ঢাকা, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১১ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

সৌদি খেজুরের চারা উৎপাদনে সাফল্য, নতুন সম্ভাবনার হাতছানি!

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৫৩, জুলাই ৭, ২০২৫
সৌদি খেজুরের চারা উৎপাদনে সাফল্য, নতুন সম্ভাবনার হাতছানি!

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নরহরকাটি গ্রামে সৌদি আরবের আয়ুজা, মরিয়ম, বারহী, আমবার, মেগজুল, ছড়া, দারাজ, ছাগাই, ফরিদা, জাহিদ ও মাবরুম জাতের খেজুরের চারা তৈরিতে সফল হয়েছেন কৃষক শোকর আলী। নিজ বাড়ির আঙিনায় ১৫ শতক জমিতে উন্নতজাতের খেজুরের চারার নার্সারি গড়ে তুলেছেন তিনি।

তার নার্সারিতে এখন শোভা পাচ্ছে ১৫-২০ হাজার খেজুরের চারা। গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় খেজুর। যা উপকূলীয় কৃষিতে হাতছানি দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনার।

কৃষক শোকর আলী জানান, তিনি ২০১৫ সালে জীবিকার তাগিদে বাহরাইন গিয়ে তিন বছর ও ২০১৮ সালে সৌদি আরবে গিয়ে তিন বছর প্রবাস জীবন কাটান। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ২০২১ সালে দেশে ফিরে আসেন। আসার সময় সঙ্গে এনেছিলেন ৫০টি খেজুরের আঠি (বীজ)।

তিনি বলেন, সৌদি আরবে থাকাকালে আমি আরাফাতের ময়দানে গিয়েছিলাম। সেখানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ থেকে নিয়ে দুটি নিম গাছ লাগিয়েছিলেন, যা এখনো আছে। খোদাই করে লেখা আছে  জিয়াউর রহমানের নামও। এই বিষয়টি আমাকে ভাবিয়েছিল যে, বাংলাদেশের গাছ যদি এই মরুভূমিতে হয়, এখানকার গাছও আমাদের দেশে হতে পারে। তাই আমি খেজুরের আঠি এনেছিলাম।

তিনি বলেন, বিদেশে থাকাকালে যেহেতু আমি খেজুর বাগানেই কাজ করতাম, তাই এর চারা উৎপাদন কৌশল আমার জানা ছিল। আসার সময় যে বীজ এনেছিলাম, তা দিয়ে চারা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেই এবং দেশের মাটিতে বীজ থেকে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা হয়, চার বছরের মধ্যে তাতে ফল এসেছে। আমার দুই ছেলে একজন বাহরাইন ও আরেকজন সৌদি আরবে থাকে, তারা বীজ পাঠাতে থাকে। এসব বীজ দিয়ে পুরো বাড়ির আঙিনায় খেজুরের চারার নার্সারি গড়ে তুলেছি। প্রথমে লোকে আমাকে পাগল বললেও এখন প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসছে দেখতে, চারা সংগ্রহ করতে। অনেকেই অনলাইনে চারার অর্ডার করছে, কুরিয়ারে পাঠাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ১২-১৩টি জেলায় আমার চারা পৌঁছেছে। আমার একটাই ইচ্ছা সারাদেশকে আমি সৌদি খেজুরের রঙে রাঙাতে চাই।

শোকর আলী বলেন, আমার নার্সারিতে এখন চারজন লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে এর আওতা সম্প্রসারণ সম্ভব, যা আরও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি পরীক্ষামূলক চাষের ক্ষেত্র হতে পারে।    

সংশ্লিষ্ট বলছেন, একজন প্রবাসী শ্রমিকের এই দূরদর্শী চিন্তা আর সাহসী প্রয়াস এগিয়ে নিতে এখন প্রয়োজন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি বিভাগ ও সরকারের যথাযথ সহায়তা। বাংলাদেশে প্রতিবছর কয়েক হাজার মেট্রিক টন খেজুর আমদানির প্রয়োজন হয়। দেশেই উন্নত জাতের খেজুর উৎপাদন করা সম্ভব হলে আমদানি নির্ভরতা যেমন কমানো সম্ভব, তেমনি বাড়বে কৃষকের আয়। শোকর আলীর এই সবুজ স্বপ্ন বদলে দিতে পারে উপকূলীয় কৃষির ভবিষ্যৎ।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন বলেন, খেজুর তুলনামূলক খরা ও লবণাক্ততা সহনশীল। উপকূলীয় অঞ্চলে ছোট ছোট পরিসরে উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে, এর চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা সম্ভব।  

 

এমআরএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।