হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌর এলাকার একটি বসতঘর থেকে উদ্ধার করে একটি কিং কোবরা (শঙ্খচূড়) সাপ অবমুক্ত করা হয়েছে চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেনের উপস্থিতিতে সাপটি অবমুক্ত করা হয়।
এর আগে সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে নবীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজা মিয়ার ঘরে সাপটি দেখে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা সাপটি জীবিত অবস্থায় ধরেন।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান, এটি একটি স্ত্রী কিং কোবরা ছিল, এর বয়স প্রায় ৪ বছর অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক। সাপটি সুস্থ ছিল এবং এটি পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী প্রজাতি। বন ধ্বংসের কারণে এসব সাপ লোকালয়ে চলে আসছে, যা পরিবেশের জন্য একটি সতর্ক সংকেত।
“স্ত্রী সাপটি যেহেতু লোকালয় থেকে উদ্ধার হয়েছে; ধারণা করা হচ্ছে আশপাশেই পুরুষ সাপটিও থাকতে পারে। এজন্য স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাতছড়ি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সহ সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, এ নিয়ে তিনটি কিং কোবরা সাতছড়িতে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ প্রজাতির আরও কয়েকটি সাপের অবস্থান এখানে লক্ষ্য করা গেছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি (ডব্লিউসিএস) বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন প্রোগ্রামের সমন্বয়কারী সামিউল মোহসেনিন বাংলানিউজকে বলেন, কিং কোবরা (Ophiophagus hannah) বিশ্বের দীর্ঘতম বিষধর সাপ। গড় দৈর্ঘ্য ৩.১৮ থেকে ৪ মিটার হলেও সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্যের রেকর্ড রয়েছে ৫.৮৫ মিটার। ভারী দেহ ও মারাত্মক বিষ থাকলেও সাধারণত এরা মানুষের ওপর আক্রমণ করে না, তবে বিপদে আত্মরক্ষার্থে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
সাধারণত কালো, বাদামি বা ধূসর রঙের এই সাপ অন্যান্য সাপ খেয়ে থাকে; এমনকি নিজের প্রজাতির সাপও খায়। মাঝেমধ্যে ইঁদুর ও টিকটিকিও শিকার করে। এটি একমাত্র সাপ, যা মাটিতে বাসা তৈরি করে ডিম দেয় এবং স্ত্রী সাপ নিজে তা পাহারা দেয়।
মানুষের প্রতি এর আক্রমণ খুবই বিরল, সাধারণত কোণঠাসা হয়ে থাকে। তবে মারাত্মক বিষের কারণে বিশেষজ্ঞ ছাড়া কাউকে সংস্পর্শে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
২০১০ সাল থেকে কিং কোবরা আইইউসিএনের লাল তালিকায় ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত। ভারতের জাতীয় সরীসৃপ এই সাপটি বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার লোককাহিনীতেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। পরিবেশবাদীদের মতে, বন উজাড় ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস অব্যাহত থাকলে এই প্রজাতি ভবিষ্যতে আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে।
আরএ