ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৫ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

জুলাইগাথা

চোখ হারিয়েও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন জুলাই যোদ্ধা লামিম

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৯, জুলাই ৩০, ২০২৫
চোখ হারিয়েও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন জুলাই যোদ্ধা লামিম জুলাইযোদ্ধা লামিম হাসান।

৪ আগস্ট, ২০২৪। খেলতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় লামিম।

অংশ নেয় আন্দোলনে। পুলিশের সঙ্গে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। একপর্যায়ে তামিমের বাম চোখে গুলিবিদ্ধ হয়। রক্তাক্ত শরীরসহ হাসপাতালে নিয়ে যায় সহযোদ্ধারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের মমিনুল-সাবিনা দম্পতির সন্তান লামিম হাসান। একাধিকবার চিকিৎসা নিয়েও স্বাভাবিক হয়নি চোখ। ক্রমশ বেড়ে চলছে রোগের পরিধি। জুলাই আন্দোলন কেড়ে নিয়েছে লামিমের চোখের আলো। চোখ হারিয়েও আফসোস নেই তার। শুধু শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকার জোড়ালো আবদার তার। আর স্বপ্ন দেখছেন নতুন বাংলাদেশের।

চোখ হারানো জুলাই যোদ্ধা লামিম হাসান বলেন, আমার চোখটা এখন আরও ছোট হয়ে যাচ্ছে। এই চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পারিনা আমি। এখন চোখ দিয়ে পানি পড়ে, আর ঘেমে গেলেই সমস্যা হয়। কিন্তু আমার তাতেও কোনো আফসোস নেই। আমার তো চোখ নেই শুধু, কিন্তু অনেকে তো বেঁচেই নেই। শহীদ হয়েছে আমার অনেক ভাই আমি তাদের জন্য দোয়া করি। এক বছর হয়ে গিয়েছে আন্দোলনের। আমি চাই নতুন এক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে থাকবে না কোনো অন্যায়, দুর্নীতি, হানাহানি ও বিভেদ। এখনো তেমন বাংলাদেশ আমরা পাই নাই। আমার যেসব ভাই এখনো অসুস্থ তাদের চিকিৎসা যেন ভালোভাবে হয়। যারা দেশের জন্য নিজেদের শরীরের অঙ্গ হারিয়েছেন তাদের যেন বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো হয় এটাই আমার চাওয়া।

চোখের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থান। সন্তানের এমন ত্যাগে গর্বিত লামিমের পরিবার। নির্বাচনের আগে সরকারের দেওয়া আশ্বাস পূরণের দাবি তাদের।

লামিমের বাবা মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিতারিত করতেই লামিম সেদিন আমাদের না বলে আন্দোলনে গিয়েছিল। তার চোখে যখন বুলেট লাগে তখন খবর পেয়ে আমি তাকে গিয়ে হাসপাতালে পাই। আর এখানে দেরি না করে ছেলেকে প্রথমে দিনাজপুর তারপরে ঢাকা নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাই। নিজের বাসার জমি বন্ধক রেখে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। তাতে কোনো দুঃখ নেই কারণ এখন আমরা একটি ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশে নিশ্বাস নিতে পারছি। আমার ছেলের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তাতে তার যেমন কষ্ট নেই আমারও কষ্ট নেই। তার যে ত্যাগ সেই ত্যাগ তো আর বৃথা যায় নাই। সেজন্য আমি গর্ববোধ করি। এখন ছেলের চোখে আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরকার যা সহযোগিতা করেছিল তা দিয়ে কিছুটা চিকিৎসা হয়েছে। তবে এখন উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, আর যে সহযোগিতা করা হয়েছিল সেটি খুবই সামান্য। সেজন্য সরকারের কাছে আবেদন দেশের বাহিরে নিয়ে গিয়ে হলেও আমার ছেলের চোখের যেন ভালো চিকিৎসা করা হয়।

আন্দোলনে অংশ নিয়ে এখনও শরীরে বুলেট বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। সাধ্যমত চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেনি অনেকেই। প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়ে পাচ্ছেন না সহযোগিতা। দেশ সংস্কারের আগে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জোর দাবি যোদ্ধাদের।

আহত জুলাই যোদ্ধা মেহরাব হোসেন বলেন, জুলাই আন্দোলনের এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনও আমরা অনেকেই তেমন কোনো সহযোগিতা পাই নাই। অনেকেই পেয়েছে আবার বাদও পড়েছে  অনেকেই। দেশ সংস্কারের আগে আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর আমাদের চিকিৎসার জন্য যে সহযোগিতা করা হচ্ছে তা খুবই সামান্য। আমি মনে করি আন্দোলনে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। কারণ তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ এই ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশ পেয়েছি।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, জেলায় তিন শতাধিক আহত জুলাই যোদ্ধাকে সহযোগিতা করেছে প্রশাসন। এখনও অনেকেই নাম বাদ রয়েছে জুলাই যোদ্ধা তালিকায়। যারা আহত হয়েছিল তাদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি বাদ পড়া যোদ্ধাদের নামের তালিকা করা হচ্ছে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।