ঢাকা, শনিবার, ২১ ভাদ্র ১৪৩২, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

কাবার আদলে ১২ ফুট উঁচু কবর, নুরাল পাগলার লাশ তুলে আগুন, সংঘর্ষে আহত শতাধিক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০০, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫
কাবার আদলে ১২ ফুট উঁচু কবর, নুরাল পাগলার লাশ তুলে আগুন, সংঘর্ষে আহত শতাধিক কাবার আদলে ১২ ফুট উঁচু কবর, নুরাল পাগলার লাশ তুলে আগুন, সংঘর্ষে আহত শতাধিক

রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে নুরাল পাগলার ভক্তদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, চাঙচুর করা হয় গাড়ি। এতে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।  

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোয়ালন্দ।

জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল বহু বছর আগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরিফ। আশির দশকের শেষের দিকে নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। পরে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ জনরোষ এড়াতে তিনি মুচলেকা (অঙ্গীকার নামা) দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি আবার ফিরে এসে তার দরবার শরিফের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।  

গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরাল পাগলা। পরে ওই দিনই সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে তার ভক্তানুরাগীদের অংশগ্রহণে দরবার শরিফের ভেতরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাত ১০টার দিকে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়।  

এ নিয়ে কারো কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু তার কবর পবিত্র কাবা শরিফের আদলে করা হয়, কবরের রং করা হয় কালো। যা দেখতে পবিত্র কাবা শরিফের মতো। এতেই বাধে বিপত্তি। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ফুঁসে ওঠেন তৌহিদি জনতা। তৌহিদি জনতার আন্দোলনের ফলে কবরের রং পরিবর্তন করা হয়।  

এ বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক হয় তৌহিদি জনতা ও নুরাল পাগলার পরিবারের সদস্যদের। এরপরও কবর নিচে নামাতে গড়িমসি করে নুরাল পাগলার পরিবার।  

পরে এ বিষয়ে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তৌহিদি জনতা। কবর নিচে নামানো না হলে কবর ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুম্মার পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৌহিদি জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলার দরবারে। পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলার ভক্তরা। ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ তুমুল সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। একপর্যায়ে নুরাল পাগলার দরবারে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় তৌহিদি জনতা। পরে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে গোয়ালন্দর পদ্মার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ে নিয়ে পুড়িয়ে দেয় তৌহিদি জনতা।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, চাঙচুর করা হয় পুলিশের দুটি গাড়ি। এতে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামতে হয় সেনাবাহিনীকে।

হামলায় ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। এর বাইরে এ বিষয়ে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ঘটনাস্থলে যান জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীবসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারাও। এ বিষয়ে তারাও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সারাদেশ এর সর্বশেষ