ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুনের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় তার বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী।
জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসা স্থাপিত হয়।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, হালিমা খাতুন ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হিসেবে যোগদান করেন। অথচ তৎকালীন তার দাখিলকৃত বিপিএড পরীক্ষার সনদ যেটিতে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি ২০০৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত গোপালগঞ্জের সাবেরা রউফ শারীরিক শিক্ষা কলেজ থেকে বিপিএড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যা ২৪ অক্টোবর ১৯৯৫ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসাসমূহ) নীতিমালা বহির্ভূত। এছাড়া ওই সনদে উল্লেখিত রোল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যাচাই করে দেখা যায় যে সনদটির কোনো হদিস নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাইফুল ইসলামের অভিযোগের আলোকে গত ৩ ডিসেম্বর সালথা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সৈয়দ ফজলে রাব্বী নোমান সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমার বিষয়টি তদন্তকালে দেখতে পান, সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন ২০ জানুয়ারি ২০০০ সালে চাকরিতে প্রবেশ করেন। সেহেতু ১৯৯৫ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (মাদরাসাসমূহ) শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা (ন্যূনতম) (১) স্নাতকসহ বিপিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সব পরীক্ষায় ২য় বিভাগ থাকতে হবে। অথবা (২) স্নাতকসহ জুনিয়র ডিপ্লোমা/ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সব পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী/বিভাগ থাকতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হালিমা খাতুনের চাকরিতে প্রবেশের সময় বিপিএড/ ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষণের সনদ ছিল না। পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালে ওই সনদ অর্জন করেন- যা ১৯৯৫ সালের মাদরাসার জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নীতিমালা অনুযায়ী সঠিক হয়নি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ওই তদন্ত প্রতিবেদন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠান। একইসঙ্গে গত ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১৮.২(ক) নীতি অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত সুপার হালিমার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে জুন মাসে হালিমা খাতুনের পরিপূর্ণ বেতন-ভাতা নিয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিতে গেলে তিনি হালিমা নাম বেতন শিট থেকে কেটে অন্যান্য শিক্ষকদের বেতন ভাতার শিটে স্বাক্ষর করেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) হালিমা খাতুন জানান, ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করলেও ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া আলাউদ্দিন ফিজিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে বিপিএড পাশ করেছেন। এছাড়া ২০০৪ সালের জমাকৃত বিপিএড সনদের বিষয়ে কিছুই জানা নেই দাবি করে বলেন, আমার নামে কে বা কারা এটি জমা দিয়েছে, আমি কিছুই জানি না। এছাড়া ২০০০ সালে চাকরিতে যোগদান করে ২০১৩ সালের বিপিএড পাশ নীতিমালা বহির্ভূত কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি তখন আমি জানতাম না।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদরাসার সভাপতি মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় হালিমা খাতুনের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আরএ