের চেকপোস্টে তাদের আটক করা হয়। প্রথমে তারা নিজেদের র্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেয়। পরে সন্দেহ হলে পুলিশ চ্যালেঞ্জ করলে মাইক্রোবাসে থাকা অন্য ৫ সদস্য গাড়ি ফেলেই পালিয়ে যায়।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদীখান, লৌহজং, কেরানীগঞ্জসহ একাধিক এলাকায় চলাচলকারী যাত্রী, চালক ও ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের খপ্পরে পড়েছিলেন।
স্থানীয় পশু ব্যবসায়ীরা জানায়, ‘ইদানিং মহাসড়কে ডাকাতি বেড়েছে। আমরা প্রতিবছরই ঢাকায় কোরবানির পশু নিয়ে যাই। এবছরও প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু রাতে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় আতঙ্কে আছি। ঈদ মৌসুমে কোরবানির পশুবাহী পরিবহনের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। '
জেলার শিবচর উপজেলার এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় খামারি মো. সোহাগ বলেন, 'প্রতি বছরই এলাকার বেশ কয়েকজন মিলে ট্রাকে করে গরু নিয়ে ঢাকা যাই। এ বছরও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন হাইওয়েতে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের কথা শোনা যাচ্ছে। এটা ভয়ের বিষয়। কোরবানির পশু নিয়ে যারা ঢাকা যাবে তারা এরকম পরিস্থিতিতে কিছুটা আতঙ্কিত। মহাসড়কে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা দরকার এখন।
আরেক ব্যবসায়ী মো. ফররুখ বলেন, রাতে মহাসড়ক অরক্ষিত হয়ে ওঠে। কিছুদিন আগেই পদ্মার ওই পাড়ে শ্রীনগরের দিকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ডাকাতদলের। কোরবানির সময় মহাসড়কে ডাকাতদলের উৎপাত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৪ হাজার ১৮৫টি খামারে বাণিজ্যিকভাবে পশু পালন করা হয়েছে। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৬৭ হাজার ৬৮৫টি। মোট পশু রয়েছে ৭৪ হাজার ৬৫০টি। এ বছরও চাহিদার তুলনায় পশু উদ্বৃত্ত থাকছে। কোরবানির ক্ষেত্রে খামারগুলোতে মাঝারি সাইজের গরু বেশি রয়েছে। জেলার পশুর হাট ছাড়াও রাজধানীসহ অন্যান্য স্থানেও এখানকার পশু বিক্রি হয়ে থাকে।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম বলেন, কোরবানি সামনে রেখে মহাসড়কে শিবচরের অংশে আমরা বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমাদের টহল টিমের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট থাকছে।
তিনি আরও বলেন, এখান থেকে কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলো একত্রে পার করা গেলে সুবিধা হতো। পুলিশ প্রহরায় পৌঁছানো যেতো। তারপরও আমরা রাতে সার্বক্ষণিক টহলে থাকছি।
আরএ