মৌলভীবাজারে এক সময় কফি চাষ হলেও বর্তমানে তা ভাটা পড়েছে। তবে নতুন উদ্যাগে এ জেলায় কফির সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে কৃষি বিভাগ।
চা-বাগানের পাশাপাশি কফি চাষ মৌলভীবাজারে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তৈরি করছে। কৃষকরা এতে আয়ের উৎস বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতিতেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং কৃষকদের উদ্যোগ মিলে কফি চাষ এ অঞ্চলে একটি নতুন কৃষিপণ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠার অপেক্ষায় রয়েছে।
জানা যায়, মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানে এক সময় ব্রিটিশরা কফি চাষ করলেও তারা চলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে কফি চাষ কমে যায়। চায়ের জন্য পরিচিত এই অঞ্চলটি এখন কফির সম্ভাবনাও দেখাচ্ছে। কফি চাষের জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন উপজেলায় বিনামূল্যে চারা বিতরণ করছে। এর ফলে স্থানীয় কৃষকরা চায়ের পাশাপাশি কফি চাষেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন পথ খুঁজে পাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, এ বছর মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি বাণিজ্যিকভাবে ভালো ফলন দিচ্ছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আকবরপুর, শ্রীমঙ্গল, রাজনগরসহ অন্যান্য এলাকার চাষিরা কফির বাগান স্থাপন ও সফলভাবে ফলন সংগ্রহ করছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়ান নগর ইউনিয়নের আকবরপুরের কৃষক আব্দুল মান্নান তার বাগানে এক হাজার আটশ কফি গাছ লাগিয়ে ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকার কফি বিক্রি করেছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডলুছড়া গ্রামের অপর এক তরুণ উদ্যোক্তা মো. আতর আলী জানান, তার কফি বাগানে প্রায় তিনশ কফি গাছ রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি তিন বার ফলন পেয়েছেন এবং ২৫ হাজার টাকার কফি বিক্রি করেছেন।
রাজনগরের উত্তরবাগ চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার মো. লোকমান চৌধুরী জানান, তাদের বাগানে তিন হাজার কফির চারা রোপণ করে নতুন বাণিজ্যিক কফি বাগান তৈরি করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও আকবরপুর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও চারা বিতরণের মাধ্যমে সহায়তা দিচ্ছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি ও টিলা সমৃদ্ধ এলাকা কফি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কফি চাষে সফলতা পাওয়ায় অনেকেই এখন কফি চাষের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন এবং এই অঞ্চলের কৃষকরা নতুন একটি আয়ের উৎস খুঁজে পাচ্ছেন। ফলে দিন দিন জেলায় কফি চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। এখানকার আবহাওয়া ও জলবায়ু কফির জন্য অনুকূল হওয়ায় বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক।
ফিনলে সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জাগছড়া ও সোনাছড়া চা বাগানে ফিনলে কোম্পানির বিশাল কফি বাগান আর কফির ফ্যাক্টরি ছিল। চা উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় কফি চাষ কমে যায়। ১৯৮৫ বা ১৯৮৬ সালের দিকে ফিনলে কফি চাষ বন্ধ করে সেখানে চা আবাদ বর্ধিত করে।
মৌলভীবাজারের প্রাক্তন কৃষিবিদ সুকল্প দাস জানান, মৌলভীবাজারের আবহাওয়া ও মাটি কফি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। স্থানীয় কৃষকরা কফি চাষে আগ্রহী হওয়ায় জেলা সরকারও বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ বিস্তারের পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিকল্পিত চাষ, প্রশিক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মৌলভীবাজার দেশের শীর্ষ কফি উৎপাদনকারী অঞ্চলে পরিণত হতে পারে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, জেলায় কফি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকদের মাঝে আমরা কফির চারা বিতরণ করেছি। ইতোমধ্যে এ জেলায় কফি চাষ সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। পতিত জমি এবং মিশ্র ফলের বাগানে কফি চাষ করে অনেকেই সফল হচ্ছেন।
পুষ্টি প্রসঙ্গে তিনি জানান, কফিতে বহুমাত্রিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। একটি ১২৫ মিলিলিটার কাপ কফিতে খুব কম ক্যালোরি থাকে, তবে খনিজ ও ভিটামিন উপাদান সমৃদ্ধ। কফি চাষ শুধু অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কৃষিপণ্যই নয়, বরং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম।
বিবিবি/এএটি